বরিশালে লিটন সিকদারকে কুপিয়ে হত্যা:৪০ জনকে আসামি করে মামলা


বরিশাল অফিস : বরিশালে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন সিকদারকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার নগরীর কাশিপুর বিল্ববাড়ীর নিজবাড়িতে বেপরোয়া ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের একপর্যায়ে কুপিয়ে তাকে আহত করা হয়। আহত লিটনকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হামলাকারীরা কুপিয়ে শরীর থেকে তার ডান হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। এ ঘটনায় তার মা রাবেয়া বেগম (৫৮), বোন মুন্নিসহ (৩২) তিনজন আহত হন।
এ হত্যার জন্য লিটনের ভগিনীপতি জাকির হোসেন ও তার পক্ষের লোকজনকে দায়ী করেছে পরিবার। তাদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলছিল লিটনের পরিবারের। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুন্নি জানান, ‘আমার স্বামী জাকির কিছুদিন আগে ঢাকায় আরেকটি বিয়ে করে। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে গোলমাল চলছিল। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর প্রায়ই আমাকে মারধর করত জাকির। আমার ভাই লিটন এর প্রতিবাদ করলে গোলমাল শুরু হয়।’ এলাকাবাসী জানান, ‘দ্বিতীয় বিয়ের পর দুই পরিবারের বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। ১০/১২ দিন আগে ভগিনীপতি জাকিরকে ঘরে আটকে মারধর করেন লিটন। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় মামলা হলে গ্রেফতার হয়ে জেলে যায় লিটন। বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরলে জাকির ও তার লোকজনের হামলায় খুন হয় সে। এ সময় ভাঙচুর করা হয় তার বসতবাড়ি।’ স্থানীয়রা আরও জানান, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা লিটনও যে খুব একটা ভালো ছিল তা নয়। এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে। ২০২০ সালে বিএনপির একটি কর্মসূচিতে নিজ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ায় দল থেকে বহিষ্কার হয় লিটন। এরপর থেকে দলের কোনো পদে না থাকলেও সে নিয়মিত বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নিত।
ভগিনীপতির পরিবারের সঙ্গে বড় ধরনের ঝামেলার শঙ্কায় বৃহস্পতিবার বিকালে স্থানীয় বিমানবন্দর থানায় খবর দেওয়া হয়েছিল। এসআই শহিদুলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দলও গিয়েছিল সেখানে। তাদের সামনেই লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ৪০/৫০ জনের একটি দল। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে শোনা যায়, স্থানীয় এক বাসিন্দা পুলিশের এসআই শহিদুলকে বলছে লিটনকে সেখান থেকে সরিয়ে নিতে। তা না হলে বড় ধরনের অঘটন, এমনকি লিটনকে খুন পর্যন্ত করা হতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, এসআই শহিদুলের উপস্থিতিতেই হামলাকারীরা লাঠিসোঁটা-ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়েছে লিটনের বাড়িতে। কেউ একজন চিৎকার করে বলছে, ‘লিটনরে মাইরা ফালা, শ্যাষ কইরা দে।’ এভাবে সবকিছু চোখের সামনে ঘটলেও টহল গাড়ি আর পুলিশ নিয়ে সেখান থেকে চলে যান শহিদুল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিটনের বোন মুন্নিও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় তার ভাই খুন হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য এসআই শহিদুলকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন সিকদার বলেন, ‘শহিদুল মূলত ঘটনার তদন্ত করতে সেখানে গিয়েছিল। তখন পর্যন্ত হামলা, ভাঙচুর শুরু হয়নি। দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।’
লিটন সিকদার হত্যার ঘটনায় তার বোন মুন্নি সিকদার বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এতে ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।