গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ


ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : ঢাকা মেডিকেল কলেজ গণপূর্ত বিভাগ, ঢাকা-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে এপিপি ও থোক বরাদ্দের প্রায় ১৫ কোটি টাকাসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মেরামতের জন্য ৫ কোটি ২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। অভিযোগ উঠেছে এই বরাদ্দের টাকা কাজ সম্পন্ন না করেই ঠিকাদারের সাথে আঁতাত করে সম্পূর্ন বিল পরিশোধ করেছেন মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম। তিনি ঠিকাদারকে বিশেষ সুবিধা নিয়েই এই কাজ করেছেন বলে জানা যায়।
এদিকে গত রোববার সকাল ৯টার দিকে মেরামতের অভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নাক কান গলা (ইএনটি) বিভাগের ৩০৩ নম্বর ওয়ার্ডের ছাদের একাংশের পলেস্তারা খসে পড়ে এক রোগী আহত হয়েছেন। এক অর্থ বছরে এতো টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পরেও কিভাবে পলেস্তারা ভেঙ্গে পরে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবিষয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে কোনো তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়নি এখন পর্যন্ত।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অর্থ বছরের শেষ দিকে কোন প্রাক্কলন অনুমোদন হওয়ার পর দরপত্র আহবান করে সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। তার পরও অর্থ বছর শেষ হওয়ায় কাজ শেষ দেখাতে হয়েছে জুনের মধ্যে। তা না করলে বরাদ্দ অর্থ সরকারের কোষাগারে ফেরত যাবে। এ কারণে বেশির ভাগ নির্বাহী প্রকৌশলীই গোঁজামিল দিয়ে বা কাজ না করেই কাগজে কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল দিয়ে দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই অর্থ বছরের মার্চ মাসে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে প্রেরিত এক স্মারকে দেখা যায়, মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ পেয়ছেন ৫ কোটি ২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। এই বরাদ্দে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের নিচতলায় ট্রায়াঙ্গ রুম, ক্যাজুয়ালিটি ডাক্তার রুম, টয়লেট তৈরী করণসহ পুনঃবিন্যাসের জন্য ৪০ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ভবনের ৩য় তলার কেবিনের টয়লেটের কমোড, স্যানিটারী ফিটিংস ও ভাংগা দরজা জানালা নবায়ন ও রং করণসহ আনুষাঙ্গিক মেরামতের জন্য ৪০ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে নতুন টয়লেট জোন ও রোগীদের জন্য অপেক্ষাগার স্থাপনের জন্য ২০ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরাতন জরাজীর্ণ গ্যাসলাইন সমূহ পরিবর্তন করণসহ আনুষাঙ্গিক মেরামতের জন্য ২০ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন ৩২৪, এলিফেন্ট রোডস্থ ষ্টাফ কোয়ার্টার এর ভবন নং- ৩ ও ৪ এর মেরামতের জন্য ৩২ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন ২০৮, লালবাগস্থ পিলখানা ষ্টাফ কোয়ার্টার এর নিরাপত্তা দেয়াল মেরামতের জন্য ৩০ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২ এর কেবিনে পানি পড়া বন্ধ করণের নিমিত্তে ওয়াটার প্রুফিং করণের জন্য ২০ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন ইন্টার্নী ছাত্র হোস্টেলের বাথরুম সংস্কার ও অন্যান্য সংস্কারসহ আনুষাঙ্গিক মেরামতের জন্য ৪০ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২ এর নিচ তলা হতে ১০ম তলা পর্যন্ত সিঁড়ি ঘর সমূহের ভাঙা টালি পরিবর্তন ও রং করণসহ আনুষাঙ্গিক মেরামতের জন্য ২০ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের ওয়ার্ড নং- ২১৭ এবং ২১৮ এর ডাক্তার এবং রোগীদের টয়লেট সমুহের মেরামত ও সংস্কার করণের ১৫ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপিডি ভবনের পাশের সুয়ারেজ লাইন ও ভূ-গর্ভস্থ লাইন মেরামতের জন্য ২০ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপিডি ভবনের ৩য় তলার ৩১২, ৩১৩ ওয়ার্ড এর মেরামতের জন্য ৩০ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহি:বিভাগের ৩য় তলার পশ্চিম পাশের ছাদের পানি পড়া বন্ধকরণের জন্য ৭ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওটি বিল্ডিং এর ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলার থাই এ্যালুমিনিয়ামের দরজা জানালা নবায়ন ডাক্তার, নার্স ও রোগীদের টয়লেট সমূহের মেরামত ও সংস্কারের জন্য ২০ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ছাদের, ইউটিলিটি বিল্ডিং এর ছাদের এবং মূল ভবনের ছাদের জরাজীর্ণ পানি সরবরাহের পাইপ লাইন সমূহ পরিবর্তন করণসহ আনুষঙ্গিকের জন্য ১০ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মহোদয়ের কক্ষের মেরামত ও সংস্কারকরণের জন্য ১৫ লাখ টাকার কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২ এর ৩য় তলায় সিসিইউ এর পাশে ছাদের উপরে টিনের ছাউনী দিয়ে সিসিইউ ওয়ার্ড সম্প্রসারণকরনের জন্য ৪৫ লাখ টাকার কাজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলো মিটফোর্ড হাসপাতাল এর ১১ তলা ভবনের নীচতলায় জরুরী বিভাগের ওয়ার্ড, ডক্টরস রুম, সংলগ্ন ল্যাব সমূহ, করিডোর এবং বারান্দায় সিভিল ও স্যানিটারী সংস্কারসহ আনুষাঙ্গিক মেরামতের জন্য ২৯ লাখ ৯২ হাজার টাকার কাজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল এর ১১ তলা ভবনের নীচতলার ক্যাজুয়ালটি ওটি ও ওয়ার্ডের আধুনিকায়নের জন্য ২৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার কাজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের ১১ তলা হাসপাতাল ভবনের গাইনী, সার্জারী এবং কিং এডওয়ার্ড ভবনের সাধারন টয়লেট ব্লকে আর সি সি বেসিন স্থাপনের জন্য ৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকার কাজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল ঢাকার ১১তলা হাসপাতাল ভবনের ৩য় তলার স্পেশাল শুটি ৭ম তলার এন আই সি ইউ ৮ম তলার অর্থো বিভাগ, নিউরোলজি ওটি সংলগ্ন ডাক্তার ও নার্সদের কক্ষে ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও মেরামতের জন্য ১২ লাখ ৭১ হাজার টাকার কাজ রয়েছে।
চিঠিতে দেখা যায়, এই বরাদ্দের কাজ শেষ করে বিল পরিশোধ করার জন্য গত ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া ছিল। এই সময়ের মধ্যে কাজ সম্পাদন করে বিল পরিশোধ না করলে বরাদ্দকৃত অর্থ সরকারের কোষাগারে ফেরত যাবে। এই বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে সরকারের কোষাগারে ফেরত না যায় সেইজন্যই কাজ সম্পাদন না করে ৩০ জুনের মধ্যে ঠিকাদারকে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করে দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম। অসম্পন্ন কাজের বিল পরিশোধ করে পরে সেই কাজ সম্পূর্ন সম্পাদন করার বা না করার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। এতে তিনি ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।
অভিযোগ আছে মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম কাজ সম্পন্ন না করেই যে অগ্রীম বিল দিয়েছেন সেটা গোপন রাখার জন্য পরে যখন কাজ সম্পন্ন হয়েছে তখন কাজ সম্পন্নের প্রত্যয়ন পত্র নিয়েছেন। গণপূর্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, এইভাবেই প্রায় সকল নির্বাহী প্রকৌশলীই বিল পরিশোধ করে পরে প্রত্যয়ন পত্র নিয়ে কাজ বৈধ করেন। এভাবে তারা নিজেদের অবৈধ কাজকে বৈধতা দেন।
পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস) অনুযায়ী কাজ সম্পাদন না করে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করার ফলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও ঠিকাদার উভয়ের বিরুদ্ধেই বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্ত বা সাময়িক বরখাস্ত, আর্থিক জরিমানা, এবং সরকারের রাজস্ব ক্ষতিপূরণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।এদিকে মোহাম্মদ তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করার গুরুত্বর অভিযোগ উঠেছে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।