ইত্তেহাদ স্পেশাল

কক্সবাজার বন বিভাগের সারোয়ার জাহান শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক

1245
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বাঁকখালী রেঞ্জে ইতোপূর্বে দায়িত্বে থাকা রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেস্টার মোঃ সরওয়ার জাহান (বর্তমানে উপকূলীয় বন বিভাগ, চট্টগ্রাম এ কর্মরত সদ্য পদোন্নতি পাওয়া ডেপুটি রেঞ্জার) কর্তৃক “সুফল প্রকল্প”-এর বাস্তবায়নের নামে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং রোহিঙ্গাদের ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করে অবৈধভাবে কাজে নিয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে। বৈষম্য বিরোধী আপন্দোলনের সময় তার বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা আত্বসাতের অভিযোগ উত্থাপন করে পৃথক ৫টি গনস্বাক্ষরিত আবেদন হলেও তদন্ত কার্যক্রম তৎকালীন বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাস ও ডিএফও আনোয়ারের সহযোগিতায় ধামাচাপা দেয়ায় সংশ্লিষ্ট মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ ২১ বছর চাকুরিকালীন সময়ে তিনি যখন যে কর্মস্থলে নিয়োজিত থেকেছেন প্রতিটি কর্মস্থলেই চালিয়েছেন সীমাহীন লুটপাট। প্রায় শত কোটি টাকা এই দৗর্ঘ চাকুরি জীবনে তিনি অবৈধভাবে বনজ সম্পদ উজাড়ের মাধ্যমে উপার্জন করায় ডিপার্টমেন্টে তার নামই হয়েছে বনদস্যু সরোয়ার।

সরেজমিনে দৗর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর ভাতিজা পরিচয়ে দোর্দান্ত দাপুটে এ ফরেস্টার এর বাড়ী মিরেশ্বরাই উপজেলায়। সে ২০০৪ সালে চাকরী পেয়ে টাঙ্গাইল বন বিভাগে যোগ দানের পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২৫-০৫-২০১১ তারিখে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। তার পর থেকে লোভনীয় সব পোস্টিং হাতিয়ে নিয়ে ক্ষমতার জোরে পদুয়া চেক স্টেশনে কাটিয়ে দেয় ৬ বছর। শত কোটি টাকার গাছ ও মাটি পাচার, পাহাড় কাটা, বনভূমি বিক্রি ও জবরদখলে সহায়তা করা, পোল্ট্রী ফার্ম ও মাছের ফিসারী তৈরীতে সহায়তা, পানের বরজ তৈরীর জমি ও মাটি বিক্রি ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়ে বাধাহীন ভাবে। পদুয়া চেক স্টেশনে থেকে কক্সবাজার, বান্দরবান সহ ঐ এলাকার কাঠ পাচারকারদের সাথে লাইন দিয়ে বন উজাড় করেছে। তার সময়ে কেরানীরহাটে গড়ে উঠে প্রায় ৫০ টিরও অীধক ব্রিকফিল্ড। যার সকল জ্বালানী সে বন থেকে পাচার করে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। অনুসন্ধানে গেলে এখনো তার সব অপকর্মের প্রমান মিলবে। এরপরের ইতিহাস তার আরো উজ্জ্বল।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সেরা রেঞ্জ বাঘখালী রেঞ্জের দায়িত্ব হাতিয়ে নেয় সে। ১৫ তম গ্রেডের ফরেস্টার হয়েও ১০ গ্রেডের রেঞ্জ অফিসার পদ দখল করে ক্ষমতা ও টাকার বিনিময়ে। ধরাকে সরা জ্ঞান করে সে তার রেঞ্জের বনভূমির আয়তনের চেয়ে বেশী পরিমানে বনায়নের বাজেট হাতিয়ে নেয় সুফল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক গোবিন্দ রায় ও বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাসকে ম্যানেজ করে। ফলে যা হবার তা হয়েছে, বনায়নের নামে লুটপাট করেছে সে অবলীলায়। তার কর্মকালে ২৫৮০ হেক্টর বাগান সৃজনের বরাদ্দ নিয়ে সে বাগান সৃজন না করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকা। তার লুটপাটের অংশিদার সুফল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক গোবিন্দ রায় ও বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ঞ দাস এবং তার গডফাদার বন সংরক্ষক এস এম মনিরুল ইসলাম। গোবিন্দ রায় ও বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ঞ দাস এর নির্দেশে সে তার আয়ের বড় একটি অংশ ইসকন নামক সন্ত্রাসী সংগঠনের ফান্ডে জমা দিয়েছেন।

বনদস্যুখ্যাত সরোয়ার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ কে ব্যবহার করে টাংগাইল বন বিভাগের বিভিন্ন লোভনীয় পোস্টিং ভোগ করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চট্টগ্রাম সার্কেলে বদলী হয়ে আসে। এর পরে শুরু হয় আরো বেপরোয়া কার্যকলাপ। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বড়দুয়ারা চেকপোস্ট দীর্ঘদিন পোস্টিং ছিলেন, এরপর পদুয়া রেঞ্জের মত গুরুত্বপূর্ণ রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন। এই সমস্ত পোস্টিং এ প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার উপরে ঘুস দিয়ে পোস্টিং নেন। এগুলো পোস্টিং থেকে প্রায় ৮ কোটি টাকার উপরে অবৈধ টাকা ইনকাম করেন। পরবর্তীতে তাকে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগে বদলী করা হলেও ক্ষমতার দাপট ও টাকার বিনিময়ে বদলী অর্ডারকে তোয়াক্কা না করে পদুয়া রেঞ্জে বহাল তবিয়তে থেকে যায়। এর মধ্যে বদলী বাতিলের জন্য আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর সুপারিশ নিয়ে সেই আবেদন জমা দেন। কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বাকখালী রেঞ্জে ৩০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে পোস্টিং নেন। সে দীর্ঘ ৪ বছরের অধিক সময় ধরে একই রেঞ্জে পোস্টিং এ থাকেন। ক্ষমতার দাপট থাকায় কেউ তাকে বদলী করার সাহস পাইনি। এই দীর্ঘ ৪ বছরের অধিক সময় ধরে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর সুফল বাগান তার রেঞ্জে সৃজন করা হয়। প্রায় ৪৫ কোটি টাকার কাজ তার এই বাকখালী রেঞ্জে হয়। সে নিজে বাগানের কাজ গুলো করেছে। কোন বিট কর্মকর্তা কে টাকা না দিয়ে সে নিজে লেবার সর্দার দিয়ে কাজ গুলো করেছে। তার সময়ে বরাদ্দকৃত বাগানের অর্ধেক কাজ সে করেনি। বরাদদের অর্ধেক টাকা সে পুরোটা নিয়েছে। এই বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। তার নেতৃত্বে কক্সবাজার থেকে বিভিন্ন প্রকল্প ও চেকপোস্ট এবং বদলীর টাকা ফ্যাসিস্ট সরকারের ফ্যাসিস্ট বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাস এর কাছে যেত। তারই নেতৃত্বে বিপুল কৃষ্ণ দাস এর বদলী ঠেকানোর জন্য প্রায় ১ কোটি টাকা বিভিন্ন বিভাগের ফরেস্টারদের কাছ থেকে উঠানো হয়। উঠানো ঐ টাকা দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এর পোষ্যপুত্র ক্ষ্যত ও বন মন্ত্রী সাহাব উদ্দিন এর পুত্র জুম্মন কসাইর মাধ্যমে বদলী ঠেকান। পরবর্তীতে ৫ই আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাস এর বদলীর মাধ্যমে বিপুল সাম্রাজ্যের অবসান হয়।

উল্লেখ্য সুফল প্রকল্পের ১৫ কোটি টাকা খরচের যে ভাউচার তিনি ফাইলে উপস্থাপন করেছেন তা সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভুয়া ভাউচার বলে এতদ্বসংক্রানে তদন্তকারী এক জন উপ বন সংরক্ষক এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তিনি বলেন ভাউচারে যে সকল নাম উল্লেখ করা হয়েছে কাউকেই খুজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও গত ফেব্রুয়ারীতে তাকে বদলী করা হয় চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগে। সেখান থেকে তাকে উড়িরচর রেঞ্জের পূর্বের চর বিটে বদলী করার পর তিনি গত ৯ মাসে মাত্র ৪ দিন ঐ বিটে অবস্থান করেন। বাকী সময় চট্টগ্রামের মিরেরশরাইস্থ নিজ বাড়ীতে অবস্থান নিয়ে সরকারী বেতন-ভাতাদি গ্রহন করছেন। মিরেরশরাই থেকে কালাম, রফিক ও মাজেদ নামক ৩জন দালাল নিয়োগ দিয়ে পূর্বের চর বিটের প্রায় ৪৫০ একর জমি মোটা অংকের বিনিময়ে বিক্রি করে ফেলেছেন। বর্তমানে এই জমিতে থাকা বন উজাড় করে সেখানেই বর্ষা মৌসমে ধান চাষ চলছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের একজন এসিএফ সত্যতা স্বীকার করেছেন। ভয়ংকর বনদস্যু সারওয়ার জাহান, ফরেস্টার এর এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করেনি কেউ। তার অধিনস্থ স্টাফদের সে এসব থেকে একটি টাকারও চা খেতে পর্যন্ত দেয়নি বলেও একাধিক বন কর্মচারী জানিয়েছেন। ফলে তারা জুলাই বিপ্লবের পর একযোগে সব তথ্য প্রমান সহ প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসেন চৌধুরীর বরাবরে অভিযোগ দায়ের করে। সেখানেও টাকার বিনিময়ে সেসব অভিযোগ গায়েব করে ফেলে বনদস্যু সারওয়ার জাহান, ফরেস্টার। তাকে বন অপরাধ ধামাচাপা দিতে সহায়তা করে হেড অফিসের জনৈক হেডক্লার্ক। তবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে, স্থানীয় ভূক্তভোগি জনসাধারণ, বননির্ভর জনগোষ্টি ও তার অধিনস্থ স্টাফদের দায়ের করা অপর সাতটি অভিযোগ বন অধিদপ্তরে, দুদকে ও বন অঞ্চলে তদন্তাধীন আছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরেস্টার সারওয়ার জাহান ক্ষমতার দাপটে সুফল প্রকল্পের বনায়নের নামে ২৫ কোটি টাকা আত্মস্মাৎ, লোভনীয় পোস্টিং, বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ঞ দাস এর দালালি ও কালেক্টিং এজেন্ট এর ভূমিকা পালন, চামচামী ও বনজ সম্পদ পাচারের সহায়তা, বনায়নের নামে পুকুর চুরি, পদুয়া স্টেশনের বনভূমি বিক্রি, পাহাড়ের মাটি ও বালু পাচার, বাঘখালী রেঞ্জের বনের জমি বিক্রি, বাঘখালী রেঞ্জের বনের জমিতে তামাক চায়ের ইজারা, বাঘখালী রেঞ্জের বনের জমিতে অবৈধ উপায়ে ঘরবাড়ি নির্মানের অনুমতি দেওয়া, বন অগ্রিমের ভূয়া বিল ও ভাউচার তৈরী করে আত্মস্মাৎ, বালি ও মাটি কাটার ট্রাক, কাঠবাহি ট্রাক আটক করে সিওআর এর নামে অর্থ আদায় ও গ্রাস করা, বনায়ন ও নার্সারীর গোবর, মাটি, সার ও অন্যান্য সামগ্রীর ভূয়া বিল ও ভাউচার করে তা ভাগাভাগি করা, বনায়নের বাগান রক্ষনাবেক্ষণ ও শুন্যস্থান পুরনের টাকা মেরে দেওয়া, বাগানের ওয়াচার এর টাকা, ফায়ার লাইন কর্তনের টাকা ভূয়া বিল ও ভাউচার করে খেয়ে ফেলা, নিয়োজিত লেবারদের বিল মেরে দেওয়া সহ নানান অপকর্মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে। তার এসব সম্পদের মাধ্যমে সে চট্টগ্রাম ও মিরশ্বরাই এ তার ৫ টি বহুতল ভবন ও দোকান আছে। তার নামে সৌদিয়া, পূর্বানী ও পুরবী পরিবহনে কয়েকটি বাস গাড়ী আছে। তার ও তার স্ত্রীর ব্যবহারের জন্য প্রিমিও সহ দুটি বিলাসবহুল কার আছে। ব্যাংকে নামে, বেনামে ও আত্মীয়দের নামে বিপুল পরিমানে অর্ত গচ্ছিত আছে। তার নিজ এলাকায়, কক্সবাজারে ও উখিয়ায় বাড়ি ও দোকান সহ জমি ক্রয় করেছে। কক্সবাজারে হোটেলের শেয়ার আছে।

এসব তথ্য তার কর্মস্থল পদুয়া রেঞ্জ, উখিয়া ও বাঘখালী রেঞ্জ সহতার সকল কর্মস্থলের স্টাফ, জনসাধারণ ব্যাপকভাবে জ্ঞাত। তার বৈধ লেনদেনের চিত্র তার ও তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকের সাতটি ও শ্বশুরালয়ের লোকদের নামের পাচটি একাউন্ট, তারও তার স্ত্রীর বিকাশ ও নগদ একাউন্ট চেক করলে পাওয়া যাবে। এ ভয়ংকর বন সন্ত্রাসীর বনায়নের প্রকৃত চিত্র পেতে হলে ড্রোন দিয়ে মনিটরিং করা দরকার। তা নাহলে সহজে যাওয়া যায় এমন স্থানের কিছু গাছের চারা দেখিয়ে সে সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করবে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.