নব্যদের দাপটে কোণঠাসা বিএনপির ‘ত্যাগী’রা,তালিকা হচ্ছে অপকর্মকারীদের


দলের নাম করে চাঁদাবাজি, দখলসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী। এর মধ্যে ‘হাইব্রিড’ ও ‘নব্য বিএনপির’ নামধারীরাই বেশি বেপরোয়া। এমনকি তারা তৃণমূল বিএনপিতে কোন্দল ও গ্রুপিংয়েও সম্পৃক্ত। ফলে কয়েকটি জেলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ পর্যন্ত হয়েছে। কোনো কোনো ঘটনায় বিব্রতও হতে হচ্ছে বিএনপিকে। এ অবস্থায় দলের নাম করে অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। তালিকা করা হচ্ছে অপকর্মকারীদের। তালিকা ধরে চলবে শুদ্ধি অভিযান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
দলটির নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানায়, অফিশিয়ালি বিষয়টি বলতে চাচ্ছি না। তবে হাইকমান্ডের নির্দেশে ইতোমধ্যে শুদ্ধি অভিযানের কাজ শুরু হয়ে গেছে। একেবারে ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, জেলাসহ সব পর্যায়ের কমিটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিটি এলাকায় বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে জনমনে নেতিবাচক পারসেপশন শুরু হয়েছে সে বিষয়টিকে বেশি আমলে নেওয়া হচ্ছে। জনগণ যাদের ওপর রুষ্ট তাদের সতর্ক করাসহ অনেককে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে। মোদ্দা কথা, যারা দলের সুনাম নষ্ট করবে এবং দলের জন্য এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের ছেঁটে ফেলতে হাইকমান্ড এতটুকু দ্বিধা করবে না।
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘দল এবং দেশের স্বার্থে বিএনপি যা যা করার তাই করবে। সেক্ষেত্রে যারা দলের ইমেজ নষ্ট করবে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে মোটেই পিছপা হবে না বিএনপি। ধরে নিতে পারেন এ বিষয়ে কাজ চলছে। প্রয়োজনে তালিকা করতে হলে তাও করা হবে। যে কোনো অপকর্ম ও অন্যায়ের সঙ্গে যারা জড়িত হবে তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের মানুষকে আশা ও বিশ্বাসের জায়গায় নিয়ে গেছে। পাঁচ আগস্টের আগের রাজনীতি ও পরের রাজনীতির মধ্যে অনেক গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। নেতৃত্বের ও রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং যারা না বুঝে অথবা জেনে-শুনেও অপকর্মের সঙ্গে লিপ্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সামনেও হবে।’
এদিকে গত ১১ মাসে যাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে সঙ্গে সঙ্গেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। এ পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অন্তত পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শোকজ করা হয়েছে অন্তত এক হাজার নেতাকর্মীকে। সম্প্রতি ভোলার তজুমদ্দিন ও লালমনিরহাটের পাটগ্রামের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অবশ্য কোথাও কোথাও বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আওয়ামী লীগের ছদ্মবেশী কর্মীরা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে বিস্তর অভিযোগ আসছে বিএনপি নেতাদের কাছে। বিএনপির ইমেজ নষ্ট করাসহ বিশেষ উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সায়লেন্ট গ্রুপকে বিএনপিতে পুশইন করা হচ্ছে। তদন্ত করে অনেক জায়গায় এর প্রমাণ পেয়েছে দলটি। এজন্য বেশির ভাগ অপকর্মের ঘটনায় ‘হাইব্রিড’ এবং এসব পুশইন চক্রের জড়িত থাকারও প্রমাণ মিলেছে। যদিও পাঁচ আগস্টের পর এসব বিষয়ে তৃণমূল নেতাদের বহুবার সতর্কও করা হয়। কিন্তু সে অর্থে কাজ হয়নি। অনেকের বিরুদ্ধে টাকা খেয়ে দলে ভেড়ানোর অভিযোগও রয়েছে।
এদিকে এ ধরনের ঘটনায় সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি বিএনপির পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, যাদের বিরুদ্ধে অপকর্মে জড়িত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তারা যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেশ কিছু জায়গায় অপকর্মে জড়িত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিএনপির পক্ষ থেকেই মামলা করা হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ কেউ দাবি করেন, বাস্তবে ঘটনার চেয়ে দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বেশি হচ্ছে, যা একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে করছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। ৫ আগস্টের পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে আমরা সব মিটিং ও সমাবেশে বলেছি, আওয়ামী লীগ যেসব অপকর্ম করে এ দেশে বদনাম করেছে, সে ধরনের কোনো কাজ বিএনপি নেতাকর্মীরা করতে পারবে না। তার মধ্যে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ নানারকমের বিষয় আছে। তিনি বলেন, যারা বেপরোয়া বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।’ তবে যা ঘটছে, তার চেয়ে বেশি অপপ্রচার হচ্ছে বলেও দাবি করেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।
দলের নাম করে চাঁদাবাজি, দখলসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী। এর মধ্যে ‘হাইব্রিড’ ও ‘নব্য বিএনপির’ নামধারীরাই বেশি বেপরোয়া।
বিগত দিনে রাজপথে থাকা বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপিতে এখন ‘হাইব্রিড’দের অনেক দাপট। দলের দুর্দিনে যারা নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন, তাল মিলিয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে, তারাই এখন বিএনপির হর্তাকর্তা। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে নব্য বিএনপি নামধারী অনেকে। যারা কখনোই বিএনপিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। অথচ তারাই এখন দখল ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। এমনকি বিভিন্ন কমিটিতেও তাদের অনেককে রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে ত্যাগী এবং দুঃসময়ের নেতাকর্মীরা বিব্রত এবং অনেক স্থানে কোণঠাসা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মশাল মিছিল, ভাঙচুর, নিজ দলের কর্মীদের আহত করার ঘটনা ঘটে। পরে তদন্ত করে চিলমারী উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক সাঈদ হোসেন পাখি ও সদস্য আবদুল মতিন শিরিনের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার কোতোয়ালি মডেল থানার পাছথুবী ইউনিয়নের (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক খোকন মিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি দলের নামে বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটের পাটগ্রামে কিছু লোক বিএনপির নামে সেখানকার থানায় ঢুকে ভাঙচুর করে। এ সময় দুজনকে ছিনিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে পাটগ্রাম পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হোসেনকে প্রাথমিক পদসহ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ঢাকার বনানী থানা যুবদলের আহ্বায়ক মুনির হোসেনের নেতৃত্বে একদল ব্যক্তি গত বুধবার রাতে বনানী এলাকার জাকারিয়া হোটেলে ঢুকে ভাঙচুর ও নারীদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে মুনির হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়।
গত ২৮ জুন বাড়ি দখল ও চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সাবেক কাউন্সিলর হারুনুর রশিদ হারুনকে কারণ দর্শানো (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দপ্তর সম্পাদক (যুগ্ম আহ্বায়ক মর্যাদা) সাইদুর রহমান মিন্টু বলেন, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই হারুনুর রশিদ হারুন শোকজের জবাব দিয়েছেন। তবে আহ্বায়ক দেশের বাইরে থাকায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। শিগগিরই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী বা অপরাধমূলক কাজের ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান জিরো টলারেন্স। দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কিংবা অসদাচরণ করলেই সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের নামে যে কেউ যে কোনো ধরনের অনৈতিক, অবৈধ, সন্ত্রাসী ও সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড করবে, সে রেহাই পাবে না। এরই মধ্যে চার-পাঁচ হাজার বিএনপি এবং দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সৌজন্যে :যুগান্তর
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।