সুশিক্ষাই হোক জাতির মেরুদন্ড


মোঃ আমিনুল ইসলাম :
ছোটবেলা একটা কথা শুনে আসছি “শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড”। আসলে কথাটি কতটা যোক্তিক ?ছোটবেলা থেকে আমাদের শিক্ষিত করার জন্য আমাদের পিতা-মাতা কঠোর পরিশ্রম করেন ।শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রে নয় ,চাকরি পর্যন্তও রয়েছে তাদের অবদান।ছোটবেলা থেকে অনেকগুলো ধাপ পার করি শুধু একটি ভালো সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য।
আর সেই সার্টিফিকেট দিয়ে একটা ভালো চাকরি পাবো সেই আশায়। কিন্তু কখনো পাঠ্যবইয়ের বাইরে জ্ঞান রাখি না।আমাদের শিক্ষাগুলো হয় পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ।উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার পরও কপালে জোটে না চাকরি।জুটবেই বা কেমন করে, আমাদের শিক্ষাগুলো যে পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আমাদের দেশে শিক্ষিত হওয়ার পরেও কেনো আজ এত বেকার?কারন তারা শিক্ষিত কিন্তু যোগ্যতাসম্পূর্ন না । ফলে তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার পরও পান না মনের মতো চাকরি আর অন্যদিকে নিম্নমানের কাজ করতে আমার বিবেক বাধা দেয়, কারণ আমি তো শিক্ষিত।জীবিকার তাগিদে চলে যায় তারা অন্ধকার জগতে। সুশিক্ষার অভাবে চুরি, ডাকাতি, মারামারি, খুন, অন্যায়, ধর্ষণ, নির্যাতন, শোষণ এবং মাদকাসক্তসহ ইত্যাদিতে লিপ্ত হয়।অন্যদিকে দেখা যায় ,যে পিতা-মাতা এত কষ্ট করে ছোটবেলা থেকে আমাদের লালন-পালন করে শিক্ষিত করে আজ সেই পিতা-মাতাকেই আমরা রেখে আসি বৃদ্ধাশ্রমে ।আমরা কি আসলেই শিক্ষিত ? যদি শিক্ষিত হতাম আমরা কি কখনই আমাদের নিজেদের পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে পারতাম ? সুশিক্ষার অভাবে আমরা এইগুলো করি ।যদি সুশিক্ষাই থাকতো,তাহলে কেউ যেতো না অন্ধকার জগতে , আর না কেউ রেখে আসতো পারতো নিজেদের পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে । “শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড” প্রবাদটি আমাদের দেশের জন্য সঠিক নয়, অন্য যে কোনো দেশের জন্য সঠিক।এখন তো আমরা শিক্ষিত হচ্ছি আধুনিক হয়ে গেছি। তারপরেও আমাদের উন্নতি হচ্ছে না কেনো । কারন সব জায়গায় দুর্নীতি আর দুর্নীতি।আমাদের মধ্যে নেই কোনো কোরআন-হাদিসের জ্ঞান। ফলে যে কোনো অন্যায় কাজ করতে বিবেক বাধা দেয় না।অনেকেই অনার্স মাস্টার্স শেষ করেও যখন চাকরি পান না । তখন বিদেশে গিয়ে তারা কারিগরি জ্ঞানের অভাবে কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে।আবার অনেকেই বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা নিয়েও দেশে মূল্যায়ন না পেয়ে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে।
ছোটবেলায় যখন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতাম। তখন পড়া না পারলে শিক্ষক শাস্তি দিত। কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু শিক্ষক না মেরে বুঝাতো পড়াশোনা না করলে তুমি কখনো জীবনে ভালো কিছু করতে পারবে না। তোমার পিতা মাতা তোমাকে নিয়ে অনেক বড় সপ্ন দেখে। তারা চাই তুমি অনেক বড় হও। এসব কথা শোনার পর মানসিকতা পরিবর্তন হয়ে যেত। পড়তে বসলে তাদের উপদেশমূলক কথাগুলো মনে পড়ে যেত এবং তাদের পড়াই যেন আগে শেখা হতো।
এটা বলার কারণ হচ্ছে আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।আর একজন মানুষের মন-মানসিকতা পরিবর্তন হতে পারে নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে।নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সচেতনতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এগুলো আসে পরিবার তথা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে। একজন মানুষকে নৈতিক শিক্ষা দিতে পারলে , তার ভিতর মূল্যবোধের সৃষ্টি করতে পারলেই দেখবেন তার জন্য অন্যায়ের দরজা চির দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে । আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এগুলো কতটুকু বা সংযুক্ত আছে।বর্তমানে যতটুকু যুক্ত তা যথেষ্ট নয়। আরও বহুগুণে এ ধরনের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি কোরআন ও হাদীস শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। উচ্চশিক্ষিত হয়েও কোরআনের একটা আয়াত পড়তে পারে না তাহলে এই শিক্ষা দিয়ে কি লাভ হবে? সুশিক্ষা না পেয়ে নিজের পিতা-মাতাকে পর্যন্ত বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আসে। যে পিতা-মাতার জন্য এই পৃথিবীর আলো দেখছে সেই পিতা-মাতাকেও তখন মূল্য দেয় না।অন্যায় দেখলেও প্রতিহত করে না। আচার-ব্যবহার হয় অশিক্ষিত লোকের মতো। আজকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত হয়ে যাচ্ছে।দেশের উন্নতি তো এদের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু এরা কীভাবে দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে?পত্রিকা খুললেই প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে ধর্ষণের খবর। স্কুল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের হাতে ছাত্রী ধর্ষণ হয়। যে শিক্ষক পিতার সমতুল্য সেই শিক্ষকের কাছে এখন ছাত্রীরা নিরাপদ নয়। কারণ ওইসব শিক্ষক শিক্ষিত কিন্তু সুশিক্ষিত নয়।
শুধু শিক্ষিত হয়ে কি হবে ?যদি সেই শিক্ষা সমাজ বা দেশের কোনো কাজে না আসে ।শুধু শিক্ষিত হলেই চলবে না, সুশিক্ষিত হতে হবে। সুতরাং শিক্ষা নয়, সুশিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সে জাতিকে অবশ্যই সুশিক্ষিত হতে হবে।
মোঃ আমিনুল ইসলাম
আরবি বিভাগ ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়