ছাত্রনেতারা মাঠে বিএনপির মনোনয়ন পেতে


নূরে আলম জিকু: বহুল প্রতীক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে। ভোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও এই সময় ধরেই কৌশলে প্রস্তুতি নিচ্ছে সব রাজনৈতিক দল। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। নির্বাচনি কৌশল বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে বিএনপিও। এবারের প্রস্তুতি একটু ভিন্ন। ৩১ দফার ভিত্তিতে রাষ্ট্রগঠনের কথা মাথার রেখেই তরুণ নেতৃত্বকে সুযোগ দিতে চায় দলটি। সেই ভাবনায় সামনে এসেছে ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা একঝাঁক তরুণ মুখ। তাদের ঘিরেই তৈরি হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় শীর্ষপদ থেকে উঠে আসা অন্তত ২৫ নেতা আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিগত সময়ে নেতৃত্বে দক্ষতার পাশাপাশি আন্দোলন-সংগ্রামে বড় ভূমিকা রাখায় বর্তমানে বিএনপিসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা। সম্ভাব্য এসব প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনি তৎপরতা চালাচ্ছেন। তরুণ ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করছেন এবং নিজেদের ‘পরিবর্তনের প্রতীক’ হিসাবে তুলে ধরছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে তরুণদের অগ্রাধিকারের বিষয়টিও উঠে এসেছে। এমন বার্তায় নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে প্রস্তুত ছাত্রদল থেকে জাতীয় রাজনীতিতে উঠে আসা নেতারা। অনেকে এর আগেও সংসদ-সদস্য হয়েছিলেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগী, পরিচ্ছন্ন রাজনীতি ও এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে এমন প্রার্থীরা এবার অগ্রাধিকার পাবেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও দেশের রাজনীতিতে নতুনমাত্রা যুক্ত করবেন তরুণ এই ছাত্রনেতারা। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, তৃণমূলে সংযোগ, দলীয় আনুগত্য ও তরুণ ভোটারদের আকর্ষণসহ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে এগিয়ে থাকা নেতারা এবার প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন।
জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়নের তালিকায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতার নাম উঠে এসেছে। যারা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। আবার ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও নিজ নির্বাচনি এলাকায় যাচ্ছেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ নেতারা নিজ নিজ এলাকায় দলের নির্দেশনা অনুসারে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে সভা, সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
আসন্ন নির্বাচন ঘিরে প্রস্তুতি নেওয়া ছাত্রনেতাদের মধ্যে রয়েছেন-কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বর্তমানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। ক্লিন ইমেজের এই নেতাকে এবার নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে দেখতে চায় তৃণমূল। আগামী নির্বাচনে বগুড়া অথবা কুড়িগ্রাম অথবা ঢাকার যে কোনো একটি আসন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন। এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক সভাপতির মধ্যে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, ঢাকা-২ আসনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, গাজীপুর-৫ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা অথবা রংপুরের একটি আসনে যুগ্ম মহাসচিব হাবীব-উন-নবী খান সোহেল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খুলনা-৪ আসনে বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, টাঙ্গাইল-৫ আসনে বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নরসিংদী-৪ আসনে বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, বরিশাল-৪ আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, বগুড়া-৫ আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, যশোর-৬ আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন নোয়াখালী-১ আসন ও বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ নোয়াখালী-৫ আসনে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ময়মনসিংহ-৫ আসনে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।
এদিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বা যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে যারা ছিলেন তারাও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে নিজ নিজ এলাকায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ তালিকায় ভোলা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, পটুয়াখালী-৪ আসনে বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব, নরসিংদী-৩ আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান, নরসিংদী-৫ আসনে ইকবাল হোসেন শ্যামল, বরিশাল-২ আসনে সাইফ মাহমুদ জুয়েল। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির নোয়াখালী-৪ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে রয়েছেন। এছাড়া ঝিনাইদহ-২ আসনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
মনোহরদী ও বেলাব নিয়ে নরসিংদী-৪ আসন। এই আসন থেকে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল। তিনি যুগান্তরকে বলেন, দেশের তরুণ প্রজন্ম পরিবর্তনের চিন্তা করছে। তারা মনে করে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেকে এগিয়ে নিতে হলে গতানুগতিক ধারার বাহিরে গিয়ে পরিবর্তন করতে হবে। তরুণদের সাড়া আমাদের দিকে। নতুন ভোটারদের মধ্যে ভিন্ন চিন্তা কাজ করছে। ত্যাগী, পরীক্ষিত, আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছে, দলের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে, স্বচ্ছতা আছে, জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে , তাদের বিষয়টি আমি মনে করি দল ইতিবাচক হিসাবে ভাবছে।’ প্রার্থিতা চাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি যে ৩১ দফা নিয়ে কাজ করতে চায়। সেটার আলোকে বিভিন্ন কাঠামোগত যে সংস্কার এবং সাংবিধানিক সংস্কারের জায়গায় আমাদের কাজ করার অনেক বেশি সুযোগ আছে। সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আধুনিকায়নের যে চ্যালেঞ্জ সেই জায়গায় কাজের সুযোগ বেশি দেখছি। প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি নিয়মিতই এলাকায় সময় দিচ্ছি। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশছি। বয়স্ক মানুষ, মহিলা ও ইয়াং জেনারেশন সবার রেসপন্স পাচ্ছি।
আমিরুল ইসলাম খান আলীম বলেন, ছাত্রনেতারা বিএনপির অরজিনাল প্রডাক্ট। এর মধ্যে কোনো ভেজাল নেই। ছাত্রনেতাদের মূল্যায়ন করে প্রাধান্য দিলে দল আরও শক্তিশালী হবে। নির্বাচনি প্রস্তুতি হিসাবে তিনি বলেন, বিগত ২৫ বছর ধরে এলাকায় কাজ করছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জনগণের সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছি। সব সময় জনগণের পাশে ছিলাম। আশা করি জনগণের ভালোবাসা পাব।
রাজিব আহসান বলেন, আমি ছাত্রজীবনে শুধু পদ-পদবির রাজনীতি করিনি, করেছি আদর্শের রাজনীতি। গুলিতে, লাঠিতে, মামলায় বারবার রক্ত ঝরেছে, তবু রাজপথ ছাড়িনি। আজ জনগণ চায় বিশ্বাসযোগ্য প্রতিনিধি। আমি সেই বিশ্বাস গড়েছি বছরের পর বছর মানুষের পাশে থেকে। দল আমার ঘর, কর্মীরা আমার শক্তি, আর জনগণ আমার পরিবার।
সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ছাত্ররাজনীতি আমার জীবনের ভিত্তি। আমি রাজনীতি শিখেছি আন্দোলনের ময়দান থেকে, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে। সেই আদর্শ নিয়েই মাঠে আছি। তরুণরা পরিবর্তন চায়, শুধু নেতৃত্বে নয়, চিন্তায় ও আচরণে। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষের জন্য কাজ করছি। এলাকার মানুষ তরুণ নেতৃত্ব চায়। সেই হিসাবে আমিও প্রার্থিতা প্রত্যাশা করি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এলাকার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।