ধর্ম মতামত

জানাজার নামাজের গুরুত্ব

1674618599 a3445add7bff84e8700566c68ae550bd
print news

মুফতি আতাউর রহমান : কোনো মুসলমান মারা গেলে জানাজার নামাজ আদায় করার পর তাকে দাফন করা হয়। জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া তথা সমগ্রিক ফরজ। যদি সমাজের একদল মানুষ মৃত ব্যক্তির জানাজা আদায় করে, তবে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যাবে। আর কেউ তা আদায় না করলে সবাই গুনাহগার হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃতের জন্য সালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাজায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কিরাত, আর যে ব্যক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দুই কিরাত। জিজ্ঞাসা করা হলো দুই কিরাত কী? তিনি বললেন, দুটি বিশাল পর্বত সমতুল্য (সওয়াব)। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩২৫)

জানাজা নামাজের রহস্য

জানাজার নামাজের প্রতি ইসলাম এত বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কিছু অন্তর্নিহিত কারণ আছে। যা নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

১. মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ : পৃথিবীর নিয়ম হলো, যখন কোনো ব্যক্তি কোনো রাজদরবারে নতুন আগমন করে, তখন তাঁর জন্য উপস্থিত ব্যক্তিরা বিনয়ের সঙ্গে সুপারিশ করতে থাকে। যেন আগত ব্যক্তির জন্য উত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তেমনি কোনো মুসলমান যখন পৃথিবী ছেড়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়, তখন মুমিনরা জানাজার মাধ্যমে তাঁর পরকালীন জীবনের কল্যাণ কামনা করে। আল্লাহর দরবারে মুমিনের এই সুপারিশের বিশেষ মূল্য আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিম মারা গেলে, তার জানাজায় যদি এমন ৪০ জন দাঁড়িয়ে যায়, যারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করে না, তবে মহান আল্লাহর তার অনুকূলে তাদের প্রার্থনা কবুল করেন। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০৮৮)

২. আল্লাহর সুসংবাদ লাভ : হাকিমুল উম্মত আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) বলেন, ‘মানুষের আত্মা দেহ ত্যাগ করার পরও অভ্যন্তরীণ ইন্দ্রিয়গুলো সঙ্গে সঙ্গে অক্ষম হয় না; বরং তাতে অনুভূতি অবশিষ্ট থাকে। জাগতিক জীবনে অর্জিত জ্ঞানও তাঁর সঙ্গে থাকে। এই সময় ঊর্ধ্বজগৎ থেকে তার প্রতি এক ধরনের জ্ঞান ও বার্তা অবতীর্ণ হয়। যার ভিত্তিতে সে শাস্তি বা প্রশান্তি অনুভব করে। এই সময় যদি আল্লাহর বান্দারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে, মৃত ব্যক্তির জন্য সদকা করে, তবে মৃত ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে উপকারী জ্ঞান ও বার্তা লাভ করে। (যুক্তির আলোকে শরয়ি আহকাম, পৃষ্ঠা ১১০)

৩. আমৃত্যু ভ্রাতৃত্ব : পৃথিবীতে মুমিনের সঙ্গে মুমিনের ভ্রাতৃত্ব আমৃত্যু। মৃত্যুর পরও তা অটুট থাকে এবং ভাই হিসেবে তার অধিকার শেষ হয়ে যায় না। এ জন্য নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের অধিকার পাঁচটি। তা হলো—১. সালামের উত্তর দেওয়া, ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নেওয়া, ৩. জানাজার অনুসরণ করা, ৪. দাওয়াত কবুল করা, ৫. হাঁচির উত্তর দেওয়া। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৪০)

৪. ক্ষমার শিক্ষা : জানাজার নামাজে দাঁড়িয়ে মুমিন ব্যক্তি সবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। যা তাকে পারস্পরিক ক্ষমার শিক্ষা দেয়। বিশেষত মৃত ব্যক্তির প্রতি যেন তার মনে কোনো ক্ষোভ ও কষ্ট ধরে না রাখে। জানাজায় সে পাঠ করে, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড়, পুরুষ ও নারী সবাইকে ক্ষমা করে দিন। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৯৮)

৫. মৃত্যুর স্মরণ : জানাজায় উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে জীবিত ব্যক্তিদের ভেতর মৃত্যুর স্মরণ জাগ্রত হয়। আর মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে। বারা (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে এক জানাজায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি কবরের কিনারে বসে কাঁদলেন, এমনকি তাঁর চোখের পানিতে মাটি ভিজে গেল। অতঃপর তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা, তোমাদের অবস্থাও তার মতোই হবে, সুতরাং তোমরা প্রস্তুতি গ্রহণ কোরো। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৯৫)

আল্লাহ সবাইকে উত্তম জীবন দান করুন। আমিন

 

* দেশ  বিদেশের  সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *