মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল : বরিশাল কর কমিশনারের কার্যালয়ে ৩ ভাইয়ের রাজ্যের অঘোষিত রাজা।বরিশালের সাবেক বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজ কর কর্মকর্তা নেফাউল ইসলাম সরকারের দোসর মোঃ রতন মোল্লা।স্টেনো টাইপিস্ট পদে কর্মরত।তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী হলেও নিজ স্বার্থ আদায়ে কর কমানো -বাড়ানোসহ তদবির ও সুপারিশের মাধ্যমে করের যাবতীয় কার্য্যক্রম সম্পন্ন করেন।এক সময়ের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারী কর বিভাগে স্টেনো টাইপিস্ট পদে চাকুরী লাভের পরেই ভাগ্য খুলে যায়। এখন তিনি অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক,বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার এফডিআর, কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র,জায়গা-জমি,বহুতল ভবনের মালিক।আলাদিনের চেরাগও যেন হার মানিয়েছে রতন মোল্লার কাছে।এখন তিনি একজন ধনকুব।সহায়-সম্পদে ছুয়েঁছেন পাহাড়।
রতন মোল্লার বিরুদ্ধে কর কমিশনার ও এনবিআরের চেয়ারম্যানের নিকট একাধিকবার অভিযোগ দেয়া হলেও রহস্যজনক কারনে নেয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা। ক্লিনিক,ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডাক্তারদের করের ফাইল আটকিয়ে জিম্মী করে অনৈতিকভাবে ঘুস আদায় করাই যেন রতন মোল্লার পেশা।তিনি কাউকে থোরাই কেয়ার করেন না।ঘুস আদায়ে বেপরোয়া । কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলার কারনে একজন প্রিয় কর্মচারীতে পরিনত হয়েছেন বরিশাল কর বিভাগে।একই কর্মস্থলে সার্কেল -২ ও সার্কেল -৮ এ রয়েছেন ১০ বছর।সকলের বদলী হলেও রতন যেন কর ভবনের স্থায়ী কর্মচারী।তার বদলী না হওয়ায় কর বিভাগের সকলেই বিস্মিত।
কে এই রতন মোল্লা :
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল কর কমিশনারের কার্যালয় সার্কেল-৮ এ স্টোনো পদে মোঃ রতন মোল্লা চাকুরী নেয়ার পূর্বে বরিশাল নগরীর সদর রোড সংলগ্ন বাটার গল্লির একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকুরী করতেন। এ সময় তিনি জমির দালালিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন। কর বিভাগে চাকুরী হবার পরও পূর্বের অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন। বরিশাল পূর্ব বগুড়া রোড ‘সাউথ ইউনিভার্সেল মেডিকেল সার্ভিসেস’ নামক প্রতিষ্ঠানে শেয়ার রয়েছে।
যেভাবে জড়িয়েছে দুর্নীতিতে :
রতন মোল্লা।স্টোনো টাইপিস্ট পদে থাকায় অফিসের নির্দেশে তার দায়িত্ব বিভিন্ন ক্লিনিক,ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ ডাক্তারদের কর এর তালিকা করার। তালিকা অনুযায়ী রতন মোল্লা সকল ডায়াগনস্টিক ,ক্লিনিক থেকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকেন। বরিশালের ছোট-বড় ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডাক্তারদের আয়ের অনুকূলে কর দেয়ার সঠিক তালিকা করেন না। অফিসের বড় বড় ফাইলের ট্রাক্স কমানো, অডিটের কথা বলে ব্যবসায়ীদের হয়রানী, কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বদলি বাণিজ্য করাই যেন তার পেশা । বরিশালে কর অফিসে রতনকে অর্থ দিলে নিয়মের কাজ অনিয়মে হয়, আবার অনিয়মের কাজ নিয়মে হয়। দীর্ঘদিন ধরে একতরফাভাবে এ সব কার্যক্রম করে আসছেন রতন মোল্লা। একাধিক স্থানে ক্রয় করেছেন জমি, হয়েছেন ভবন মালিক।
রতন মোল্লার যত সহায় সম্পদ :
কর অফিসে তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী হয়েও রতন মোল্লার সম্পত্তি আকাঁশছোঁয়া।তিনি বরিশাল নগরীর সাউথ ইউনিভার্সেল মেডিকেল সার্ভিসেস’ নামক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মালিক,গ্রামের বাড়ি চরফ্যাশনে ৫ একর জায়গা ক্রয় করেছেন। বরিশাল নগরীর নবগ্রাম রোডে ২ কোটি টাকা দিয়ে জায়গা ক্রয় করেছেন। সেখানে ৫ তলা ভবন নির্মাণাধীন। এছাড়া চরফ্যাশন শহরে একটি দ্বিতল ভবনের কাজ নির্মাণাধীন। রতন মোল্লা সার্কেল -২ ও সার্কেল-৮ এই দুই সার্কেলে কর্মরত থাকাকালিন কমপক্ষে ২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন । যার বড় অংশ অফিসারদের দিয়ে বাকি অংশ নিজে নিয়েছেন। তিনি তার শ্বশুর বাড়ি ভোলায় শ্বশুর এবং শ্বাশুড়ির নামে ১ কোটি টাকায় ৩০ শতাংশ জায়গা ক্রয় করেছেন। অজপাড়াগায়ের কৃষক বাবার সন্তান স্টেনো টাইপিস্ট রতন মোল্লার চালচলন যেন মস্তবড় অফিসার। বরিশাল সোনালী ব্যাংক এর কর্পোরেট শাখা, সিএন্ডবি রোড শাখা, জনতা ব্যাংক-বাংলা বাজার শাখায় তার ২ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। নিজ ও স্ত্রীর নামে ১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে।কর আইনজীবীদের থেকে করদাতাদের ফাইল নিয়ে তিনি ঢিল করেন।কর বিভাগে তিনি একজন অঘোষিত কর আইনজীবীও।
রতন মোল্লার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ :
মোঃ রতন মোল্লা। একজন স্টেনো টাইপিস্ট, যিনি বর্তমানে সার্কেল-৮ কর অঞ্চল বরিশালে কর্মরত। ২০১৩ সালে নিয়োগের পর থেকে তিনি একমাত্র স্টেনো-টাইপিস্ট যিনি বরিশালের সার্কেল-২ এবং সার্কেল-৮ ব্যতীত অন্য কোনো সার্কেলে চাকুরি করেননি। এ দুই সার্কেলে কর্মরত থাকার কারণে সে সবসময় হেডকোয়ার্টার এডমিন ও টেকনিক্যাল এর সাথে থাকেন। যে কারণে তার দুই সার্কেল ব্যতিত অন্য কোথাও পদায়ন হয় না। এই দুই সার্কেলে বেশিরভাগ ফাইলই তার দখলে। এই দুই সার্কেলে বড় বড় করদাতাদের সাথে যোগসাজসে অনেক ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এছাড়া ফাইল গায়েব করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে । বড় বড় দাবি নিস্পত্তি করেন বড় অংকের ঘুস নিয়ে। বিভিন্ন ডাক্তারদের ফাইল অডিটের ভয় দেখিয়ে তিনি নিয়মিত হারে চাঁদাবাজি করছেন। ডাক্তাররা সংশ্লিষ্ট সার্কেলের অফিসারের নাম না জানলেও স্টেনো টাইপিস্ট রতন মোল্লার নাম মুখস্থ।এ বিষয়ে বরিশালের কর আইনজীবীরা একাধিকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে কর কমিশনারকে অবগত করানোর পরেও কোন এক অদৃশ্য কারণে তিনি বহাল তবিয়তে থেকে যান বলে একাধিক আইনজীবী জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:
সম্প্রতি হেমায়েত উদ্দিন নামে একজন এনবিআরের চেয়ারম্যানের নিকট রতন মোল্লার দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে লিখিত আবেদন করেছেন।আবেদনে তার ভয়ংকর দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়।আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বরিশালের বেশিরভাগ ডাক্তারদের ফাইল করেন মাহমুদুর রহমান তপু নামক একজন এ্যাডভোকেট। তার বোনের বিবাহে সহযোগিতা করে রতন মোল্লা তার খুব কাছের লোক হয়ে গেছেন। তপু এবং রতন মোল্লা যোগসাজসে
বেশিরভাগ ডাক্তারদেরকেই বিপদগ্রস্থ করেন। কোনো কোনো ডাক্তারদের অফিসে ডেকে বড় অঙ্কের ঘুসের বিনিময়ে দফারফা করেন। এক্ষেত্রে রাজস্বের পরিবর্তে সবটাই তাদের নিজস্ব। লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়,তদন্ত করলেই যার সত্যতা পাওয়া যাবে। রতন মোল্লার ক্ষমতার প্রভাবে তার ভাই নাইটগার্ড ইব্রাহিম দীর্ঘদিন যাবৎ সার্কেল-১৬ লালমোহনে কর্মরত। তার আরেক ভাই লিটন মোল্লা নোটিশ সার্ভার, কর সার্কেল-১৯, গলাচিপায়।
রতন মোল্লা ও তার ভাই ইব্রাহিম মোল্লা, লিটন মোল্লাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি -অনিয়মের ব্যাপারে ২০২৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন বরিশাল নগরীর বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা মোঃ আতাহার উদ্দিন।এছাড়া রতন মোল্লার বিরুদ্ধে কর আইনজীবীগন রেজুলেশন করে অভিযোগ দিয়েছিলেন কর কমিশনারের নিকট।সর্বশেষ চলতি বছরের ১০ আগষ্ট এনবিআরের চেয়ারম্যানের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মোহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত