মানিকগঞ্জ গুদাম থেকে সার পাচারের নেপথ্যে কারা


মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মানিকগঞ্জ গুদাম থেকে পাচারের সময় সাটুরিয়ায় দুটি ট্রাক থেকে ৪৭ টন সার জব্দ করে পুলিশ। সোমবার রাতে সাটুরিয়া বাজারে আটক করা হয় ট্রাক দুটি। এ ঘটনায় পুলিশ দুই চালককে আসামি করে বিশেষ আইনে মামলা করেছে। তবে ডিলার, সাব-ডিলার, গুদামের কর্মীদের অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। আটকের পর ট্রাক দুটির চালক মানিকগঞ্জ বিএডিসির সার বিক্রির দুটি চালান পুলিশের কাছে দেখিয়েছিল। তবে এসব চালানকে ভুয়া দাবি করেছেন মানিকগঞ্জ বিএডিসির কর্মকর্তারা। এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দাবি করেন, সই-সিল জাল করে ওই চালান তৈরি করা হয়।
সোমবার রাত ১২টার দিকে সাটুরিয়া থানা পুলিশ সাটুরিয়া-গোলড়া সড়ক থেকে ট্রাক দুটি আটক করে। সেখানে ৪২৬ ব্যাগ ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ও ৫২৩ ব্যাগ মিউরেট অব পটাশ সার পাওয়া যায়। এর মোট ওজন ৪৭ দশমিক ৪৫ টন। এ সময় ট্রাক দুটির চালক আ. ছালাম হোসেন ও বাদল মিয়াকে আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, সারের বস্তাগুলো পাচার হচ্ছিল গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকার মেসার্স নারায়ণ বণিক এবং মেসার্স বিষ্ণু অ্যান্ড ব্রাদার্স সার বিক্রয় প্রতিষ্ঠানে। পুলিশের কাছে ট্রাকচালকরা মানিকগঞ্জ বিএডিসির সার বিক্রির দুটি চালান দেখান। ট্রাকচালক আ. ছালাম পুলিশকে জানান, ধামরাইয়ের বাথুলি এলাকায় সড়কে ওজন মাপার স্কেল রয়েছে। এটি ফাঁকি দেওয়ার জন্য সার নিয়ে সাটুরিয়ার গোড়লা-সাটুরিয়া বাজার হয়ে ধামরাইয়ের কালামপুর দিয়ে বের হওয়ার কথা ছিল। মঙ্গলবার সকালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে সাটুরিয়া থানায় মামলা করেন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোক্তার হোসেন। এতে সরকারি সার অবৈধভাবে কালোবাজারি ও মজুতের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় দুই ট্রাক চালককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে এদিন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ওই মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ‘চোরাকারবারি’ ডিলার, সাব-ডিলার ও মানিকগঞ্জ বিএডিসি গুদামে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এ বিষয়ে এসআই মো. মোক্তার হোসেন বলেন, সারসহ জব্দ ট্রাকের চালকদের কাছে জানতে চাওয়া হয় এ সার কোথায় যাবে। তাদের কথাবর্তায় গরমিল দেখে সন্দেহ হয়েছিল। পরে থানায় এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় চালকদের। তারা জানান, সারগুলো মানিকগঞ্জ বিএডিসি থেকে গাজীপুরে নেওয়া হচ্ছিল। এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ বিএডিসির কর্মকর্তাদের সিলযুক্ত দুটি চালানও দেখান। এসব জব্দ করা হয়েছে। সাটুরিয়া থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে তিন দিনেও এর অগ্রগতির তথ্য জানাতে পারেননি কোনো পুলিশ কর্মকর্তাই।
সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিগগির কৃষকের অনেক সার প্রয়োজন হবে। এভাবে চোরাইপথে সার বিক্রি হলে সাটুরিয়াসহ মানিকগঞ্জের সব উপজেলায় কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হবে। তা দেখিয়ে চড়া মূল্য হাঁকবেন সার ব্যবসায়ীরা। মানিকগঞ্জ বিএডিসিতে থাকা সার এ জেলার জন্যই বরাদ্দ। ওই সার অন্য জেলায় পাচার হলে সব উপজেলায় সংকট দেখা দেবে বলেও মনে করেন তিনি। আব্দুল্লাহ আল মামুনের ধারণা, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অবৈধ সার ব্যবসায়ীরা এ কাজ করে থাকতে পারেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সমকালের সঙ্গে কথা হয় মানিকগঞ্জ বিএডিসির কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক (সার) মেহেদি হাসানের। তখনও পর্যন্ত সার জব্দের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি বলে জানান। এমনকি মামলার বিষয়টিও তিনি অবগত নন।
মেহেদি হাসানের ভাষ্য, ঢাকায় সার রাখার কোনো গুদাম নেই। গাজীপুরে গুদাম থাকলেও আকারে ছোট। মাঝেমধ্যে গাজীপুর ও ঢাকায় সার সরবারহ করা হয়ে থাকে। সাটুরিয়ায় পুলিশের হাতে জব্দ সার মানিকগঞ্জের কিনা তা গুদামের রেজিস্ট্রার বই না দেখে নিশ্চিত করতে পারবেন না তিনি।