অনুসন্ধানী সংবাদ

গাজীপুরে ৪ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনে সোর্স-ওসির কথোপকথন : ঘুষের টাকা পেয়ে ওসি বলেন, ‘দ্রুত চলে এসো’

salo 1697482757
print news

গাজীপুর প্রতিনিধি :
গাজীপুরে মাদক মামলায় চালান না দেওয়ার শর্তে পুলিশের সোর্স পরিচয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন এক যুবক। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে যাওয়ার পর জেলাজুড়ে চলছে তোলপাড়। ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকায়। জানা যায়, টঙ্গীর কেরানীরটেক বস্তির মাদক ব্যবসায়ী রুনা বেগমকে মামলা না দেওয়ার শর্তে সোর্সের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা ঘুষ নেন পুবাইল থানার ওসি শফিকুল ইসলাম। বস্তির একটি কক্ষে ব্যাগভর্তি টাকা বের করার দৃশ্যসংবলিত গোপন ভিডিও ফাঁস হয় সম্প্রতি। ভিডিওতে পুলিশের সোর্স হৃদয়ের মোবাইল ফোনে তার কণ্ঠে শোনা যায় ‘স্যার পুরাটাই পাইছি’। এ কথা শোনার পর ওসি বলেন ‘চলে আসো, চলে আসো’।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৬ আগস্ট পুবাইল থানায় দায়ের করা একটি মাদক মামলার এজাহারভুক্ত পলাতক আসামি রুনাকে গ্রেপ্তারে গত ১ অক্টোবর সন্ধ্যায় টঙ্গী পূর্ব থানাধীন কেরানিরটেক বস্তিতে অভিযান চালায় পুবাইল থানা পুলিশ। সেসময় পুলিশের সঙ্গে অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের ধস্তাধস্তি, ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে ঘটনাস্থল থেকে রুনাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসে। এ সময় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় তার স্বামী সুমনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিন গভীররাতে রুনার হায়দ্রাবাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয় দাবি পুলিশের। পরদিন পুবাইল থানায় মাদক মামলা ও টঙ্গী পূর্ব থানায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। মামলা হওয়ার পর গোপন ক্যামেরায় করা ভিডিওটি ফাঁস করে দেন রুনার স্বজনরা।তবে পুবাইল থানার ওসি শফিকুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মুঠোফোনের ওই কণ্ঠ তার নয়। আর সোর্স হৃদয়কেও তিনি চেনেন না।ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, রুনাকে গ্রেপ্তারের পরের দিন রুনার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে কেরানীরটেক বস্তিতে যান সোর্স হৃদয় ও আরেক মাদক কারবারি মুহুরি আলাউদ্দিন। সেখানে একটি কক্ষে সোর্স হৃদয় ও আলাউদ্দিন জানায়, ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিলে আসামি রুনা ও তার স্বামী সুমনকে অন্য মামলায় চালান দেবে না পুলিশ। এক পর্যায়ে ব্যাগ থেকে ৪ লাখ টাকা বের করে সোর্স হৃদয়ের হাতে দেন রুনার স্বজনরা। ওই টাকা পেয়ে সোর্স হৃদয় বলেন, ‘আমি স্যারের সঙ্গে এক মিনিট কথা বলে নেই।’ পরে মুঠোফোনে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ফোন দেন হৃদয়। রুনার স্বজনদের দাবি ওই পুলিশ কর্মকর্তা পুবাইল থানার ওসি শফিকুল ইসলাম। ওই সময় সোর্স হৃদয়ের মোবাইল ফোন লাউড স্পিকার দেওয়ায় গোপন ভিডিওতে ওসির কণ্ঠ শোনা যায়। সোর্স হৃদয় টাকা গ্রহণের পর ওসি ‘চলে আসো, চলে আসো’বলে দ্রুত ফোন কেটে দেন। যাওয়ার আগে হৃদয় বলে যান, ‘আমি আপনার ছোট ভাই। আপনার বোন ও বোনের স্বামীর কিছু হবে না। তাকে অন্য কোন মামলায় চালান দেবে না।’স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে হৃদয় প্রায়ই টাকা দাবি করে আসছিল। টাকা না দিলেই পুলিশের মাধ্যমে নানা অজুহাতে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করা হয়।রুনার বোন কারিমা আক্তার বলেন, আমার বোন ও বোনের জামাইকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা দাবি করে পুলিশ। পরে আমার বোন প্রথমে ১ লাখ টাকা দেবেন বলে জানান। এরপর ৪ লাখ টাকাই দেওয়া হয়। অথচ আমার বোন ও ভগ্নিপতির বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে।স্থানীয় সূত্র জানায়, পুবাইল থানার এসআই হুমায়ূন কবির টঙ্গী পূর্ব থানায় থাকাকালে বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পুবাইল থানায় বদলি হওয়ার পর ওই থানায় মাদকসহ আসামি গ্রেপ্তার হলে টঙ্গীর মাদক ব্যবসায়ীদের নাম ঠুকে দেন। এরপর চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেন। এর আগে টঙ্গী পূর্ব থানায় থাকাকালীনও বিভিন্ন সময় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতার অভিযোগ উঠে এসআই হুমায়ুনের বিরুদ্ধে।এদিকে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, অভিযানের সময় ঘটনাস্থলে পুলিশের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কথিত সোর্স হৃদয়। পরদিন টাকা লেনদেনের ঘটনায়ও মূল ভুমিকায় দেখা যায় হৃদয়কে। এমনকি ১৬ আগস্ট রুনার বিরুদ্ধে দায়ের করা পুবাইল থানায় মাদক মামলার এজাহারেও এক নাম্বার সাক্ষী হৃদয়।এ বিষয়ে পুবাইল থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হৃদয়কে তো পুলিশ সেখানে পাঠায়নি। এটা তাদের (সোর্সদের) টাকা নেয়ার কৌশল। হৃদয়টা কে আমরা তো জানিনা। আপনারা তাকে খুঁজে বের করেন।তবে ওসি হৃদয়কে চিনেননা দাবি করলেও কথিত সোর্স হৃদয়ের দাবি, তিনি পুবাইল থানার বিভিন্ন অভিযানে গাড়ি ভাড়া দেন। রুনাকে গ্রেপ্তারের দিনও তিনি গাড়িসহ অভিযানে অংশ নেন। রুনার পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিলেও পরে সেই টাকা ফেরত দিয়েছেন বলেও দাবি করেন সোর্স হৃদয়।

কে এই হৃদয়?

টঙ্গীর মাদক কারবারিদের ঘাঁটি খ্যাত ব্যাংকের মাঠ বস্তির শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মোমেলা বেগমের মেয়ের স্বামী হৃদয়। একাধিকবার ভুয়া পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তিনি। এছাড়াও তার ব্যবহৃত গাড়ি দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক নিয়ে আসে মাদক কারবারিরা। সোর্স পরিচয়ে বিভিন্ন মানুষকে হয়রানি করে টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে হৃদয়ের বিরুদ্ধে। ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণার চেষ্টাকালে ২ নারীসহ ৪ ভুয়া সাংবাদিককে আটক করে পুলিশ। ওই চারজন প্রতারকের একজন হৃদয়।

 

* দেশ  বিদেশের  সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *