ঢাকা বাংলাদেশ

২২৩ কোটি টাকা উদ্ধার করলেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক

04e0ce2103400bceaaf92965dfcd2cf7 650324d69ffe0
print news

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) দুর্নীতিবাজদের থাবা থেকে উদ্ধার করলেন ২২৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ থেকে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে।

এর সঙ্গে জড়িত দুই সার্ভেয়ার এবং এক তহশিলদারকে ইতিমধ্যে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত বন বিভাগ ও গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে জালিয়াতির তথ্য উঠে এসেছে। এখন উদ্ধারকৃত টাকা পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যয় হবে না অর্থ বিভাগে ফেরত যাবে সে বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে পত্র দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
তদন্ত কমিটি অধিগ্রহণের আগে প্রকল্প এলাকার ধারণ করা চিত্রের ভিডিও সংগ্রহ করে। এতে দেখা গেছে, নির্ধারিত জমির অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো বাড়িঘর, গাছপালা ছিল না। একই পরিমাণ জমি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের তালিকায় একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার এসেছে। যাকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে জমি তার নামে নামজারি হয়নি। তিনি জমির রেকর্ডীয় মালিকও নন। ইচ্ছে করে অসৎ উদ্দেশ্যে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে অবকাঠামো। যেখানে সাধারণ টিনশেড ঘর ছিল সেখানে ৬ তলা ভবন দেখানো হয়েছে। গাছপালা অস্বাভাবিক হারে বেশি দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি শতাংশ জমিতে মাঝারি সাইজের সর্বোচ্চ ১৫টি গাছ থাকতে পারে। সেখানে প্রতি শতাংশ জমিতে গাছ দেখানো হয়েছে ৮০ থেকে ৯০টি। অনেক ক্ষেত্রে জমির চেয়ে গাছের দাম বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। যার কোনো জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি তাকে গাছপালার মালিক দেখিয়ে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে এ ধরনের আরও অনেক ঘটনাই ফাঁস হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ঝোটন চন্দ্রকে এ তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী এবং জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা। কমিটি আগের প্রাক্কলন বাদ দিয়ে সংশোধিত প্রাক্কলন তৈরির জন্য সরেজমিন কাজ শুরু করে।

তদন্ত শেষে আগের প্রাক্কলন বাদ দিয়ে সংশোধিত প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়। নতুন প্রাক্কলনে ৩৫৫ কোটি ৭১ লাখ ৪ হাজার ১৩৫ টাকার পরিবর্তে ১৩২ কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৬ টাকা অধিগ্রহণ মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এতে ২২৩ কোটি ৫৭ হাজার ৪ হাজার ১৪৯ টাকা নির্ঘাত আত্মসাৎ থেকে বেঁচে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মা বহুমুখী সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ১৮টি মৌজার সাড়ে ২৮ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষে জেলা প্রশাসক ওই জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেন। অধিগ্রহণকৃত জমি, পুকুর, গাছপালা এবং ঘরবাড়ির মূল্য বাবদ ৩৫৫ কোটি ৭১ লাখ ৪ হাজার ১৩৫ টাকা জেলা প্রশাসকের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অধিগ্রহণের আদেশ জারি করে জেলা প্রশাসন। অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের অনুকূলে অবকাঠামো ও গাছপালার মোট ৫২টি এলএ (ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন) চেক প্রদান করা হয়।

চেক প্রদানের পরপরই বিষয়টি নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে। জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্তদের অনুকূলে ইস্যু করা চেকগুলো বাতিলের জন্য ব্যাংকে মেইল পাঠান। জেলা প্রশাসনের চিঠি পেয়ে ব্যাংক এলএ কেসের বিপরীতে ইস্যুকৃত চেকগুলো বাতিল করে। পরে ভূমি অধিগ্রহণে জাল-জালিয়াতির বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে বরাদ্দের টাকা বেঁচে যাওয়ায় নিতে চাচ্ছেন পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ সড়ক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক। তিনি ১৩ এপ্রিল ২২৩ কোটি ৭০ লাখ ৪ হাজার ১৫৭ টাকা প্রকল্পের হিসাবে জমা দেওয়ার জন্য মাদারীপুরের ডিসিকে পত্র দিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মারুফ রশিদ খান বলেন, ডিসি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনে মাঠ প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করেন। আমি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অবহিত করা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন হবে না। সে কারণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্তের জন্য পত্র দেওয়া হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *