অনুসন্ধানী সংবাদ

স্কুলটির দ্বায়িত্ব নিতে চান না কোনো শিক্ষক

আক্তার 750x430 1
print news

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি  : ময়মনসিংহের ভালুকায় কোনো কারণ ছাড়াই ৭১ নম্বর কাদিগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ায় অন্য কোনো শিক্ষক ওই পদের দ্বায়িত্ব নিচ্ছেন না। নুপুর আক্তারকে সরিয়ে মাহমুদা পারভীন নামে এক সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তবে তিনিও দ্বায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এমতাবস্থায় বিদ্যালয়ে সঠিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে; নষ্ট হচ্ছে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ।স্কুলটির শিক্ষার্থীদের অবিভাবকদের অভিযোগ, একটি পক্ষকে খুশি করতেই মনগড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও) সৈয়দ আহমদ এবং সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) দেলোয়ার হোসেন।তারা বলেন, ‘অন্য সবার চেয়ে নুপুর আক্তার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সুনাম কুড়িয়েছেন। সকল শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়মুখী করেছেন। বিদ্যালয়ের পরিবেশ সুন্দর করেছেন। অথচ এত কিছুর পরও স্থানীয় একটি চক্রের রোষানলে পড়েছেন তিনি। প্রধান শিক্ষক নুপুরকে যে কোনো মূল্যে বিদ্যালয় থেকে সরাতে বেশ কিছুদিন ধরে চেষ্টা করছিল ওই চক্রটি। অবশেষে টিইও এবং এটিইও স্যারকে ঘুষ দিয়ে প্রধান শিক্ষককে সরিয়েছে তারা। তাই কর্তৃপক্ষের এমন মনগড়া সিদ্ধান্ত কেউ মেনে নিচ্ছেন না।’গত ২ নভেম্বর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে এক নোটিশের মাধ্যমে নুপুর আক্তারে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। একইসঙ্গে বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মাহমুদা পারভীনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়।এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের দাবি, মাহমুদা পারভীন আগে থেকেই দ্বায়িত্ব নিতে অপারগতা জানান, কিন্তু তার কথা শোনেননি টিইও এবং এটিইও।এমন সিদ্ধান্তের পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়-সংলগ্ন কাচিনা-মল্লিকবাড়ি সড়কে ঝাড়ু নিয়ে মানববন্ধন ও মিছিল করে এলাকাবাসী। মানববন্ধনে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহমদ ও সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তোলা হয়।এ বিষয়ে কথা হয় নুপুর আক্তার বলেন, ‘এলাকায় আমার কিংবা আমার স্বামীর সঙ্গে যে কারও মনোমালিন্য থাকতে পারে। এজন্য আমাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে, এমনকি বিদ্যালয় থেকেও সরাতে উঠেপড়ে লেগেছে চক্রটি। শিক্ষকতা পেশায় আছি বলেই চক্রটি সহজেই চক্রান্ত করতে পারছে। তাদের ইশারায় আমাকে পদ থেকে সরানো হয়েছে। এতে আমার কোনো দুঃখ নেই।’মাহমুদা পারভীন বলেন, ‘আমি আগেই কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলাম, দ্বায়িত্ব নিতে পারব না। তবুও নোটিশের মাধ্যমে দ্বায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এজন্য বুধবার সকালে আবারও দ্বায়িত্ব থেকে আমাকে সরাতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু গিয়ে কাউকে পাইনি। আমার একজন আত্মীয় অসুস্থ হওয়ায় দ্রুত চলে আসতে হয়েছে।’উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহমদ বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তেই নুপুর আক্তারকে তার পদ থেকে সরানো হয়েছে। আমি কারও পক্ষ হয়ে কিংবা টাকার বিনিময়ে এটি করিনি।‘নুপুর আক্তার ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব না নিলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে। এরপর যা সিদ্ধান্ত আসবে, সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।’এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পরিবেশ সুষ্ঠু করতে নুপুর আক্তারকে ওই পদ থেকে সরানো হয়েছে। তবুও অহেতুক মানববন্ধন করে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’বিদ্যালয়ের পরিবেশ কি সুষ্ঠু ছিল না- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুনেছি নুপুর আক্তার ও এলাকার আরেকটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এটি এখন বিদ্যালয় পর্যন্ত গড়িয়েছে। ফলে বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।‘তবে ব্যস্ততার কারণে আমি বিদ্যালয়টিতে এখনও পরিদর্শনে যাইনি। যেকোনো দিন গোপনে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করব। কেউ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব নিতে না চাইলে নুপুর আক্তারকেই দ্বায়িত্ব দেয়া যায় কি না, সে বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’কোনো শিক্ষক কিংবা শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যায় প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।এর আগে স্কুলের সীমানা থেকে স্থানীয় সাইফুল ইসলাম ও তার জামাতা রমিজ খানের বিরুদ্ধে বাঁশ কেটে মাটি ভরাট করে দখলের অভিযোগ করলেও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে টিইও সৈয়দ আহমেদ নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী৷ গত মাসে এই বিদ্যালয়ে নুপুর আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে বহাল রাখতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে শিক্ষর্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে তিনবার আবেদন করা হয়। তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহমদ ও সহকারি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন এসবের কোনো কিছুতেই পাত্তা দেননি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। সাইফুল ইসলাম ও তার জামাতা রমিজ খানের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়েই উপজেলার দুই শিক্ষা কর্মকর্তা নুপুর আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সরিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

 

*গুরুত্বপূর্ণ  সব সংবাদ ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়।
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *