অনুসন্ধানী সংবাদ

প্যারালাইসিসে আক্রান্ত বাবাকে রাস্তায় ফেলে গেল ছেলে

1697354413 b04e1ebe28794862a950c2d8fc02852a
print news

কুমিল্লা প্রতিনিধি: থানীয় বাসিন্দা রাইহানা ইসলাম রুনার কাছ থেকে জেনে শনিবার বিকেলেই গোবিন্দপুর স্টেশন এলাকায়  খোঁজ নেয়া হয়। এরপর ওই রাতে চান্দিনার ইউএনও তাপস শীলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবহিত করা হয়। খবর দেয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বৃদ্ধের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন ইউএনও তাপস শীল।রোদ-বৃষ্টিতে মহাসড়কের পাশে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন সত্তরোর্ধ্ব বয়সী পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইসিস) এক বৃদ্ধ। মহাসড়কে হাজারও গাড়ি যাতায়াত করছে। পথচারীদের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন, দুই চোখ গড়িয়ে নোনা স্রোত নেমেছে তার। সেই স্রোতও একসময় শুকিয়ে যায়, অথচ তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে দেখা মিলছে না কারও।কেউ জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার ছেলেরা এসে আমাকে নিয়ে যাবে। আমাকে এখানে বসে থাকতে বলেছে। তারা আসবে…।’গত ৬ অক্টোবর ভোর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বড়গোবিন্দপুর স্টেশন এলাকায় বসে আছেন সাদা চুল-দাঁড়ির এই বৃদ্ধ। পাশে একটা ভাঙ্গা হুইল চেয়ার। বেশ কয়েকদিনের অযত্ন আর অবহেলায় পাগল পাগল লাগছে তাকে।প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হওয়ায় বাঁ হাত ও পা তেমন নড়াচড়া করতে পারেন না তিনি। ফলে একই স্থানে মল-মূত্র ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন এই বৃদ্ধ। দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেলেও কেউ তার খোঁজ নিতে আসেনি। স্থানীয়দের মধ্যে অধিকাংশই এক নজর দেখে বাড়তি ঝামেলা মনে করে এড়িয়ে গিয়েছেন তাকে। আবার মন কাঁদলেও আইনি ঝামেলার ভয়ে অনেকে পাশে এসে দাঁড়াতেও সংশয় প্রকাশ করেছেন।তবে এদের মধ্যেই ব্যতিক্রম একজনকে পাওয়া গেল। তিনি দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের বাসিন্দা রাইহানা ইসলাম রুনা। বৃদ্ধের মঙ্গল কামনায় এগিয়ে আসেন তিনি।রুনা বলেন, ‘৮ অক্টোবর সকালে আমি মহাসড়কের গোবিন্দপুর স্টেশনে নেমে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় উঠব, তখন দেখি এই বৃদ্ধ লোকটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক মানুষ।‘গত ২৯ সেপ্টেম্বর আমার বাবা মারা গেছেন। ওনাকে দেখার পর আমার বাবার কথা মনে পড়ে গেল। তাই আবেগ ধরে রাখতে পারিনি।’তিনি বলেন, ‘কাছে গিয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলার পর জানতে পারি, ৫ অক্টোবর রাতে তার ছেলেরা নাকি হাসপাতাল থেকে বাড়ি নেয়ার কথা বলে হুইল চেয়ারে এখানে বসিয়ে রেখে চলে গেছেন।‘তার একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতে আমি চান্দিনা থানা পুলিশ ও উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করি। কিন্তু আমার কথা কেউ কানে তোলেনি। এক সপ্তাহ ধরে তাদের পেছনে ঘুরেও কোনো কাজ না হওয়ায় অবশেষে আমি সাংবাদিকদের বিষয়টি জানাই।’

 মহাসড়কের ঠিক পাশেই বসে আছেন বৃদ্ধ। হুইল চেয়ার থেকে পড়ে কপালের পাশে ও পায়ে চোট পেয়েছেন তিনি। মল-মূত্র ত্যাগ করে নিজেই ধুলায় চাপা দিলেও দুর্গন্ধে চারপাশ একাকার। অসুস্থতার পাশাপাশি অনাহারে মুখ দিয়ে ঠিক মতো কথা বের হচ্ছে না তার।অস্পষ্ট ভাষায় তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন অসুস্থ। আমাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাতে গাড়ি থেকে নামিয়ে এখানে রেখে যায় আমার ছেলে হারুনসহ আরও দুইজন।’তিনি জানান, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের ভবানী জীবনপুরের নয়নপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা তিনি। বড় ছেলে হারুন, মেজ ছেলে মঈন ও ছোট ছেলে জসিম উদ্দিন- সবাই চাকরি করেন।এরপর শনিবার রাতেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাপস শীলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবহিত করে। খবর দেয়ার ঘণ্টাখানেক পরই রাত ১০টার দিকে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে বৃদ্ধের মুখ থেকে বিস্তারিত শোনেন। এরপর গাড়িতে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন ইউএনও তাপস শীল। রেজিস্ট্রারে অভিভাবকের স্থানে নিজের নাম লিখে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন ইউএনও।এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান বলেন, ‘ইউএনও স্যার রাতে ওই বৃদ্ধকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর থেকে আমরা চিকিৎসা ও সেবা-শুশ্রূষা চালিয়ে যাচ্ছি।’তিনি বলেন, ‘বৃদ্ধের বাঁ হাত ও বাঁ পা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। বেশ কয়েকদিন অযত্ন-অবহেলায় থাকায় এবং বার্ধক্যজনিত কারণে কিছুটা মানসিক অস্থিরতাও রয়েছে। আরও কোন সমস্যা আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করছি।’

ইউএনও তাপস শীল বলেন, ‘অমানবিক এ ঘটনাটি আমি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছি। মহাসড়কের গোবিন্দপুর স্টেশনের আশরা রাস্তার মাথা থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি।’বৃদ্ধের নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই করে পরিবারের লোকদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

ইউএনওর এমন মানবিক গুনকে সাদুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

* দেশ  বিদেশের  সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *