বগুড়ায় ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের প্রতারণার স্বীকার অসহায় তরুণী


আশাদুজ্জামান আশা,বগুড়া : বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের চণ্ডী যান গ্রামের যৌতুক লোভী স্বামী-শশুর-শাশুড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে স্বামীর ঘর ছেড়েছে সাদিয়া আক্তার। প্রতারণা করেছে ম্যারেজ রেজিস্টার, এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। সরেজমিনে যেয়ে জানা যায়, ভুক্তভোগীকে পূর্ব থেকে ফুসলিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের চণ্ডীযান গ্রামের আখতার হোসেনের ছেলে আলী হাসান ১৪ই মার্চ ২০১৯ সালে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেন মোহরানা ধার্য করে রেজিস্ট্রি কাবিন মূলে বিবাহ করে। বিবাহের চার মাস না যেতেই আলী হোসেন এর বাবা মা মেনে নিবে না বলে ১৩ আগস্ট ২০২১ সালে ভুক্তভোগীকে তালাক প্রদান করে। এতে ভুক্তভোগী আদালতে মামলা দায়ের করলে মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে উক্ত আলী হাসান আবারো প্রেমের অভিনয়ের ফাঁদে ফেলে সাদিয়াকে ফুসলিয়ে বাড়ি থেকে বের করে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে এফিডেভিটের মাধ্যমে কোর্ট ম্যারেজ সম্পন্ন করে। কিন্তু ভুক্তভোগীকে নিজ বাড়িতে না নিয়ে কথিত আত্মীয়র বাড়িতে রেখে মেলামেশা করে। কিছুদিন পর স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যাবার আশ্বাস দিয়ে ভুক্তভোগীকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে উভয়ের পরিবারের সাথে সমঝোতা করে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে নতুন করে ৬ লক্ষ টাকা দেন মোহরানা ধার্য করে উসুল আদায়ের ঘর ফাঁকা রেখে রেজিস্ট্রি কাবিন মূলে বিবাহ সম্পন্ন করে গাড়িদহ ইউনিয়ন পরিষদের ম্যারেজ রেজিস্টার কাজী মো.শফিকুল ইসলাম এর সহযোগী খামারকান্দি নিবাসী সোলায়মান আলী। ভুক্তভোগীকে তার স্বামী নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর থেকে শুরু হয় ২ লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন। এক পর্যায়ে ৩০জুন২০২৩ তারিখে ভুক্তভোগী সাদিয়াকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করে স্বামীর আবারো ২লক্ষ টাকার যোতুকের দাবীতে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর থেকে ভুক্তভোগী বারবার স্বামীর বাড়িতে গেলেও যৌতুকের দাবিতে বাড়ি থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় ভুক্তভোগির পিতা বিবাহের কাবিনের নকল তুলতে গেলে উক্ত সোলায়মান আলী তালবাহানা শুরু করে। নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগীর পিতা আব্দুস সালাম বাদী হয়ে রেজিস্ট্রি কাবিননামা ছাড়াই পূর্বের কোর্ট ম্যারেজের কপি প্রদর্শন করে আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে কাবিনের নকল দিতে কালক্ষেপণ করে ছেলে পক্ষ এর নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করে ৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে লিখে দেয় যা ভুক্তভোগী পরবর্তীতে নকল তুলে দেখতে পান। ৫ লক্ষ টাকার গহনা দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে সাদিয়া এবং তার মা জানান, আমাদেরকে এক রতি স্বর্ণের গহনাও তারা দেয় নাই। ছেলের পক্ষের সাথে যোগ সাজসে টাকা লেনদেনের মাধ্যমে কাজী আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ইতোমধ্যে আব্দুস সালাম কর্মের উদ্দেশ্যে বিদেশে চলে যায়। অসহায় সাদিয়া তার মায়ের সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতায় কষ্টে জীবনযাপন করছে। বিচারের আশায় আদালতের বারান্দায় ঘুরছে দিনের পর দিন মাসের পর মাস। সাদিয়া এবং তার মা প্রশাসন এবং মানবাধিকার সংস্থা গুলোর কাছে দ্রুত সমাধান দাবি করেছেন। এ প্রসঙ্গে গাড়িদহ ইউনিয়ন ম্যারেজ রেজিস্টার কাজী শফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক সময় উসুলের ঘর ফাঁকা রাখা হয়। ছেলেপক্ষ পরে পরিশোধ করে। এখানেও তাই করা হয়েছে।