চরবাংলা দিয়ারা জরিপে ৩৫৭টি খতিয়ানে ৩০ বিধিতে আপত্তি দায়ের


সাইফুল ইসলাম ,বাউফল :
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা ভূমি প্রশাসনের পক্ষে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের তহশিলদার গতকাল দিয়ারা সেটেলমেন্টে ৩৫৭টি খতিয়ানের বিরুদ্ধে আপত্তি দায়ের করেছেন। দিয়ারা জরিপে যাদের নামে খতিয়ান হয়েছে তারা চরবাংলার জমি মালিক নন, মালিক সরকার। সুতরাং সরকারের জমি অবৈধভাবে বন্দোবস্ত বা বেহাত হবে এটা হতে দেয়া হবে না। তাই আপত্তি দেওয়ার উদ্দেশ্য’’
প্রেক্ষাপট হচ্ছে, উপজেলার চর বিশ্বাস ইউনিয়নের বুড়াগৌরাঙ্গ নদী থেকে জেগে ওঠা চর বাংলা। ১৯৬০ দশকের দিকে জেগে ওঠে। সরকার চরের মাটি শক্ত করার জন্য বনবিভাগকে গাছ লাগানোর দায়িত্ব দিয়ে থাকে। বনবিভাগ গাছ লাগানোর পাশাপাশি কথিত একটি চর্চা ম্যাপের মাধ্যমে ৭০ দশকের মাঝামাঝি সময় এই চরে কিছু লোকজনকে লিজ প্রদান করে থাকে। যা ছিলো বনবিভাগের এখতিয়ার বহি:র্ভূত। ৮০ দশকের দিকে এবং ২০০১-২০০৫ সালে সরকার বাহাদুর ভূমিহীনদের মধ্যে লিজ প্রদান করেছে। যার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
বর্তমানে চরবাংলা ৬শত-৭শত ভূমিহীন পরিবার বসবাস করছে দীর্ঘ প্রায় ২৫-৩০ বছর যাবৎ। এই চরে পূর্বে যাদের বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে তারা প্রভাবশালী, ভূমিহীনের সংখ্যা খুবই নগণ্য। শোনা যায় যে, তারা ৬-৮জন ব্যক্তি এই চরের জমিগুলো নামে বে-নামে বিভিন্ন সময় লিজ নিয়েছে। কিন্তু তার কোন নথিপত্র সরকারের কাছে নেই। এমনকি যে চর্চা ম্যাপের মাধ্যমে চরের জমি লিজ নেয়া হয়েছে সেই ম্যাপেরও কোন অস্তিত্ব কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি স্থানীয় ভূমি অফিসগুলোতে। অথচ এনিয়ে এখানে বসবাসরত ভূমিহীনেরা চরের জমিতে রক্ষার্থে বিভিন্ন সময় মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমার শিকার হয়েছে। কিছু কিছু মামলা আজও চলমান। চরের এই সকল জটিলতা দুর করার জন্য ভূমিহীনরা সরকারের পক্ষে ঔ চরে দিয়ারা জরিপের জন্য উচ্চ আদালতে দরখাস্ত করলে ২০১৮ সালে মহামান্য হাইকোর্ট এক মাসের মধ্যে চরবাংলায় দিয়ার জরিপ পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন এবং তা কার্যকর করতে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে আদেশ দেন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক মহোদয় হাইকোর্টের নির্দেশ সেই মোতাবেক এই চরে দিয়ারা জরিপ সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তাবনা পাঠান এবং তারই ধারাবাহিকতা ২০২২ সালের মাঝামাঝির দিকে চরবাংলায় দিয়ার জরিপের কার্যক্রম শুরু করে দিয়ারা অপারেশন বরিশাল।
বর্তমানে এই দিয়ারা জরিপের মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম শেষ হয় পরে ৩০ বিধিতে আপত্তি স্তর চলমান রয়েছে। যা ৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত ৩০ ধারার আপত্তি কার্যক্রম চলমান থাকবে। এর আগের স্তরে দিয়ারা জরিপের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পরে খতিয়ান খোলার কাজ করেন জরিপকারীগণ এবং পরবর্তীতে তসদিক স্তরে এসে কাগজ পত্র দেখে যাচাই-বাছাই করে ৩৫৮টি খাতিয়ান ব্যক্তি মালিকানায় খুলেছেন উক্ত জরিপ টীম। তাদের মতে, এরা পূর্বে কোনো না কোনো সময় এই খতিয়ানধারীরা বন্দোবস্ত পেয়েছে।
অন্যদিকে, সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থানীয় উপজেলা ভূমি প্রশাসন মনে করেন চরবাংলার দিয়ারা জরিপে যে খতিয়ানগুলো খোলা হলো তার বৈধতা খুজে পাওয়া যায়নি। কারণ এটি পয়স্তি জমি। এর মালিক সরকার। সেটি এভাবে বন্দোবস্ত হতে পারে না। তার জন্য প্রক্রিয়া আছে। সেইটি মানতে হবে। তারা মনে করেন যে সকল প্রক্রিয়া মেনে বন্দোবস্ত হওয়ার কথা তা হয়নি। উপজেলা ভূমি প্রশাসনের পক্ষে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের তহশিলদার গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ দিয়ারা সেটেলমেন্টে ৩৫৭টি (সরকারের খাস খতিয়ান বাদে) খতিয়ানের বিরুদ্ধে আপত্তি দায়ের করেছেন। সরকারের পক্ষে স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, দিয়ারা জরিপে যাদের নামে খতিয়ান হয়েছে তারা চরবাংলার জমি মালিক নন, মালিক সরকার। সুতরাং সরকারের জমি অবৈধভাবে বন্দোবস্ত বা বেহাত হবে এটা হতে দেয়া হবে না। তাই আমরা আপত্তি দিয়েছি।’’
দিয়ারা জরিপের তথ্য মতে, চরবাংলার মোট জমির পরিমাণ ১ হাজার ৯৮৫ একর ৫৪ শতাংশ ৭২ অযুতাংশ। এর মধ্যে ১নং খতিয়ানে এক হাজার ১৫০ একর ৬৯ শতাংশ ৭৭ অযুতাংশ। বনবিভাগের নামে ৩২৪ একর ১৫ শতাংশ ২৪ অযুতাংশ এবং ৫১০ একর জমি ব্যক্তি মালিকায় রেকর্ড করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চরবাংলা ইস্যুতে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি) সরকার এবং ভূমিহীনদের কারিগরি সহায়তা করে আসছে। সরকারের পক্ষভুক্ত ভূমিহীনদের আইনি সহায়তাও প্রদান করে থাকে। সরকারের সম্পত্তি যাতে করে অবৈধভাবে রেকর্ডভুক্ত না হয়। পয়স্তি জমির সম্পূর্ণ অংশের মালিক সরকার। যা দিয়ারা জরিপের মাধ্যমে ১নং খাস খতিয়ানে রেকর্ড হতে হবে। তাছাড়া দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সরকার তাঁর নীতিমালা অনুযায়ি ভূমিহীনদের নামে বরাদ্ধ দিবে। কিন্তু চরবাংলায় বিগত সময়ে যদি ব্যক্তি নামে বন্দোবস্ত হয়ে থাকে তাহলে তার বৈধতা যাচাই বাছাই সাপেক্ষে নিয়মানুযায়ি বন্দোবস্ত বা রেকর্ড হবে এটাই এএলআরডি-র দাবি।