অর্থনীতি

১৮ টাকার আলু ৫৫ টাকা

potatoes 2309101743
print news

এবার আলু মজুতের সরকারি তথ্যকে চ্যালেঞ্জ করল হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি দাবি করেছে, সরকার আলু মজুতের যে তথ্য দিচ্ছে তা সঠিক নয়। কারণ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কোল্ড স্টোরেজের ২০ শতাংশ খালি রয়েছে। আর এ কারণে বাড়ছে আলুর দাম। এ ছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীরা আলু মজুত করছে বলেও মনে করে সংগঠনটি।

রবিবার রাজধানীর কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন সম্মেলন কক্ষে আলুর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, মুনাফালোভী একটি চক্র আলু মজুত করে দাম বৃদ্ধি করছে। এখানে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের কোনো দায় নেই। তবে কারা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়াচ্ছে সরকার চাইলে সেসব তথ্য আমরা দেব। উল্লেখ্য, বর্তমান রেকর্ড মূল্যে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলু মানভেদে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, কোল্ড স্টোরেজ শেড থেকে আলু বের হয় ১৮ টাকা কেজি দরে যা খুচরা বাজারে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, পরিবহন, আড়ত ও খুচরা বিক্রেতাদের খরচসহ সব মিলিয়ে এ আলু ভোক্তাপর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩৬ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। আমরা মনে করি মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে যারা আলু সংরক্ষণ করেছে তারা মনে করছে আলুর মজুত কম রয়েছে। এজন্য তারা আলুর দাম বাড়াচ্ছে। সদস্যদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আলু গত বছরের তুলনায় কম সংরক্ষিত রয়েছে। তবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী যে আলু সংরক্ষিত আছে তা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ আলুর সরবরাহ থাকবে বাজারে। কারা আলুর দাম বৃদ্ধি করছে, কারা সিন্ডিকেট করে আলু মজুত করছে তাদের তথ্য আমরা বিভিন্ন সংস্থাকে দিয়েছি। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে। এখন আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। হিমাগার মালিকদের যে একতরফা দোষারোপ করা হচ্ছে এটা সঠিক নয়। সরকার আলু মজুতের যে তথ্য দিচ্ছে তা সঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা আলু ধীরে ছাড়ছে, ফলে বাজারে দাম বাড়ছে। কেন দাম বাড়ছে সেটা সরকারের সংস্থাগুলোকে আমরা বলেছি। এই দাম কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে সেটা সরকারকে ভেবেচিন্তে করতে হবে। মোবাইল কোর্ট বা হয়রানিমূলক ভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না বলেও মত দিয়েছেন কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের এই নেতা।

এদিকে, গত জুলাই মাসে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আলুর উৎপাদন ও দাম নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তা কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই প্রতিবেদনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কৃত্রিমভাবে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়- ১৫ টাকার আলু ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে। সাধারণত কৃষকের হাতে আলু শেষ হওয়ার পর জুন থেকে হিমাগারের আলু বাজারে সরবরাহ আসতে থাকে। কিন্তু এই সরবরাহ ঠিকভাবে হচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারে আলুর উৎপাদন খরচ হয়েছে ১০.৫০ টাকা, যেটা সব খরচ মিলে খুচরা বাজারে ৩২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু কৃত্রিমভাবে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আলুর দাম বৃদ্ধি করছে, যা এখন ৪৫-৫০ টাকায় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এর জন্য অবশ্য হিমাগার মালিকদেরও দায়ী করা হয়েছে। কারণ হিমাগার মালিকরা চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত পরিমাণ আলু বাজারে ছাড়ছে। জানা গেছে, এ বছর আলুর উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ১২ লাখ টন, যেখানে স্থানীয় চাহিদা ৯০ লাখ মে টন। চাহিদার বিপরীতে ২২ লাখ টন আলু বেশি উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও আলুর দাম বাড়ছে। এ ছাড়া গত বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রায় দেড় লাখ টন বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। তবে সরকারি এই তথ্যকে এবার চ্যালেঞ্জ করে বসল হিমাগার মালিকরা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত আলুর দাম বাড়াতেই হিমাগার মালিকরা এখন ভুল তথ্য উপস্থাপন করছেন। এখন হিমাগার মালিকরাই কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি আলু কিনে সংরক্ষণ করে তা সুবিধামতো সময়ে বাজারে ছাড়েন। এবার হিমাগার মালিকদের যোগসাজশে অস্থির হয়ে পড়ছে আলুর বাজার। দ্রুত হিমাগারগুলোতে অভিযান চালিয়ে বাজারে আলু ছাড়ার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে হিমাগারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে, অধিদপ্তর থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশকিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে-হিমাগার থেকে চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত আলু খালাস করতে হবে। আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এর সঙ্গে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে আলুর বাজার অস্থির করার চেষ্টা করবে তাদেরকে বিভিন্ন তদারকি সংস্থা এবং পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলেও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *