কুড়িগ্রামে সর্বজন শ্রদ্ধেয় সুব্রত ভট্টাচার্য’র ৮০ তম জন্মদিনে সম্মাননা প্রদান


এম জি রাব্বুল ইসলাম পাপ্পু ,কুড়িগ্রাম :
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ডি এম একাডেমির সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, সমাজসেবী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুব্রত ভট্টাচার্যের
৮০ তম জন্মদিন পালন করা হয়েছে। তারুণ্য অমর । তারুণ্যের কোনো মৃত্যু নেই তারুণ্য মানে সূর্য । সূর্য মানে আলো । আলো মানে আগুন ।আর আগুন মানে হচ্ছে জ্ঞান ।সেই জ্ঞানকে পুঁজি করে যে মানুষটি আজ সর্বজন শ্রদ্ধেয় , সেই আগুনের পরশমণির ছোঁয়ায় যে মানুষটি আজ তারুণ্যের ভরা ভাদরে ভেসে বেড়াচ্ছেন , দীর্ঘ ৮০ বছর ধরে যে মানুষটি তারুণ্য সাধক বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের গানকে কন্ঠ , হৃদয় , মেধায় ও মননে ধারণ করে প্রজ্ঞায় প্রস্ফুটিত হচ্ছেন তিনি সুব্রত ভট্টাচার্য । সুতরাং সুব্রত ভট্টাচার্যের তারুণ্য কখনোই স্তিমিত হবার নয় , হতে পারেনা ।
১৯৬০ সালে নাগেশ্বরী ডি এম একাডেমি থেকে এস. এস. সি , ১৯৬২ সালে কারমাইকেল কলেজ , রংপুর থেকে এইচ. এস. সি পাশ করে ১৯৬৪ সালে তাঁর দ্বিতীয় বন্ধু কর্মযুদ্ধের সাথে পরিচয় ঘটে । বি. এস. সি পাশ করার আগেই তাঁর বাবা, সেই সময়ের প্রখ্যাত পন্ডিত স্বর্গীয় চপল কৃষ্ণ ভট্টাচার্যের নির্দেশে তাঁকে ভিতরবন্দ জে ডি একাডেমিতে শিক্ষক হিসেবে চাকুরি গ্রহণ করতে হয় । এটি তাঁর প্রথম চাকুরি । একদিকে চাকুরি অন্যদিকে পড়ালেখা দুটোই সামলানো অত্যন্ত কঠিন হলেও ১৯৬৫ সালে তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে বি . এস . সি পাশ করেন ।
এরপর ভিতরবন্দ জে ডি একাডেমিতে মাত্র এক বছর চাকুরি করে ১৯৬৫ সালে তাঁর শিক্ষাগুরু , তৎকালীন প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদ মরহুম আলহাজ সাইফুর রহমানের আদেশে তাঁকে নাগেশ্বরী ডি এম একাডেমিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ গ্রহণ করতে হয় । যদিও বি . এস . সি পাশ করার পর তাঁর ভীষণ ইচ্ছে ছিল শহরকেন্দ্রিক হবার । কিন্তু তাঁর বাবা ও শিক্ষাগুরুর আদেশ অমান্য করা তাঁর পক্ষে কোনোক্রমেই সম্ভব হয়ে ওঠেনি । এজন্য সেসময়ে ঐ দুজন মানুষকে তিনি মনে মনে শত্রু ভেবেছিলেন । কিন্তু শেষের দিকে এসে যখন সকল মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তাঁকে গ্রাস করে ফেল্ল তখন তিনি প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন , ” আমার বাবা স্বর্গীয় চপল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য আর আমার শ্রদ্ধেয় স্যার মরহুম আলহাজ সাইফুর রহমানের নির্দেশ সেদিন যদি আমি অমান্য করতাম তাহলে আজ এত মানুষের ভালোবাসা আমি কোনোদিনই পেতাম না ।”
যাহোক, শিক্ষক হিসেবে সুব্রত ভট্টাচার্য ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় । ছাত্রদের শুধু ভালোবাসতেন, করতেন না কোনো বেত্রাঘাত ।যদিও সেসময়ে শিক্ষকগণের মাঝে ছিল ছাত্রকে বেত্রাঘাতের তীব্র প্রতিযোগিতা । হয়তো ছাত্রদের প্রতি তাঁর এই ভালোবাসাই তাঁকে আজ মহীয়ান করে তুলেছে । প্রিয় পাঠক , এখানে ছোট্ট একটি ইতিহাস আছে । ইতিহাসটি না বললে হয়তো এই লেখা অসম্পূর্ণ থাকবে । বলছি , সুব্রত ভট্টাচার্য যেদিন শিক্ষক হয়ে প্রথম ডি এম একাডেমিতে ঢুকবেন, সেদিন ডি এম এর গেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রায় ৮০ বছরেরে একজন বৃদ্ধ । এই বৃদ্ধ মহৎ মানুষটি তাঁকে হঠাৎ ডেকে বলেছিলেন, ” বাপোই মাস্টার হোছিস্ ভাল্ কতা । শোন্ , ছাওয়া গুল্যাক ব্যান ডাংগাইস, ? ডাংগাইস ন্যা । বুচ্ছিস্ ? মহব্বত করিস ।” নাম না জানা এই বৃদ্ধটিই তাঁর একমাত্র ভালোবাসা ও মহব্বত গুরু ।যে গুরুর জন্যে এই মুহূর্তে সুব্রত ভট্টাচার্য গুরু থেকে মহাগুরু হতে চলেছেন ।
অবশেষে ২০০৫ সালে তাঁর চাকুরিজীবনের সমাপ্তি ঘটলেও তৎকালীন সরকার বাহাদুর পুরস্কার স্বরুপ তাঁকে আরো দুই বছর চাকুরির মেয়াদ বাড়িয়ে দেন ।
সর্বজন শ্রদ্ধেয় সুব্রত ভট্টাচার্য ৮০ তম জন্মদিনে গ্রীন ইকো থেকে আজ সন্ধ্যায় কুড়িগ্রামের স্বনামধন্য একুশে পদক প্রাপ্ত আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকনের প্রতিষ্ঠিত উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে আজ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এসময় গ্রীন ইকো কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সদস্য ছাড়াও এস এম আব্রাহাম লিংকন, বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনর রশীদ লাল, অধ্যাপক সুইটি ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।