সাঁকোই ভরসা ২১ গ্রামের মানুষের


মাদারীপুর সদর উপজেলার ২১ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো। সেই সাঁকো দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়তই আড়িয়াল খাঁর শাখা নদী পাড়ি দিতে হয় এলাকাবাসীকে। সাঁকোটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। দীর্ঘ দুই দশক ধরে এভাবেই ভোগান্তি নিয়ে পথ পাড়ি দিচ্ছে এলাকার শত শত মানুষ। ঝাউদি ইউনিয়নের হোগলপাতিয়া, বাংলাবাজার, মাদ্রা বাজার ও তালতলা গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁর শাখা নদী পাড়ি দিতে এই ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে দীর্ঘ দুই দশক ধরে। নড়বড়ে সাঁকোটি দিয়ে হেঁটে কোনো রকমে পারাপার হওয়া গেলেও কোনো যানবাহন কিংবা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে পার হওয়া যায় না।
জানা যায়, জেলার সদর উপজেলার হোগলপাতিয়া, চর হোগলপাতিয়া, বাংলাবাজার, চর ব্রাহ্মহ্মন্দী, তালতলা, মাদ্রা, উত্তর বোতলা, পশ্চিম মাদ্রা, কালাইমারা, টুমচর, সস্তাল, বাজার চর, বালাকান্দি, ব্রিজ বাজারসহ ২১ গ্রামের মানুষের উপজেলা সদরসহ জেলার অন্যান্য স্থানের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বাঁশের সাঁকোটি। বর্ষা আসলে নৌকা দিয়ে এ পথ পার হতে হয়। শহরে যেতে হলে তিনটি সাঁকো পাড়ি দিতে হয় এলাকাবাসীকে।
স্থানীয়রা উদ্যোগ নিয়ে এই খালের ওপর ২০০ মিটার বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করেন। এর পর থেকে তারাই প্রতি বছর এটি মেরামত করেন। খালের দুই পাড়ে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাঁশের সাঁকোটি পার হতে গিয়ে বৃদ্ধ ও শিশুরা প্রায়ই পড়ে গিয়ে আহত হন।
এলাকার শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এই সাঁকোটির কারণে এলাকার উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণ ও রোগীদের জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে পড়তে হয় বড় ধরনের বিপদে। এতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। সাঁকো না থাকায় শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই খালের ওপর সেতু নির্মিত হলে পাল্টে যাবে দুই পাড়ের হাজারো মানুষের জীবনযাত্রা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচন শেষ হলে তা আর বাস্তবায়ন করেন না।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাদারীপুর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের চর হোগলপাতিয়া ও বাংলাবাজার গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই সাঁকো। গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসায় যাতায়াত করছে।
স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর জানায়, বাঁশের সাঁকো পাড় হয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে তাদের ভয় করে। তারপরও যেতে হয়। প্রধানমন্ত্রী যেনো তাদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে এখানে একটি সেতু করে দেন।
ঝাউদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আবুল হাওলাদার বলেন, এখানে সেতু নির্মাণে আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) মাধ্যমে সেতু নির্মাণের সুপারিশ করা হবে।
এলজিইডির মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন বলেন, ১০০ মিটারের চেয়ে বড় আকারের সেতু নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প প্রয়োজন। এই খালের ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদন হলে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।