ঢাকা ফিচার বাংলাদেশ

খাদিজাতুল কুবরার মায়ের ৩৬৫ নির্ঘুম রাত

kubra samakal 64ea9e676046e
print news

‘ছোটবেলা থেকেই মেয়েটা আমার সঙ্গে ঘুমাইত। এখন পাশে হাত দিলেই দেখি বেড খালি। এরপর আর ঘুম আসে না। মাঝরাতে ঘুম থেকে জেগে কান্না করি। না ঘুমিয়েই ভোর হয়। এমন অনেক রাত গেছে সবাই না ঘুমিয়ে কান্নাকাটি করেছি। ওর গ্রেপ্তারের পর ঠিকঠাক ঘুমাতে পারিনি এক দিনও। একটা বছর হয়ে গেল– শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক সব দিক থেকেই শেষ হয়ে গেছি।’

কথাগুলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার মা ফাতেমা বেগমের। শনিবার অশ্রুসিক্ত চোখে  তিনি এ কথা বলেন।

খাদিজার গ্রেপ্তারের পর পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে তার পরিবার। বড় বোন সিরাজুম মনিরা ও ছোট ভাই ফারদিন হাসানের জীবনও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বড় বোন স্নাতকোত্তর আর ছোট ভাই উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েন। খাদিজার গ্রেপ্তারের পর পাশের মানুষ তো বটেই, এমনকি পরিবার ও আত্মীয়স্বজনও ভয়ে তাদের এড়িয়ে চলছেন।

আরও পড়ুন……..
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: বিচারের আগেই কারাগারে খাদিজার এক বছর

 

ফাতেমা বেগম বলেন, এই মামলার কারণে আত্মীয়স্বজন, পরিবারের লোকজন আমাদের এড়িয়ে চলেছে। অনেকে তো ফোন করাই বন্ধ করে দিয়েছিল মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার ভয়ে। জীবনে কখনও থানা পুলিশ কোর্টে যাইনি। মেয়ে গ্রেপ্তারের পর কোথায় যাব, কার কার কাছে গেলে ভালো হবে কেউ একটু পরামর্শও দেয়নি। বড় মেয়েই সব করেছে।
খাদিজার মা বলেন, ‘মানুষ বলে মেয়েটাকে কীভাবে বিয়ে দেব? আমি বলি, আমার মেয়ে তো আর সন্ত্রাসী বা স্মাগলার না।’

খাদিজার বোন সিরাজুম মনিরা বলেন, ‘এক বছরে জীবন থেকে অনেক কিছু চলে গেছে। অনেক কাছের মানুষ দূরে চলে গেছে। অনেক কিছু হারিয়েছি।’

পরিবারের সদস্যরা জানান, ছোটবেলা থেকেই মেধাবী আর পড়াশোনায় মনোযোগী খাদিজা। ফলাফলও ছিল চমকপ্রদ। স্বপ্ন দেখতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। তবে সেই স্বপ্ন এখন কার্যত ধূলিসাৎ। কবে তিনি মুক্তি পাবেন, ফিরতে পারবেন লেখাপড়ায়, তা আঁধারে ঢাকা।

জামিন না হওয়ায় দ্বিতীয় বর্ষেই আটকে আছে খাদিজার শিক্ষাজীবন। কারাগারে থাকায় সুযোগ হয়নি পরীক্ষা দেওয়ার। তবে সর্বশেষ চতুর্থ সেমিস্টারে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হলেও চিন্তিত শিক্ষাজীবন নিয়ে। তিনি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বিভাগীয় শিক্ষকরা বলছেন, কোনো শিক্ষার্থী টানা দুই বছর ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ না নিলে ছাত্রত্ব বাতিল হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ধার-দেনায় বিপর্যস্ত পরিবার

গত এক বছরে খাদিজার জন্য আইনি লড়াইয়ে ৪ লাখের বেশি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, ‘মেয়েকে মুক্তির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। অনেক টাকা খরচ করেছি কিন্তু লাভ হলো না। প্রতি মাসে খাদিজার পেছনে ১৪-১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর। ওর বাবা বিদেশ (কুয়েত) থাকে। পরিবারে আয়-রোজগারের আর কেউ নেই। আর কুলাতে পারি না। জেলখানায় মেয়েকে দেখতে গেলে পদে পদে ঘুষ দিতে হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ খাদিজার মুক্তির ব্যাপারে জবি প্রশাসন কোনো সুপারিশ ও সহযোগিতা করেনি বলে জানান তার মা। ফাতেমা বেগম বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিনাদোষে জেল খাটছে অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ভূমিকা রাখছে না। উল্টো প্রক্টর অপমানজনক কথা বলেছেন।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামাল বলেন, খাদিজার মামলা রাষ্ট্রদ্রোহের। আর ঘটনা ও মামলা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের বিষয়। আদালত থেকে মুক্ত হয়ে এলে সে পড়ালেখার সুযোগ পাবে। তখন আমরা দেখব। এ নিয়ে কাউকে অপমানের ঘটনা ঘটেনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *