চাঁদা না দেওয়ায় ভাঙারি ব্যবসায়ীকে হত্যা,অস্ত্রসহ গ্রেফতার ৪ : যুবদলের ২ নেতা আজীবন বহিষ্কার


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : রাজধানীতে চাঁদা না দেওয়ায় মো. সোহাগ (৪৩) নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে এ ঘটনা ঘটে। সেদিনই পুলিশ যুবদল নেতা মঈনসহ দুজনকে আটক করেছে।
নিহত সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারি ব্যবসা করতেন।এদিকে হত্যাকাণ্ডের ভিডিও এখন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ব্যবসায়ীর পরনের কাপড় খুলে নিয়ে তাকে নির্মমভাবে মাথায় পাথর মেরে হত্যা করে অভিযুক্তরা।
নিহত সোহাগের বন্ধু মামুন বলেন, দু-তিন মাস ধরে মঈন প্রতি মাসে চাঁদা দাবি করত সোহাগের কাছে। সোহাগ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কিছুদিন আগে দোকানের সামনে এসে তাকে ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দিয়ে চলে যায়। বুধবার সন্ধ্যায় সোহাগকে একা পেয়ে মঈনসহ ৪-৫ জন মিলে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। নির্যাতনের সময় তারা তার পরনের পোশাকও খুলে ফেলে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আমরা কেউ ভয়ে এগিয়ে যেতে পারিনি। কারণ মঈন যুবদলের চকবাজার থানার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। তার বিরুদ্ধে মিটফোর্ড হাসপাতালের ফুটপাত ও কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগেও মোটা অঙ্কের ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
লালবাগ থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাব্বি জানান, তিনি মঈনকে চিনেন। মঈন যুবদলের সক্রিয় কর্মী। দীর্ঘদিন ধরে চকবাজার থানায় যুবদলের কোনো কমিটি নেই। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মঈন এ ধরনের কর্মকাণ্ড করতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ভাঙারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। সেই বিরোধ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি। ঘটনার পর পুলিশ মঈন ও জনি নামে দুজনকে আটক করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অস্ত্রসহ গ্রেফতার ৪
ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে (৩৯) প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া শাখার উপকমমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত দুজন পুলিশের হাতে এবং বাকি দুজনকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে গ্রেফতার হয়। তাদের মধ্যে দুইজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন-মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিন (২২)।বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন সামনের সড়কের ওপর তাকে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও ইট-সিমেন্টের টুকরো দিয়ে থেঁতলে হত্যা করা হয়।
তালেবুর রহমান জানান, ভাঙাড়ির ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সোহাগকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরপর কোতোয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। পরে নিহত সোহাগের বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে গ্রেফতার করে। এ সময় রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়িক বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।ইতোমধ্যে র্যাব অভিযান চালিয়ে আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে। এ নিয়ে মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হলো।গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিসি) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান।
যুবদলের ২ নেতা আজীবন বহিষ্কার
ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল এলাকায় ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী সোহাগ (৩৯) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যুবদলের দুই নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।তারা হলেন- যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকি। তাদের বিরুদ্ধে সোহাগের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।শুক্রবার রাতে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়ার সই করা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৯ জুলাই রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের মূল ফটকে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ী যুবককে প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষে থেকে মামলা করা হয়। আসামিরা হলেন- যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পদাক রজ্জব আলী পন্টু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকি। তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে আজীবন জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েন মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তাদের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনোরূপ শৈথিল্য না দেখিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে যুবদল।
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের আজীবনের জন্য বিএনপি বহিষ্কার করেছে জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।