বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি নিজস্ব ভবনে পুনরায় চালুর দাবীতে নাগরিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ


লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার র্পূবকথা:
ব্রিটিশ সরকার অবিভক্ত বাংলায় ৩টি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে মধ্যে বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি অন্যতম। ১৮৫৪ সালে জেলা জজ মি: ক্যাম্পবেল সাহেব শহরে বিবির পুকুরের পূর্বদক্ষিন পাড়ে এই লাইব্রেরি স্থাপন করেন। ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ সরকার স্থাপনাসহ “ওয়ার্কস এন্ড বিল্ডিংস”হতে পাবলিক লাইব্রেরির সেক্রেটারি অনুকূলে ১৭’৭০ শতক জমি বরাদ্দ করে। পরবর্তীতে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত, এডভোকেট বিনয়ভূষন গুপ্ত, নওয়াব মীর মোয়াজ্জেম হোসেনসহ দানশীল ব্যক্তিগন লাইব্রেরি সংস্কার ও মূল্যবান পুস্তক দিয়ে সমৃদ্ধ করে। তৎসময়ে এ লাইব্রেরি অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা প্রসারে বিশেষ অবদানসহ বরিশালে সমাজ ও সাংস্কৃতিক ভুবনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। এই লাইব্রেরির সদস্যগন নাগরিক সমাজের বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং নিজকে গর্ববোধ করতেন। এই লাইব্রেরির পাঠক হিসেবে এ কে ফজলুল হক, খানবাহাদুর হাশেম আলী খান, বিডি হাবিবুল্লাহ, কবি মোজাম্মেল হক, স্পিকার আব্দুল ওহাব খান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শৈলেশ্বর চক্রবর্তী, অধ্যাপক শান্তিসুধা ঘোষ, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ফকরুল ইসলাম খান, বিশিষ্ট লেখিকা জাহানার বেগম প্রমূখ ব্য সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ১৯৫৯ সালে গঠনতন্ত্র প্রনয়ণ করে ‘বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরী’ নামকরণ হয়।
১৮৫৪ সালে বরিশাল নগরীর বিবির পুকুর পাড়ে ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপিত হয়। ১৯৮৫ সালে এই পাবলিক লাইব্রেরির র্কাযক্রম সরিয়ে বান্দ রোডে স্থানান্তরিত করা হয়। এরপর লাইব্রেরির নিজস্ব ওই ভবনকে একের পর এক ভাড়ার নামে চালানো হচ্ছে। ঐতিহ্যের চলমান লাইব্রেরিটি লোকালয় থেকে নির্জন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হলে তা একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু বিবির পুকুর পাড়ের প্রাচীন লাইব্রেরিটি সারাদিন জনমুখর। পুরানো পাবলিক লাইব্রেরিটি পর্যাপ্ত জায়গা থাকা স্বত্তেও কেন সড়িয়ে নিয়ে বানিজ্যিক ভাড়ার স্থানে পরিনত হল তা বিশেষ প্রশ্নবিদ্য।
লাইব্রেরির মূলভবনে ফিরে আনার দাবি:
বান্দ রোডে লাইব্রেরিটি স্থানান্তরিত হওয়ার পর সেখানে লোকজনের তেমন কোন যাতায়াত ছিল না বললেই চলে। লাইব্রেরিটি জনহীন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে কিছু টেবিল চেয়ার পাতানো হলেও পাঠককূলের অনাগ্রহে তা বলা যায় ২০০৪ সালে লাইব্রেরিটি বন্ধ হয়ে যায়। ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরির পুরোনো ভবনে চালু হোক তা বরিশালবাসীর প্রত্যাশা।
মুলত: ২০১২ সালের ১লা জানুয়ারি থেকেই লাইব্রেরি বিবিরপুকুর পাড়ের মূলভবনে পুনরায় চালুর র্কাযকর দাবি শুরু হয়। এর পরবর্তীতে পাবলিক লাইব্রেরি সভাপতি ও বরিশাল জেলা প্রশাসক (পদাধিকার বলে) বরাবরে নাগরিক সমাজের স্বাক্ষর সম্বলিত বিগত ২/০২/২০১২, ২৬/১২/২০১২, ২৪/০৩/২০১৩, ১৯/০৭/২০১৩ তারিখ সমূহে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রায় এক যুগ সময় পার হলেও এর কোন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি গত ২রা এপ্রিল ২০২৩ তারিখ উপরোক্ত দাবিতে আবারও জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেও এর কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। (পত্র নং১০০০১৩৬২৩০৪০২০-৩২ তাং২/৪/২৩)। তাই সার্বিক পরিস্থিতিতে আগামি ২০২৪ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মূলভবনে পাবলিক লাইব্রেরি পুনরায় চালু করা সময়ের দাবি হিসেবে পরিনত করেছে।- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
লাইব্রেরির বিকাশ ও অন্তরায়:
লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা পরবর্তী উত্তর উত্তর শহরবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে এর পাঠক সংখ্যাও বেড়ে যায়। ফলে লাইব্রেরির পাঠের পরিসর বাড়ানোর চিন্তা শুরু হয়। লাইব্রেরির নিজস্ব স্থানে পর্যাপ্ত জমি থাকা স্বত্তেও কমিটি অজ্ঞাতকারণে অন্যত্র স্থানান্তরের চিন্তা শুরু করে। তার প্রেক্ষিতে ১৯৮০ সালে লাইব্রেরির সভাপতি এবং বরিশাল জেলা প্রশাসক জনাব আবদুল আউয়াল বাঁধ রোডে ৫৮.৯২ শতক সরকারি জমি বরাদ্দ দেন। স্থানটি তৎসময়ের লোকালয় বর্হিভূত বগুড়া আলেকান্দা মৌজার-৫০ যা বতমানে ১২৬০৪ নং খতিয়ান ভূক্ত। ঐ জমিতে ১৯৮২ থেকে ৮৬ সালের মধ্যে লাইব্রেরির বড় পরিসরে একতলা একটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করা হলে ১৯৮৭ সালে ঐ ভবনে লাইব্রেরি স্থানান্তর করা হয়।
পাঠক কূলের কান্না থামাতে পারেনি স্থানান্তর:
বলাচলে শহরের অভ্যন্তর থেকে চলমান পাবলিক লাইব্রেরিটি পাঠককূলের সুবিধা ও মতামত উপেক্ষা করেই স্থানান্তার করা হয়। অধিকাংশ সদস্য ও পাঠকেরা সেদিন ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ করেছিল এর ফলে বান্দ রোডে ঐ ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলেও সেখানে স্থানান্তরে একবছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। দাবি ছিল লাইব্রেরির পুরাতন ভবনেও পাঠকেন্দ্র চালু রাখতে হবে কিন্তু তা সামরিক শাসনের শক্তির বলে উপেক্ষিত হয়।
অতপর স্থানান্তরিত বান্দ রোডের জনশূন্য স্থানে লাইব্রেরির ক্রমাগত পাঠক শুন্য হয়ে পরে। পাশাপাশি এর ৬০০ জনের অধিক সাধারণ এবং আজীবন সদস্যদের উপস্থিতিও কমতে থাকে। এর ফলে চলমান একটি লাইব্রেরিকে একপ্রকার গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। বরিশালের ঐতিহ্যর এই লাইব্রেরিটি আজ বিলুপ্তির পথে।
লাইব্রেরি স্থানান্তর! প্রকারন্তে মামলা আর সম্পদের হরিলুট:
১৯৮৭ সালে পুরাতন লাইব্রেরি স্থানান্তরে সময় জাহানারা হলসহ সমগ্র এলাকা পাশ্ববর্তী বরিশাল পৌরসভার নিকট ভাড়া দেয় হয়। পৌরসভা এই ভাড়ার সূত্রে লাইব্রেরির জমি থেকে প্রথমে ২ শতাংশ ও পরবর্তীতে আরো ৪.৫ শতাংশ মোট ৬.৫ শতাংশ জমি প্রথমে সুপার মার্কেট নির্মাণের জন্য দখলে নিলেও পরবর্তীতে সেখানে সিটি কর্পোরেশনের এনএক্স ভবন নির্মাণ করা হয়। লাইব্রেরির কমিটি ২০০১ সালে ঐ জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ একলক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করলেও সূত্রমতে সেই অথ লাইব্রেরির অনুকূলে পরিশোধ হয়নি।
অপর দিকে নতুন লাইব্রেরি ভবনটিও বছর না ঘুরতেই পাঠক শুন্যতায় ভাড়ার স্থানে পরিণত হয়। এই ভাড়ার সূত্রে লাইব্রেরি নানা জটিল মামলায় জড়িয়ে তা হাইকোট র্পযন্ত গড়িয়েছে। এমনকি এই মামলায় লাইব্রেরির সদস্যসহ লাইব্রেরির শহিদ নামক একজন গার্ডকে পযর্ন্ত হাজত খাটতে হয়েছে।
স্মৃতির ‘জাহানার হল’ ও ভাড়ার অংশে পরিনত:
উল্লেখ্য ১৯৭৪ সালে তৎকালিন জেলা প্রশাসক জনাব এম সামসুদ্দিনের স্ত্রী জাহানারা বেগম-এর স্মরণে পাবলিক লাইব্রেরির জমিতে ‘জাহানার হল’ নামে এটি তাদের অর্থে নির্মিত হয়। ১৯৮৭ সালে জেলা প্রশাসক জনাব এস এন আই আকবরী এর উদ্বোধন করেন। ‘জাহানারা হল’টি নগরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখছিল। তবে অল্পদিনের মধ্যে এটিও পুরাতন লাইব্রেরি ভবনের ন্যায় ভাড়ার জালে আবদ্ধ হয়ে যায়। কমিটি এই ভাড়ার আয় দ্বারা বান্দ রোডের নতুন লাইব্রেরি পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।
লাইব্রেরির বিবিরপুকুরের জমি বিএসভূক্ত করন:
২০১২ সালে বিএস মাঠ জরিপে বিবির পুকুর সংলগ্ন পাবলিক লাইব্রেরির এস এ ও আরএস ভূক্ত জমির নিজস্ব বিসিসির অনুকূলে তালিকা ভূক্ত করা হয়। যা অহেতুক দখলের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। ২০১৩ সালে উক্ত বিএস মাঠ জরিপ বিষয় সম্পর্কে তৎসময়ে লাইব্রেরিয়ান সিরাজুল ইসলাম নিকট থেকে অবগত হওয়া যায়। সে সময়ে বিবিপুকুর পাড়ে পাবলিক লাইব্রেরি ফিরে আনার চেষ্টা চলছে। তিনি জানান ‘পুরোন ভবনে লাইব্রেরি নিতে চাচ্ছেন ভালো কথা কিন্তু বিএস মাঠ জরিপেতো এর জমিই থাকছেনা‘ বলে সেটেলমেন্টের ২৮ ধারার নোটিশ সম্পর্কে অবহিত করেন। এর প্রেক্ষিতে স্বপ্রনেদিত হয়ে উক্ত নোটিশ এবং লাইব্রেরির এস এ, আর এস পচা সহ বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার জনাব প্রনয়কান্তি বিশ্বাস-এর নিকট হাজির হয়ে মাঠ জরিপের আপত্তি জানালে তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কমকর্তাকে ডেকে প্রয়োজনীয় নিদেশনা দিয়েছিলেন। এই আপত্তির ফলে পরবর্তীতে পাবলিক লাইব্রেরির অনুকূলে জরিপ সংশোধিত হয়ে বরিশাল-৪৯ মৌজার ৮৩নং খতিয়ান ১৪.৬৮ শতাংশ জমি অন্তভূক্ত হয়েছিল। উল্লেখ্য এ সময়ে সেটেলমেন্ট অফিসে উপস্থিত থাকা বরিশালের বিশিষ্টজন ও ব্যবসাহি শ্রী বিজয় কৃঞ্চ দে বিশেষ সহযোগিতা করেছিলেন।
দখল উচ্ছেদ ও সম্পদ রক্ষায় কিছু চেষ্টা:
এ কথা বলতে হয় ২০১৩ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখ আমাকে বরিশাল লাইব্রেরি এডহক-কমিটি সদস্য এবং ৫ এপ্রিল ২০১৩ তারিখ এডহক কমিটির প্রথম সভায় পাবলিক লাইব্রেরির সম্পত্তি রক্ষা উপ-কমিটির একজন সদস্য করা হয়। সে হিসেবে ২০১৩ সালের ১৯ জুলাই পাবলিক লাইব্রেরির জাহানার হলটির দীঘদিনের অবৈধ্য দখলদার উচ্ছেদে বিশেষ ভূমিকা রেখেছি। পাবলিক লাইব্রেরির স্বার্থ রক্ষায় সকল অপচেষ্টার বিরোধিতা করেছি। এমনকি ২০২১ সালে কমিটির সভাপতি কর্তৃক পাবলিক লাইব্রেরির বান্দ রোডস্থ রেকর্ডীয় জমি কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তরের বিরোধিতায় মানববন্ধ করেছি এবং তা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করেছি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে।
একটি ইতিবাচক সারা এবং উদ্যোগ:
বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ-এর সময়কালে বিবির পুকুরের পাড়ের চতুরদিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বাঁধাই ও রেলিং করে উন্নয়নের ফলে পাবলিক লাইব্রেরি নিজস্ব পুরনো ভবনে পুনঃপ্রতিষ্ঠার ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করে। বিবির পুকুর ঘিরে এই উদ্যোগের ফলে নগরের যুবসমাজ বিশেষ করে নারী শিশু ও বৃদ্ধদের আগমনে নগরের কেন্দ্র স্থানটি লোকালয়ে পরিণত করে। তাই সমগ্র স্থানটি আলোকিত হবার কারণে নিজস্ব ভবনে পুনরায় লাইব্রেরি চালুর বিষয়ে মেয়র শওকত হোসেন হিরন মহোদয়ের নিকট আবেদন করে ইতিবাচক সাড়া মিলে। এর ফলে পুরাতন ভবনে লাইব্রেরি ফিরিয়ে আনার দাবির বিশেষ গুরুত্ব পায়। জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১২ সালের ১লা জানুয়ারি লাইব্রেরি পুরাতন ভবনের বিবিরপুকুর পাড়ে দাবি সম্বলিত ব্যানার টানিয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহসহ লিফলেট বিতরন শুরু হয়। এ সময়ে লাইব্রেরি ভবনের ভাড়ার নামে অবস্থানকারীরা আনিসুর রহমান স্বপনের নেতৃত্বে এসে বাঁধা প্রদান করে এবং কৌশল হিসেবে আলোচনার কথা বলে কমসূচি সমাপ্ত করতে বাধ্য করে। পরবর্তীতে তিনি এ বিষয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলেন যা এক প্রকার প্রতারণার সামিল।
মতলববাজদের কারসাজি:
মূলত একটি চক্র পাবলিক লাইব্রেরির র্নিবাহী কমিটি বা এডহক কমিটির বিভিন্ন সময়ে সদস্য হয়ে স্বনামে বেনামে কিছু প্রতিষ্ঠানকে লাইব্রেরির পুরাতন ভবনে ভাড়ার নামে ঢুকিয়ে রেখেছে। লক্ষ্য ও কৌশল হচ্ছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পাবলিক লাইব্রেরির এই ভবনটি ভাড়ার নামে অবস্থান করে দখলে পায়তারা। এরা এতটাই দুদান্ত যে ভাড়ার নামে এসে লাইব্রেরির অস্তিত্বি মুছে ফেলতে এর ছাদে সিমেন্টের লেখা নামটি ঢেকে তাদের সাইনবোর্ড সেটে দিয়েছিল। তা প্রতিবাদ করে নামাতে হয়েছিল। এখন কৌশল বদলিয়ে পাবলিক লাইব্রেরি লেখা অদৃশ্য করতে রঙ করে তা ঢেকে দিয়েছে। যাতে কেউ যেন সহজে বুঝতে না পারে। এটি কোন অর্পিত সম্পত্তি নয়, যে সহজে দখল হবে। কমিটির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার ভবন ছেড়ে দিবার সিদ্ধান্ত জানানো হলেও তা তারা মানছে না। পাঠক শুন্য এ সম্পদ যেন গণিমতের মাল। এর তথাকথিত ভাড়াটিয়া অনেকটাই মালিকের ন্যায় আচরণ করছে! মনে হচ্ছে লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকির অভাবে তাহারা ভবন ব্যবহারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অসত্য তথ্য ও শঠতার আশ্রয় নিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে নিজস্ব আঙিনার পরিচয় দেওয়া চেষ্টা করছে – যা কিনা গর্হিত অপরাধ। এই পরিস্থিতির অন্যতম উৎসাহদাতা হচ্ছেন আনিসুর রহমান স্বপন। সুত্রমতে জানা যায়, একদা তিনি পাবলিক লাইব্রেরি কমিটির সদস্য হয়ে নিজ গোষ্ঠীভূক্ত প্রতিষ্ঠানটিকে তার নিজস্ব বাডি থেকে তুলে সরাসরি এই লাইব্রেরির ভবনে এনেছিলেন। যা কিনা কমিটির একজন সদস্যের জন্য দুষণীয়। এটাই এখন পাবলিক লাইব্রেরির জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লাইব্রেরি একটি বিশেষ উদ্যোগে বাধা:
উপরোক্ত মতলববাজদের পরিকল্পিত বাধার কারণে ২০১৩ সালে লাইব্রেরির এডহক কমিটির সভায় অন্যতম সদস্য আমিরুল ইসলাম খান বুলবুল অবগত করেন তিনি জাপান এ্যাম্বেসীতে বিবিরপুকুর পাড়ে লাইব্রেরির জমিতে একটি ভবন নির্মাণে ৫ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাবনা দিয়েছেন। এর জন্য অতিদ্রুত লেআইট সহ চূড়ান্ত ডিজাইন পাঠাতে হবে। বহু চেষ্টা করেও অদৃশ্য কারণে এর চূড়ান্ত ডিজাইন জাপান এ্যাম্বেসীতে দাখিল করা যায়নি। এর ফলে উক্ত বরাদ্দ হারানোর পাশাপাশি জাপান এ্যাম্বেসীর নিকট আমিরুল ইসলাম খান বুলবুল সাহেবকে বিব্রত পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছে।
বাস্তবায়ন কমিটি গঠন :
৩০ সেপ্টেম্বর পূর্ব নিধারিত সময়ে নগরের খানবাহাদুর হাশেম আলী খান ভবনে ঐতিহ্যবাহী বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি চালুর বিষয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন লেখক ও সাংস্কৃতিকজন অধ্যাপক বদিউর রহমান সহ সচেতন বরিশালবাসী।
সভায় বরিশালে জ্ঞানের বাতিঘর খ্যাত পাবলিক লাইব্রেরিটি পুনরায় চালুর বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সামগ্রিক আলোচনার প্রেক্ষিতে নিমোক্ত সিদ্ধান্ত হয়।
বিবিরপুকুর পাড়ের রেকর্ডীয় বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি পুনরায় চালু বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। বীরমুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীককে আহ্বায়ক ও অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান খোকন, নজরুল ইসলাম খান কে যুগ্ম আহবায়ক, কাজী এনায়েত হোসেন শিবলুকে সদস্য সচিব, প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ শান্ত
নন্দ দুলাল সাহাকে অর্থ সম্পাদক এবং নির্বাহী সদস্য হিসেবে কবি জামাল আজাদ, অধ্যাপক শাহ আজিজ খোকন, মোজাম্মেল হক ফিরোজ, খালিদুর রহমান খান, বিরেন শিকদার প্রমূখদের নিয়ে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয় এর সদস্যরা হলেন; ইতিহাসবিদ সিরাজউদ্দীন আহমেদ সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব, লেখক সংস্কৃতিজন অধ্যাপক বদিউর রহমান, বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার,আলহাজ্ব মনিরুল ইসলাম মনি সাবেক এমপি, আমিরুল ইসলাম বুলবুল উপদেষ্টা জাইকা, জনাব ফয়েজ আহমেদ ফিরোজ, এডভোকেট আহমেদ কবীর, এডভোকেট লস্কর নূরুল হক, গবেষক ও লেখক আজিজুর রহমান খান আসাদ, এডভোকেট আবজালুল করিম, এডভোকেট আনিস উদ্দিন শহিদ, জহিরুল ইসলাম, প্রমূখ।
আরও পড়ুন…….
বরিশালে পাবলিক লাইব্রেরি পূর্বের স্থানে চালুর দাবিতে উন্মুক্ত বই পাঠের অনুষ্ঠান
কথা পরিস্কার:
লক্ষনীয় যখনই বিবিপুকুর পাড়ে নিজস্ব ভবনে লাইব্রেরি পুনরায় চালুর কথা বলা হয় আর তখনই তথাকথিত অনেক সমাজপতিদের মুখ আটকে যায়। কৌশলে ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলে এড়িয়ে চলে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে বান্দ রোডস্থ লাইব্রেরির পরিস্থিতি তুলে ধরে, এটি এক প্রকার শঠতা বা চালাকি। প্রকারন্তে এরাই লাইব্রেরি বিবিপুকুর পাড়ের ভবন কব্জাকারিদের পক্ষভূক্ত। তা ইনিয়ে-বিনিয়ে বলার কোন সুযোগ নেই। পুরাতন ভবনে লাইব্রেরি চালু এখন সময়ের দাবি। মনে রাখতে হবে সার্বজনীন স্বার্থের চেয়ে কোন গোষ্ঠী উর্ধে নয়। তা সে যেই হোক না কেন! আমাদের উদাত্ত আহবান লাইব্রেরি পুরোন ভবনে বর্তমানে অবস্থানকারিরা যত দ্রুত সম্ভব ওই ভবন ছেড়ে চলে যাবেন -যাতে সকল প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে, আগামী ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ পুনরায় লাইব্রেরি চালু হতে পারে।
লেখক : কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু