মতামত

সাংবাদিকতায় একজন সাঈদুর রহমান রিমন

IMG 20250731 WA0030 700x390 1
print news

পারভেজ মুন্না:  জানা, শেখা, মেধা আর শ্রমের সমন্বয়ে সাংবাদিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র সাঈদুর রহমান রিমন-আজ তিনি নিজেই শুধু নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। ফিল্ড পর্যায়ের সাংবাদিকতায় তার অর্জনের ধারে কাছেও কেউ নেই। এটা একবাক্যে সকলেই শিকার করেন। প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত তার লেখা সংবাদের রেকর্ড দেখলে চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে উঠে। দেশ সেরা বিভিন্ন দৈনিকে চার সহস্রাধিক লীড, ব্যাক লীড প্রকাশের অনন্য নজির একমাত্র রিমনেরই রয়েছে। তাছাড়া সকল বিষয়ে রিপোর্টিং করার রেকর্ডটাও একমাত্র তারই দখলে। সুপ্রাচীন অতীত কিংবা সুদূর আগামিতেও এ রেকর্ড কেউ ছুঁয়ে দেখবেন-এমনটা কল্পনা করাও অবাস্তব। আমার জানামতে জাতীয় পর্যায়ের প্রথম শ্রেণীর সকল গণমাধ্যমে রিপোর্টারগণ সাধারনত বিট ভিত্তিক’ রিপোর্ট করে থাকেন। কেউ পলিটিক্যাল, কেউ ডিপ্লোম্যাটিক, কেউ ইকোনোমিক, আবার কেউ কেউ স্পোর্টস কিংবা বিনোদন বিটের রিপোর্ট করেন। কালেভদ্রে কোনো রিপোর্টারকে একাধিক বিটে কিছু রিপোর্ট করার দৃষ্টান্ত দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু সাঈদুর রহমান রিমনের ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শেয়ারবাজার, অপরাধ, বিনোদন, নাগরিক সেবা সুবিধা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পার্লামেন্ট, কুটনৈতিক, দুদক, নির্বাচন কমিশন, আইসিটি, মেডিক্যাল, প্রতিরক্ষা, কৃষি, শিক্ষাসহ সকল বিটের সব বিষয়ে দেদারছে রিপোর্ট করার এন্তার নজির রয়েছে। এমনকি আইন বিষয়ে বিস্তৃত ধারনা না থাকলে আইন-আদালত সম্পর্কিত স্পর্শকাতর বিষয়ে কারো রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে অলিখিত নিষেধাজ্ঞাই দেয়া আছে সকল গণমাধ্যমে। অথচ নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বিষয়ে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রিপোর্টগুলোও অবলীলায় তৈরি করেছেন রিমন। সকল বিষয়েই আশ্চর্যরকম পারফরমেন্স দেখিয়েই ঈর্ষনীয় পর্যায়ের গৌরবের অধিকারী হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বাস্তবতায় একমাত্র মেশিনম্যান রিমনের পক্ষেই এটা সম্ভব। অথচ বিনয়ী রিমনের কন্ঠে ‘এখনও ভাল মানের রিপোর্টার হতে না পারার’ আক্ষেপের সুর বাজে। যেন মোটেও তিনি ক্লান্ত হননি, মেটেনি তার লেখার সাধও। একথা বললে বেশি বলা হবে না যে, সাঈদুর রহমান রিমনের জন্মই হয়েছে রিপোর্ট করার জন্য, তাকে রুখবে সাধ্য আছে কার?

একজন সংবাদকর্মির জীবন কথা
সাঈদুর রহমান রিমন ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলাস্থ জাবরা পীরবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা ইউনুস উদ্দিন আহমেদ ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক। ষাটের দশকে তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান (পরবর্তীতে দৈনিক বাংলা)- এর সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। মা সাহারা আহমেদ ছিলেন একজন গৃহিনী। সাঈদুর রহমান রিমন তার চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ট। তিনি ১৯৮৪ সালে এসএসসি, ১৯৮৬ সালে এইচএসসি এবং ১৯৯০ সালে বাংলায় অনার্স পাশ করেন।
সাভার কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ১৯৮৫ সালে তৎকালীন পাঠক সমাজে ব্যাপক সমাদৃত সাপ্তাহিক মুক্তিবাণী পত্রিকার মাধ্যমেই তার সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত একটানা আট বছর তিনি দৈনিক ইত্তেফাক এর ‘সাভার সংবাদদাতা’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক ইত্তেফাকে ধামরাইয়ে মুক্তিপণ আদায়কারী চোখবাঁধা পার্টির নির্মমমতা, মানুষের কংকাল-হাড়-রক্ত-কিডনিসহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির রোমহর্ষক কাহিনী উদঘাটন, শিশু খাদ্যের গুড়ো দুধে বিপজ্জনক তেজস্ক্রিয়তা শীর্ষক সাড়া জাগানো নানা প্রতিবেদন রচনা করে ব্যাপক আলোচিত হন।
১৯৯৪ সালে রিমন ঢাকায় দৈনিক আলআমীন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে এবং ১৯৯৭ সালে দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার (ক্রাইম) হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। রিমন ২০০০ সালের এপ্রিল মাসে দৈনিক মুক্তকন্ঠ পত্রিকায় সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করেন। ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় এবং ২০০৪ সালের মে মাস থেকে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন পত্রিকা দৈনিক সংবাদ’এ দায়িত্ব পালন করেন রিমন।
২০০৯ সালে বসুন্ধরার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সাড়া জাগানো বাংলানিউজ ২৪.কম অনলাইনে ক্রাইম ইনচার্জ হিসেবে এবং ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং সেল এর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ১ মে তিনি দৈনিক দেশবাংলা‘র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পদে নিয়োগ লাভ করেন। ২০২৩ সালের ১ জুন সাঈদুর রহমান রিমন দৈনিক ঢাকা প্রতিদিন পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবেও মর্যাদা লাভ করেন। এসব ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে দৈনিক খবর বাংলাদেশ, নতুন সময়, দৈনিক অন্যদিগন্ত, সাপ্তাহিক দেশপত্র, নতুন বার্তা, সাপ্তাহিক সাফকথা’র প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

রিমনের উল্লেখযোগ্য পুরস্কারসমূহ
জগত জুড়ে যতোটা নই তার চেয়ে অধিক প্রচার-প্রকাশের অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা চলে। অথচ পেশায় নিজ বিভাগে সেরাদের সেরা হয়েও সাঈদুর রহমান রিমন পর্দার অন্তরালে কত স্বাচ্ছন্দে থাকেন-তা ভাবতে গেলেও অবাক হতে হয়। এদেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তী বাংলাদেশ প্রতিদিনের জৈষ্ঠ প্রতিবেদক সাঈদুর রহমান রিমনের বর্ণাঢ্য কর্মযজ্ঞের অতি সংক্ষিপ্ত একটা অংশ তুলে ধরার প্রয়াস চালাচ্ছি- ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আগাম প্রার্থনা জানিয়ে রাখলাম। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বাংলা দৈনিক পত্রিকা সংবাদ’এ ২০০৬ সালে সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দিয়েই তার সাংবাদিকতার জীবনযাত্রা চিত্রায়ন শুরু করা যায়।
দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বাংলা দৈনিক পত্রিকা সংবাদ’এ ২০০৬ সালে সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়: “দৈনিক সংবাদ-এর স্টাফ রিপোর্টার সাঈদুর রহমান রিমন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় আবারও পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৬ সালে অপরাধ বিষয়ক শ্রেষ্ঠ অনুসন্ধানমূলক সিরিজ প্রতিবেদনের জন্য রিমন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সৌজন্যে প্রদত্ত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পুরস্কারটি লাভ করেন। রিপোর্টার্স ইউনিটির উদ্যোগে এক আনন্দঘন পরিবেশে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাঈদুর রহমান রিমনের হাতে পুরস্কার বাবদ ৫০ হাজার টাকার চেক, পদক ও একটি সম্মাননাপত্র তুলে দেয়া হয়। এ নিয়ে সাঈদুর রহমান রিমন গত ১০ বছরেই ‘শ্রেষ্ঠ সাংবাদিকতার’ ৯টি পুরস্কার অর্জন করলেন।”
তার পাওয়া উল্লেখযোগ্য পুরস্কার হচ্ছে: ১৯৯৯ সালে ‘আগে টাকা পরে লাশ যাবে কবরে’ শীর্ষক প্রতিবেদনের জন্য জনকন্ঠ’র সৌজন্যে প্রদত্ত ইয়াসমীন স্মৃতি পুরস্কার এবং ২০০০ সালে ‘গারো পাহাড়ে বিপন্ন মানবতা’ শীর্ষক সিরিজ প্রতিবেদনের জন্য চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ওই সিরিজ প্রতিবেদন সমূহে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী গারো, হাজং, কোচ, ডালু, বানাইসহ অন্যান্য আদিবাসী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সুখ-দুঃখ, বঞ্চনার নানা কাহিনী তুলে ধরা হয়। কি ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতন ও নিস্পেষণের কারণে আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো নিশ্চিহ্ন হচ্ছে, দেশ ছাড়ছে কিংবা হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশি দেশের গহিন অরণ্যে তার ফিরিস্তি তুলে ধরা হয় সিরিজ প্রতিবেদনসমূহে। এর পাশাপাশি ফুটিয়ে তোলা হয় সিলেট অঞ্চলের পাহাড়-টিলা খামচে ধরে কোনমতে বেঁচে থাকা খাসিয়া পরিবারগুলোর দুঃখ-কষ্টের নির্মমতা।
২০০১ সালে ‘চট্টগ্রামের চুনতি অভয়ারণ্যে মানুষ থাকবে নাকি বন্যপ্রাণী থাকবে?’ শীর্ষক প্রতিবেদনের জন্য ইউএনডিপি’র সেমপ-বেলা পুরস্কার ও ফেলোশীপ অর্জন। ২০০৬ সালে অপরাধ বিষয়ক সেরা সাংবাদিক হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সৌজন্যে দেশের একমাত্র পুরস্কারটিও অর্জন করেন সাঈদুর রহমান রিমন। সংবাদ-এ প্রকাশিত “হালুয়াঘাট সীমান্তে কি হচ্ছে?” শীর্ষক ধারাবাহিক ওই প্রতিবেদন সমূহে উলফা, নাগা বিদ্রোহী, এনডিএফবি, আচিক ফ্রন্টসহ ভারতীয় ৯টি উগ্রবাদী গেরিলা সংগঠনের সশস্ত্র সদস্য কর্তৃক বাংলাদেশের সীমান্তে অবাধ বিচরণ ও নানা অপরাধ সংঘটনের বিস্তৃত বিবরণ তুলে ধরা হয়। সংশি¬ষ্ট গেরিলা সংগঠনগুলোর ক্যাম্পসমূহ, সশস্ত্র প্রশিক্ষণ ও ক্যাম্প কমান্ডারদের ছবিসহ সাক্ষাৎকার সংগ্রহের মতো ভয়ানক সাহসীকতার পরিচয় দেন তিনি। এসব সিরিজ প্রতিবেদন সংবাদ-এর পাতায় গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই উগ্রপন্থী গেরিলা গ্রুপগুলো রিমন ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর অব্যাহত হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল-এমনকি তাকে হত্যার জন্য নির্দ্দিষ্ট সময়সীমাও বেধে দিয়েছিল। আত্মরক্ষার্থে সাঈদুর রহমান রিমনকে মাসের পর মাস ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে।

‘এই সাংবাদিককে ধরিয়ে দিন’
বাংলাবাজার পত্রিকায় তিন বছরের দায়িত্বকালে তার সর্বাধিক সংখ্যক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং সেগুলো দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করে। ওই সময় সুন্দরবনের কান্না শীর্ষক ৫টি সিরিজ, সীমান্ত সংঘাত নিয়ে ১৮টি সিরিজ, জাসদ নেতা কাজী আরেফ খুনের নেপথ্য কাহিনীর উপর ৮টি সিরিজ, বিষাক্ত মদ পানে নরসিংদীতে প্রায় দেড়শ’ মানুষের মর্মন্তদ মৃত্যুর নেপথ্যে বিষয়ক ৬টি সিরিজসহ বেশ কয়েকটি সিরিজ প্রতিবেদন রচনা করে রিমন সারাদেশে রীতিমত হৈচৈ ফেলে দেন। জাসদ নেতা কাজী আরেফ খুনের নেপথ্য কাহিনী নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখার কারণে তথাকথিত সর্বহারা গ্রুপগুলো রিমনের মৃত্যুর জন্য ২০ দিন সময়সীমাও বেধে দেয়।
অপরদিকে নরসিংদীতে বিষাক্ত মদ সরবরাহের মাধ্যমে দেড় শতাধিক মানুষের হত্যাকান্ড ঘটানোর ব্যাপারে ইনডেপথ রিপোর্টিং করায় যমুনা শিল্পগোষ্ঠী রিমনের বিরুদ্ধে ৫০ কোটি টাকার দাবিতে মানহানি মামলা দায়ের করে এবং ‘এই সাংবাদিককে ধরিয়ে দিন’ মর্মে সবগুলো জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় বড় বড় বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে দেয়। দেশে ওই সময়ে টাকার দাবি সম্বলিত মানহানি মামলার মধ্যে রিমনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি সর্বোচ্চ অংকের মামলা ছিল বলে জানা গেছে।

সংবাদ থেকেই বদলে যাওয়া
তবে ২০০৪ সালে দৈনিক সংবাদ’এ যোগদানের পর থেকেই রিমনের সাংবাদিকতায় একেবারেই ভিন্ন মাত্রার সংযোজন দেখতে পাওয়া যায়। একের পর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আর সরেজমিন সিরিজ প্রতিবেদন রচনার এক স্বর্ণযুগের সূচনা করেন তিনি। রিমনের ভাষায় ঃ ‘সংবাদ-এ সাংবাদিকতার সেরা সময় কাটিয়েছি আমি, একাধারে শিখেছি, লিখেছি এবং মনের ভিতর সাহস সঞ্চার করতে পেরেছি।’
জাতীয় দৈনিক পত্রিকা সমূহে সাংবাদিকতার গুরুত্ববহ দায়িত্ব পালনকালে সাঈদুর রহমান রিমন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির জন্য দেশের ৬৩টি জেলার ৩৬৯টি উপজেলা এলাকা সফর করেছেন, ছুটে গেছেন দুর্গম জনপদে। অবরুদ্ধ বোবারথল, সুন্দরবনের কান্না, খাসিয়াদের বাঁচান, গারো পাহাড়ে এসব কি হচ্ছে, হালুয়াঘাট সীমান্তে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দৌরাত্ম্য, বৃহত্তর সিলেট সীমান্ত জুড়ে ভিনদেশী উগ্রবাদী সন্ত্রাস, মায়ানমার জঙ্গলে বার্মা লিবারেশন আর্মির চেয়ারম্যান ড. মং ফোল্লা’র সাক্ষাৎকার- ইত্যাদি প্রতিবেদন তা বিশেষভাবে প্রমান করে। মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী পাহাড়ে উগ্রপন্থী আচিক ফ্রন্ট ও এনডিএফবি’র ক্যাম্পে অবস্থান, সশস্ত্র ট্রেনিংরত অবস্থায় ছবি তোলা শীর্ষ কমান্ডারদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, আসামের সীমান্তবর্তী বেলুয়া পাহাড় চুড়ায় উলফা ক্যাম্পে গমন ও সংশ্লি¬ষ্ট ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মার্টিন আকাশের সাক্ষাৎকার এবং বার্মা লিবারেশন আর্মির চেয়ারম্যান ড. মং ফোল্লাসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারসহ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির মাধ্যমে রিমন দুরুহ স্কুপ নিউজ করার দুর্লভ সম্মান বয়ে আনেন।
এদিকে ঢাকায় কলোনি বাসিন্দাদের জীবন-যাপনের উপর ২৬টি সিরিজ প্রতিবেদন রচনা করেও তিনি বেশ আলোচিত হয়ে উঠেন। সব মিলিয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়বস্তু কেন্দ্রিক দুই সহস্রাধিক সরেজমিন ও অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন এবং দেড় শতাধিক সিরিজ প্রতিবেদনের মাধ্যমে রিমন ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করতে সমর্থ হন। ঢাকার ক্যাসিনো জুয়া সাম্রাজ্য আবিস্কার ও টেকনাফে মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের নেপথ্য কাহিনী উদঘাটন করে রিমন সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত হন।

অনুসন্ধান আর সরেজমিনে সেরাদের সেরা
সরেজমিন প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে সাঈদুর রহমান রিমনের তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো সর্বমহলেই প্রশংসিত হয়ে আসছে। ১৯৯৮ সালে একটি এনজিও সংস্থার কিস্তি আদায়ের নির্মমতা তুলে ধরে ‘আগে টাকা পরে লাশ যাবে কবরে’ শীর্ষক হৃদয়স্পর্শী সরেজমিন প্রতিবেদনের জন্য রিমন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি থেকে ‘বর্ষসেরা অনুসন্ধানী রিপোর্টার’ হিসেবে ইয়াসমীন স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। ৫০ হাজার টাকা, পদক ও সম্মাননা ক্রেস্ট প্রাপ্তির এ পুরস্কার নিয়ে সারাদেশ এবং দেশের বাইরেও ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গার্মেন্টস কর্মি আসমা’র কিডনি চুরি সংক্রান্ত তার সরেজমিন প্রতিবেদনটির কারণেও তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে বিশেষ তদন্ত টিম গঠন, তার যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থাকরণসহ আসমার অনুকুলে ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিতে হয়েছিল। ওই সময় সবগুলো দৈনিক পত্রিকায় ‘গার্মেন্টস শ্রমিক আসমার চিকিৎসায় সরকারের অভাবনীয় সহায়তা প্রদান’ মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তবে একমাত্র বাংলাবাজার পত্রিকাতেই সাঈদুর রহমান রিমনের প্রতিবেদন ছিল “অবশেষে আসমার চিকিৎসায় ১১ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়।”
অন্যদিকে ২০২১ সালে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগিদের দ্বারা বহুল আলোচিত মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের মাত্র ৭২ ঘন্টার মধ্যে নেপথ্য কাহিনী প্রকাশ করার বীরত্ব দেখান সাঈদুর রহমান রিমন। দেশের বাঘা বাঘা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তত্বাবধানে টানা দেড় মাস তদন্ত শেষে সাঈদুর রহমান রিমনের প্রতিবেদনকেই স্বীকৃতি দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর দীর্ঘসময় ধরে চরম হুমকির মুখে পড়েন তিনি। ওই সময় রাষ্ট্রীয় বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদান ব্যতিত সাংবাদিক রিমনের জীবন রক্ষা অসম্ভব ছিল বলেও মনে করেন অনেকে।

রিমনের দৃষ্টিতে সেরা ও তৃপ্তিদায়ক রিপোর্ট
শত শত রিপোর্টের স্রষ্টা সাঈদুর রহমান রিমনের দৃষ্টিতে মাত্র দুটি রিপোর্টকে শ্রেষ্ঠ রিপোর্ট বলে আখ্যায়িত করেন। যে প্রথিতযশা সাংবাদিকের অন্তত ৫৮টি রিপোর্ট দেশের সেরা রিপোর্ট হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে। তবে তার নিজের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ট রিপোর্ট হচ্ছে ‘রায় বাহাদুরের অনুতাপ’- ছাপা হয়েছিল দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায়, ২০০২ সালে। ওই রিপোর্টে এক মানব শিশু হত্যাকারী হাতির জবানবন্দী তুলে ধরা হয়েছিল। বিরল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে তিনি সারাদেশে হৈচৈ ফেলে দেন।
অপর প্রতিবেদন ছিল ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত সিরিজ প্রতিবেদন। পঁচাত্তরের প্রতিরোধ যুদ্ধের অজানা কাহিনী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে শত শত দামাল ছেলে গারো পাহাড়ে জড়ো হয়ে শুরু করেছিলেন ভয়াল প্রতিরোধযুদ্ধ। টানা ২২ মাস ধরে পরিচালিত সে যুদ্ধে আটটি থানা ও পাঁচটি বিজিবি ক্যাম্প দখল করে নেন তারা। ১০৪ জন প্রতিরোধ যোদ্ধা শহীদ হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছিলেন পাঁচ শতাধিক বীর। ঘরবাড়ি, জায়গা জমি সর্বস্ব হারান কয়েক হাজার প্রতিরোধ যোদ্ধা। ভয়াল সে যুদ্ধের ৩৭ বছর পর সাঈদুর রহমান রিমনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেই সেই অজানা ইতিহাস জানতে পারেন দেশবাসী। অনুসন্ধানী সে প্রতিবেদনকে সাঈদুর রহমান রিমন নিজের তৃপ্তিদায়ক রিপোর্ট বলে আখ্যা দেন।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবন তার…
সাঈদুর রহমান রিমনের বর্ণাঢ্য কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশ প্রতিদিনে দায়িত্ব পালনকালীন এক দশকে তিনি সাংবাদিকতার রাজকীয় জীবন কাটিয়েছেন। তার প্রতিটি রিপোর্টই পাঠকনন্দিত হয় এবং সারাদেশে সাঈদুর রহমান রিমনের নিজস্ব পাঠক-সমর্থক গোষ্ঠী গড়ে উঠে। সাম্প্রতিক সময়ে তার বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন কর্তৃক মানহানী মামলা দায়েরের প্রতিক্রিয়ায় দেশজুড়ে ২৯০ টিরও বেশি মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ মিছিলে তার সমর্থনের ভিত্তি কতটুকু মজবুত তা টের পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের এক সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের বিচ্ছু শামসু খ্যাত সরকার দলীয় হুইপের বিরুদ্ধে দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে রিমনের বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি টাকা দাবি সংবলিত মানহানির মামলা রুজু করা হয়। দেশে এ যাবতকালে মানহানি সংক্রান্ত সর্বোচ্চ অঙ্কের এ মামলাকে ঘিরে সারাদেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভে উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ব্যক্তি জীবনে অসম্ভব বিনয়ী ও চমৎকার ব্যবহারের মানুষ সাঈদুর রহমান রিমনের দেশ ও বিদেশে বিপুল সংখ্যক ভক্ত সমর্থক রয়েছে। তার ফেসবুকের পাতায় পাতায় হাজারো সমর্থকের ভালবাসার সমর্থন দেখেই তা অনুমান করা যায়। পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী বিশেষ করে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (উপজাতীয়) জীবনধারা তাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে। সাঈদুর রহমান রিমন প্রশিক্ষণ ও ভ্রমনের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই জার্মানি, ভারত, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ সফর করেছেন। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী চামেলী রহমান ও মেধাবী কন্যা সিলভী রহমান উর্মিকে নিয়েই তার আলাদা ভূবণ। তার একমাত্র কন্যা উচ্চ শিক্ষার্থে বিশেষ বৃত্তিতে জার্মানিতে অবস্থান করছেন।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.