মতামত

ভেঙে যাচ্ছে যৌথ পরিবারগুলো

17 1 2507040548
print news

অভিজিৎ রায় : ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঠাকুরপুকুর গ্রামে গড়ে ওঠা একটি যৌথ পরিবারের কথা পত্রিকায় এসেছে। পরিবারের ছয় ভাই একসাথে ব্যবসা করেন। তাদের পরিবারের সকলেই একই অন্নে খাওয়া-দাওয়া করেন। এটা এই সমাজে বিরল।
এক সময় আমাদের দেশে যৌথ পরিবার ছিল খুব সাধারণ ব্যাপার। দাদা-দাদি, বাবা-মা, চাচা-চাচি, ভাই-বোন সবাই মিলে একসাথে থাকত। এক ছাদের নিচে অনেক মানুষ থাকলেও সবার মধ্যে ছিল ভালবাসা, দায়িত্ববোধ আর সম্মান। একে অন্যকে সাহায্য করত, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিত। কিন্তু এখন সেই চিত্রটা অনেকটাই বদলে গেছে। এখন আলাদা থাকাটাই যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আজকাল সবাই চায় নিজের মতো করে চলতে, নিজের মতামতকে গুরুত্ব দিতে। কেউ আর কারো কথায় চলতে চায় না। একসাথে থাকলে অনেক সময় মতের অমিল হয়, ঝগড়া হয়, মান-অভিমান হয়। তাই মানুষ ভাবছে, আলাদা থাকলে ঝামেলা কম হবে।

আরেকটা বড় কারণ হলো কাজের জন্য জায়গা বদলাতে হয়। পড়াশোনা বা চাকরির জন্য কেউ ঢাকা, কেউ চট্টগ্রাম, কেউ আবার বিদেশে চলে যাচ্ছে। তখন পুরো পরিবার নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। শহরের ছোট ছোট ফ্ল্যাটেও সবাই মিলে থাকা যায় না। ফলে পরিবারগুলো ছোট হয়ে যাচ্ছে।

নারীরা এখন আগের মতো শুধু গৃহিণী নন। তারা পড়ালেখা করছেন, চাকরি করছেন, নিজের মত করে জীবন গড়ছেন। যৌথ পরিবারে অনেক সময় তাদের স্বাধীনতা বাধা পায় বলে তারা আলাদা থাকতে চান।

আবার প্রযুক্তির যুগেও সবাই ব্যস্ত হয়ে গেছে নিজের মোবাইল, টিভি বা কম্পিউটার নিয়ে। একসাথে থেকেও দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। কাছের মানুষগুলো যেন দূরের হয়ে যাচ্ছে।

এইভাবে যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়ার কিছু খারাপ দিকও আছে। যেমন—বৃদ্ধ মা-বাবা অনেক সময় একা পড়ে যান। সন্তানরা আলাদা হয়ে গেলে তাদের দেখভাল করার কেউ থাকে না। তখন তারা কষ্টে থাকেন, এমনকি অনেক সময় বৃদ্ধাশ্রমে চলে যেতে হয়।

বাচ্চারাও একা বেড়ে ওঠে। তারা শুধু মা-বাবাকে দেখে বড় হয়, অন্য আত্মীয়স্বজনের সাথে মিশতে শেখে না। এতে তাদের সামাজিক আচরণ শেখা কঠিন হয়।

অর্থনৈতিক দিক থেকেও যৌথ পরিবার ভালো ছিল। সবাই মিলে খরচ ভাগ করে নিত, রান্না-বান্না, বিদ্যুৎ-পানি সবকিছুর খরচ কম পড়ত। এখন ছোট ছোট পরিবারগুলোকে আলাদা করে সব খরচ বহন করতে হয়, যা অনেকের জন্য চাপের কারণ হয়।

তবে সব কিছু মিলিয়ে এটা বলা যায় যে সময় বদলেছে, মানুষের চাহিদা বদলেছে। তাই পুরোনো যৌথ পরিবার হয়তো আগের মতো ফিরে আসবে না, কিন্তু সম্পর্কের টান, সম্মান আর দায়িত্ববোধটা যেন না হারিয়ে যায়।

আমরা চাইলে প্রযুক্তির সাহায্যে হলেও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারি, বছরে একবার হলেও সবাই মিলে দেখা করতে পারি, বয়স্কদের খোঁজ রাখতে পারি, আর ছোটদের শেখাতে পারি তাদের শিকড় কোথায়।

যৌথ পরিবার শুধু থাকার জায়গা নয়, এটি একটি অনুভব, একটি শিক্ষা, একটি সংস্কৃতি—যা আমাদের সামাজিক শক্তির প্রতীক ছিল। সেটা হারিয়ে যেতে দেওয়া উচিত নয়।

লেখকঃ অভিজিৎ রায়,ফরিদপুর

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.