বাংলাদেশ রংপুর

জামালের সেলুন লাইব্রেরী এক স্মরণীয় ঘটনা

IMG 20231003 WA0007
print news

শাহজাহান সুমন, লালমনিহাট :
২০১৪ সালে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক কিশোরের হাত ধরে লালমনিরহাটের প্রত্যন্ত সারপুকুরে শুরু হয় ছোট একটি পাঠাগার। নাম দেওয়া হয় ‘সারপুকুর যুব ফোরাম পাঠাগার’। হাতেগোনা কিছু বই, মাটির ব্যাংকে জমানো সামান্য টাকা আর এক বুক সাহস নিয়ে অন্ধকারে আলোর মশাল হাতে পথচলা শুরু জামাল হোসেনের। আজ সেই মশালের আলো পৌঁছে গেছে বিস্তৃত পরিসরে। তার দেখা হয় স্বপ্ন ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা দেশে।জামাল হোসেনের উঠে আসা অনেকটা অন্ধকার সরিয়ে নতুন সূর্য ওঠার মতোই। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে জামাল তার স্বপ্নের পাঠাগারকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন। নিজের অপ্রাপ্তিগুলোকে তিনি মেটাতে চেয়েছেন সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলার মাধ্যমে। কাধে পুরানো ব্যাগ আর ভাঙাচোড়া একটা সাইকেল। নিয়েই মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই পড়ার আহবান জানাতেন আলোর ফেরিওয়ালা জামাল। একদিন তার মনে হয়, এই বই পড়ার আন্দোলনকে তিনি ছড়িয়ে দেবেন আরো বিস্তৃত পরিসরে। সেই ভাবনার জায়গা থেকেই শুরু হয় তার ফেলুন লাইব্রেরি

তৈরির পরিকল্পনা। প্রাথমিকভাবে নিজ এলাকার। কয়েকটি সেলুনকে নিয়ে তার এই উদ্যোগের যাত্রা শুরু। পরবর্তী সময়ে জেলার নরসুন্দরনের সঙ্গে নিয়ে খানিকটা ছড়িয়ে দেন তার এই কার্যক্রম। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সাড়া ফেলে চারদিকে। জামাল হোসেনের হাত

ধরে শুরু হওয়া সেলুন লাইব্রেরির ধারণা এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে সারা দেশে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারা দেশে ইতোমধ্যে ১০০টি সেলুন লাইব্রেরি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে, সেলুনে গিয়েও মানুষ বই পড়ছে এবং তা নিয়ে আলোচনা করছে এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণদের মাঝে বই পড়ার প্রতি নতুন করে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন জামাল। তিনি তার এলাকায় দলিত সম্প্রদায়ের শিশুদের পড়াশোনার জন্য কাজ করছেন। বন্ধুদের সাথে নিয়ে প্রতিহত করেছেন শতাধিক বাল্যবিবাহ। বয়স্ক শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রত্যন্ত সেই সারপুকুরে। শুধু তাই নয়, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থেকেছেন সব সময়। শত বাধার মুখেও তিনি মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন পরম ভালোবাসা নিয়ে। বরাবরই জামাল প্রচারবিমুখ। তার পাঠাগারের দশ হাজারেরও বেশি বই। এই পাঠাগারকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন তার যেতে চান আরও বহুদূর। ইতিমধ্যে জামাল হোসেন বাবার কাছ থেকে ৫ শতাংশ জমি পাঠাগারে নামে লিখে নিয়ে জেলা প্রশাসক এর সহযোগিতায় ৩ তলা ভিক্তি প্রস্তর করেছেন জামাল হোসেন কিন্ত আর্থিক সংকটের কারনে পাঠাগারের কাজ বতমানে বন্ধ হয়েছে। জামাল আশা করেন, সমাজের বিত্তবানেরা এই বই পড়া আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে তার সঙ্গে শামিল হবেন।

জামাল বলেন, ‘দেশ এবং দেশের মানুষকে ভালোবেসে আগামী দিনে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে কোনো বাধাই দাঁড়াতে পারে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *