দুর্নীতির পক্ষে কুবি ভিসি’র সাফাই, সাংবাদিককে বহিষ্কার


কুবি প্রতিনিধি
দুর্নীতি বিষয়ে গত ৩১শে জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের ‘নবীন বরণ ও বিদায়’ অনুষ্ঠানে ভিসি অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গেয়ে মন্তব্য করেন। বিষয়টি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির অর্থ সম্পাদক রুদ্র ইকবালকে সাময়িক বহিষ্কার আদেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানায়। আদেশে বলা হয়, গত ৩১শে জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ‘নবীন বরণ ও বিদায়’ অনুষ্ঠানে ভিসি প্রফেসর ড. এএফএম আবদুল মঈন এর বক্তব্যকে বিকৃত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তমূলক মিথ্যা তথ্য প্রচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষণ্ন্ন করার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদন ও সুপারিশে ২রা আগস্ট অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের সভায় অনুমোদিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো।’
এ বিষয়ে রুদ্র ইকবাল বলেন, ‘আমাকে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে কল দেয়া হলে আমি গিয়ে আমার বহিষ্কারাদেশ নিয়ে আসি, এর আগে আমার কাছে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন থেকে কোনো কিছু জানতে চাওয়া হয়নি। আর আমি সম্পূর্ণ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করেছিলাম।’ এদিকে প্রক্টরিয়াল বডির সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমরা প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছি। তবে আমরা কোনো সাংবাদিককে বহিষ্কারাদেশের জন্য সুপারিশ করিনি। আমরা শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারাদেশ দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আইনে বা নিয়মে বহিষ্কারাদেশ দিয়েছেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে এই আদেশ দেয়া হয়েছে। নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।
ইকবালকে বহিষ্কারের নিন্দা জানিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তথ্য প্রকাশের কারণে একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা ‘শ্যুট দ্য মেসেঞ্জার’ বা বার্তাবাহককে স্তব্ধ করার চর্চার উদাহরণ। একই সঙ্গে এটি ক্ষমতার অপব্যবহারের পরিচায়ক। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত এই প্রতিশোধমূলক ও অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিঃশর্ত প্রত্যাহার করা। এদিকে ভিসি অধ্যাপক ড. এএফএম আব্দুল মঈনের সঙ্গে একাধিক সংবাদকর্মী মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে বিষয়টিকে ক্ষমতার অপব্যবহার বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সংবাদকর্মীরা। প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৩১শে জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ‘নবীন বরণ ও বিদায়’- অনুষ্ঠানে ভিসি বলেন- ‘অনেকেই বলেন দেশে দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না। কিন্তু আমি বলবো উল্টো কথা। দেশে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই উন্নতি হচ্ছে। এটা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন। যে ঘুষ খায়, সে পদ্মা পাড়ে যায় ইলিশ খেতে। এতে পদ্মা পাড়ের গরিব মানুষেরা ধনী হচ্ছে। দুর্নীতি এভাবে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তাই অর্থনীতিবিদগণ দুর্নীতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন না। তবে যারা পলিটিক্যাল ইকোনমি নিয়ে কাজ করেন তারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে থাকেন। নৈতিকতার জায়গায়ও এটি প্রশ্নবিদ্ধ। তবে অর্থনীতির জায়গায় থেকে যদি বলো, দুর্নীতি কখনোই উন্নয়নের জন্য বাধা নয়।’