স্বাস্থ্য

ডেঙ্গুতে ২৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু

prothomalo import media 2019 06 23 7dfaef0fd570fe75f01a0109c1784376 5d0f5e2655f12
print news

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের সাত মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হলো ২৮৩ জনের। এটি দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে এক বছরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা। এর আগে গত বছর দেশে ডেঙ্গুতে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।

কীটতত্ত্ব, রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, এডিস মশা নির্মূল ও রোগী ব্যবস্থাপনায় জনস্বাস্থ্যের পরামর্শ উপেক্ষিত হচ্ছে। শুরু থেকেই রয়েছে সমন্বিত উদ্যোগের ঘাটতি। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করছে। ফলে আগস্ট, সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু সংক্রমণ আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার অন্য বছরের তুলনায় বেশি। আর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং মারা গেছেন শক সিনড্রোমে। বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার ছিল শূন্য দশমিক এক থেকে শূন্য দশমিক দুই শতাংশের মধ্যে। এবার সেই হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এ বছর মোট মৃত্যুর ৬৪ শতাংশ নারী এবং ৩৬ শতাংশ পুরুষ। তবে আক্রান্ত বেশি পুরুষ, ৫৫ শতাংশ। শিশু আক্রান্তের হার ২১ শতাংশ।

২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওই বছর ডেঙ্গুতে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০০২ সালে মৃত্যু হয় ৫৮ জনের। এরপর গত ১৫ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৫ এর নিচে। তবে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ১ লাখ ১ হাজার ৩৪৫ জন। এর মধ্যে মারা যান ১৭৯ জন।

দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে ২০১৪ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল সবচেয়ে কম। ওই বছর ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যু নেই, তবে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৭৫ জন। ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের মধ্যে আবারও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ৬২ হাজার ৩৮২ জন আক্রান্ত হন এবং মৃত্যু হয় ২৮১ জনের। চলতি বছর প্রথম সাত মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ওই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল। এ বছর এই পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯ হাজার ৭১৬ জন। দৈনিক আক্রান্তের যে তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দিচ্ছে তাতে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগরীর ১১টি এলাকা থেকে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছেন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ছয়টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পাঁচটি এলাকা রয়েছে। ডিএসসিসির যেসব এলাকা থেকে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে আসছেন, তার মধ্যে রয়েছে যাত্রাবাড়ী, মুগদা, কদমতলী, জুরাইন, ধানমন্ডি ও বাসাবো। আর ডিএনসিসির উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, তেজগাঁও ও বাড্ডা থেকে ডেঙ্গু রোগী বেশি যাচ্ছেন হাসপাতালে।

এক দিনে আরও ১০ মৃত্যু

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৫৮৯ জন। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৪৮৮ জনই ঢাকার বাইরের। ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১০১ জন রোগী। এ নিয়ে এই বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৭১৬ জনে। এর আগে শুধু ২০১৯ এবং ২০২২ সালে এর চেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বুধবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ হাজার ২১০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ৬৫০ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৪ হাজার ৫৬০ জন। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। জুনে যেখানে পাঁচ হাজার ৯৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, সেখানে জুলাইয়ে ভর্তি হন ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন রোগী। জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হলেও জুলাইয়ে ডেঙ্গুতে প্রাণ যায় ২০৪ জনের। আর আগস্টের প্রথম তিন দিনে ৭ হাজার ৮৮৪ জন ভর্তি হন হাসপাতালে, মৃত্যু হয়েছে ৩২ জনের।

এর আগে গত জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে ১ হাজার ৩৬ জন এবং জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দু’জন, মে মাসে দু’জন এবং জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *