ভালোবাসা বন্ধনের চড়ুইভাতি : অনবদ্য একান্ন ও দুর্বার বায়ান্ন


মোঃ আমিনুল ইসলাম :
আজকের সকালটা কেমন যেন একটা মিষ্টি মিষ্টি ভাব। উষ্ণ আকাশ মৃদু মৃদু বাতাস বইছে। প্রকৃতি সেজেছে সজীবতায। মনে ভোরের সূর্যের এক প্রেমময় বার্তা । ঋতুচক্রের হাজিরা খাতায় আজ আশ্বিন মাসের ৭ তারিখ। প্রকৃতির এই সজীবতায় নানা বিস্ময় ও উদ্দিপনা নিয়ে আবির্ভূত প্রায় শ’ত্রিশের মতো শিক্ষার্থী। সমগ্র স্নেহে ও অবিরাম ভালোবাসা একত্র, তারা বন্ধু । বলছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০-২১ ও ২১-২২ সেশন এর শিক্ষার্থীদের আয়োজনে চড়ুইভাতি’র কথা।
অনেক জল্পনা কল্পনার পর আজ আমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়র ভাইদের সাথে চড়ুইভাতি অনুষ্ঠান । চড়ুইভাতি আয়োজনের অন্যতম কাজ হলো সবার থেকে চাঁদার টাকা উত্তোলন করা। সেই কাজে দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে আয়োজনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে দুর্বার বায়ান্নোর কিছু দায়িত্ববান শিক্ষার্থীরা তারা হচ্ছে আবিদ,মুজাহিদ,সাঈদ,আজহার,তানভির, মুতাসিম ও তানজু ।
চড়ুইভাতি’ কথাটা দুরন্ত শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চড়ুইভাতি’ এর গল্প একটু অন্যরকম। আজ সারা দিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সকলেই সকাল সকাল হাজির চবির বোটানিকাল গার্ডেনে। মনমুগ্ধকর পরিবেশ তার সাথে মৃদু মৃদু বাতাস বইছে।
চড়ুইভাতির আগেরদিন থেকে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে সকলকে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। চড়ুইভাতি কে ঘিরে জাঁকজমক ভাবে সাজানোর পরিকল্পনা চলছে । নানারকম বাহারি রঙ আর ককশিটের উপর সুনিপুণ কারুকার্যে অতিচমৎকার ভাবে তুলে ধরা যায় সেটার ও পরিকল্পনা চলছে। চড়ুইভাতির অন্যতম ও প্রধান কজ হচ্ছে বাজার করা । বাজারের দায়িত্বে ছিলেন অনবদ্য একান্নোর আকিব ভাই,আবির ভাই ও তারিফ ভাই আর দুর্বার বায়ান্নোর সাকিব,সাঈদ,মোদ্দাছের ও জোবায়ের। আরো রয়েছে ডেকোরেশন, লাকড়ি যোগাড়, পানি সংগ্রহ ও অনন্য সকল কিছু যোগাড় করার দায়িত্ব। দায়িত্ব অনুযায়ী সকলে যে যার মতো কাজ শুরু করল । চড়ুইভাতির আগের দিন রাত তিনটা পর্যন্ত কাজ অব্যাহত ছিল এই কঠোর পরিশ্রম যারা করেছেন তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। এই চড়ুইভাতি বাস্তবায়নে তাদের ভূমিকা অসামান্য।
অবশেষে শুভক্ষন চলে এলো । চড়ুইভাতিকে সফল করতে আমরা বড় ভাইদের নেতৃত্বে সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছিলাম। কেউ পানি আনা, কেউ কাটাকাটি, কেউবা চুলা জ্বালানো, কেউ আবার হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কারের কাজে নেমে গেল। কাঠ কুড়ানো, চুলা বানানো, চাল ধোয়া, মাংস কাটাসহ সব কাজই করা হলো মিলেমিশে। বড় আপুরাও আমাদের সাহায্য করছিলেন । এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেলো রান্নার তোড়জোড়। সবাই মিলে একসাথে উৎসবমুখর পরিবেশে রান্না, বাকিদের সহায়তায় জমে উঠলো চড়ুইভাতি।
রান্নার পাশাপাশি গান, গল্প, আড্ডা ও ছবি তোলার কাজ চলতে থাকল সমানতালে। রান্নার সুগন্ধ আর আড্ডাবাজিতে এক অন্যরকম ভালোলাগার পরিবেশ সৃষ্টি হলো। এরপর অনুষ্ঠানটিকে আরো মনমুগ্ধকর করতে শুরু হলো সংস্কৃতিক পর্ব। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করছিলেন অনবদ্য একান্নোর রুমি ভাই ও মারুফ ভাই। শুরু হলো পবিত্র কুরআন তেলায়তের মাধ্যমে ওলিউল্লাহের সুমধুর কন্ঠে তেলায়তের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি আরো জমজমাট হয়ে উঠলো। এরপর সুররিত কন্ঠে নাতে রাসুল পরিবেশনা করেছে ইমাম। তার কন্ঠে যেনো জাদু মাখা শুধু শুনতেই মন চাই। এইবার কবিতা আবৃতির পালা। কবিতা আবৃতি করতে গিয়ে একেকজন এক এক কবির রূপ নিচ্ছে কেউ হচ্ছে ইমরুল কায়েস কেউবা আবার ওমর ইবনে রাবীয়াহ আবার কেউ নিজের স্বরচিত কবিতা আবৃতি করছে। আজকের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো নৃত্য। নৃত্যে অংশগ্রহণ করছিলেন রবিন ভাই, জিহাদ ভাই, আকিব ভাই আরো ছিলো তানভির,মুজাহিদ, জোবায়ের,সাব্বির, বেলাল । তাদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠানটি আরো অনবদ্য হয়ে উঠল এবং এরই মধ্যে দিয়ে সংস্কৃতিক পর্বের ইতি ঘটল। এইবার ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পালা,খেলাটি ছিল বাস্কেটের মধ্যে বল ফেলা। প্রথমে আপুদের দিয়ে খেলাটি শুরু হয়। দুর্ভাগ্যবশত নুসরাত আপু ছাড়া আর কেউই বাস্কেটে বল ফেলতে পারি নি। দ্বিতীয়বার সকলকে আবার সুযোগ দেওয়া হলেও আপুরা সকলেই ব্যর্থ। এরপর প্রথম বর্ষের পালা অনেকেই বাস্কেটে বল ফেলতে সফল আবার অনেকেই ব্যার্থ।সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ইতি ঘটল।
বিকেল তিনটার দিকে শুরু হলো ভোজন পর্ব। রান্নাটা খুব সুস্বাদু হয়েছে সকলেই তৃপ্তি করে খেলাম। আমাদেরকে খাবার পরিবেশনা করে, বড় ভাইয়েরা খেতে বসেছেন।
পাশাপাশি গল্প, একে অপরের সাথে খোশগল্পে মেতে রোমাঞ্চকর এক মুহূর্ত পার করছে সবাই। বিভাগের ১ বছরের পথচলার সমাপ্তির ঠিক আগ মুহুর্তে এমন রোমাঞ্চকর আয়োজনে মাতোয়ারা সবাই। যেন নিজ পরিবারের বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে, গল্প করছে। সবার অনভূতি প্রকাশে উঠে এল এমন কথা। সব মিলিয়ে শৈশবের সেই রোমাঞ্চকর দিনগুলোতে যেন ফিরে গেল সবাই আরেকবার।
সকলের খাওয়া শেষ। এইবার ফটো সেশনের পালা, প্রথমে দুর্বার বায়ান্নোর গ্রুপ ফটো সেশন সেরে নিয়েছি। এইবার ভাইদের সাথে আমরাও গ্রুপ ফটো সেশনে যোগ দিয়েছি। এই যেনো এক অনবদ্য সৃষ্টি “অনবদ্য একান্ন” ও “দুর্বার বায়ান্নোর”। এই চড়ুইভাতির মাধ্যমে ভাইদের সাথে ভালোবাসার বন্ধন যেনো আরো দৃঢ় হলো । আজকের এই অনুষ্ঠানটিকে বাস্তবায়ন করতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের প্রতি আমরা সকলেই কৃতজ্ঞ। সকলের অংশগ্রহণে এই আয়োজন হয়ে উঠেছিল আরও বেশি উৎসবমুখর। পারিবারিক গণ্ডির বাইরে ছাত্রবয়সে আত্মতৃপ্তির অন্য নাম চড়ুইভাতি। এ গল্প চলতে থাক অবিরাম। অগ্রজ অনূজের দৃঢ় এই বন্ধন, নাহি যাক বিলিয়ে চির হোক অম্লান।
মোঃ আমিনুল ইসলাম
আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়