ফিচার

সংগ্রামী নারী রুমানার সমাজ পরিবর্তনের গল্প

MA 15
print news
মোঃ আব্দুল্লাহ আল মারুফ ,ঝিনাইদহ :
সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের জীবণকে বদলে দেওয়ার কারিগর রুমানা পারভীন রুমা। ২০০৫ সালে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দুলালমুন্দিয়া গ্রামের মির আমিরুল ইসলামের ছেলে মীর শরিফুল ইসলামের সাথে। তিনি মাগুরা জেলার পৌর এলাকার কলেজ পাড়ার বাসিন্দা মৃত শামসুল আলমের দ্বিতীয় কন্যা।
স্বামীর কনফেকশনারি ও ব্রয়লার মুরগির ফার্মের ব্যাবসায় হঠাতই ধস । স্বচ্ছল ব্যাবসায়ী স্বামীর সংসারে দুই ছেলেকে নিয়ে কঠিন কালো দিনের শুরু । মুখ ফিরিয়ে নেয় আত্মীয়-স্বজন পরিচিতজন বন্ধু-বান্ধব সকলেই । এমনই এক পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা রুমার । যুব উন্নয়ন থেকে ২০১৫ সালে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কিন্তু যথেষ্ট পুঁজি না থাকায় উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, পোশাকের উপর যুব উন্নয়ন থেকে দুইবার নেওয়া প্রশিক্ষণ, বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমী থেকে মোবাইল সার্ভিসিং এর উপর নেওয়া প্রশিক্ষণ এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেভাবে তার জীবনে কাজে আসেনি । তবে দমে যাওয়ার পাত্রী না রুমা । ২০১৮ সালে স্থানীয় অসহায় দরিদ্র মহিলাদের নিয়ে ‘পুনর্গঠনমূলক মহিলা উন্নয়ন সংস্থা’ গঠন করেন । বর্তমানে তার গঠিত সংস্থায় ৩৫ জন স্থানীয় নারী সদস্য রয়েছেন। সংস্থাটি কালীগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতর কর্তৃক অনুমোদিত।
জানাযায়, সংস্থার সদস্যদের নিয়ে তিনি স্থানীয়ভাবে বাড়ি বাড়ি যেয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, নারী নির্যাতন, শিশু ও বয়স্কদের মানসিক বিকাশ সাধন, আত্মহত্যায় নিরুৎসাহিত করা, শিশু-কিশোরদের অধিক মোবাইল ব্যবহারের অপকারিতা এবং নৈতিক শিক্ষার ব্যাপারে আলোচনা করেন। শুক্র শনিবার মাত্র দুইটি কম্পিউটার দিয়ে সম্পূর্ণ ফ্রি শিশু-কিশোর ও নারীদের বিভিন্ন ব্যাজে ভাগ করে তিনি নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। পাশাপাশি তিনি দুস্থ, অসহায় ও যুবা নারীদের জন্য দর্জি ও নকশী কাঁথা তৈরির প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। অল্প সংখ্যক বই দিয়ে নিজের তৈরি একটি লাইব্রেরির মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী ও নারীদের তিনি জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করছেন। রুমানা পারভীন রুমার স্বামী মীর শরিফুল ইসলাম জানান, আমি আমার স্ত্রীর মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা, পরোপকারিতা, সামাজিক কুসংস্কার, নারীদের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করার প্রবল আগ্রহ লক্ষ করি।
MA 14
রুমানার ব্যক্তিগত কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের প্রশিক্ষণার্থী বর্ষা খাতুন বলেন, রুমা আন্টির কারণে আমার বাবা-মা আমাকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ করানোর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে।
রুমানা পারভীনের গড়ে তোলা ‘পুনর্গঠনমূলক মহিলা উন্নয়ন সংস্থা’র’ সভানেত্রী মর্জিনা আক্তার নয়ন বলেন, এই সংস্থার মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া নারী সমাজকে উৎসাহিত করতে এ সংস্থার ভূমিকা অনন্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নানা সংকটে আমাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
শারমিন খাতুন নামের এক নারীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি দর্জির কাজ কিছুই জানতাম না। এখানে এসে আমি কাজ শিখেছি। আমার মত আরো অনেক মেয়ে এখানে দর্জি প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।সংগ্রামী নারী রুমানা পারভীন রুমার নিকট সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝিনাইদহ যশোর মহাসড়কের দুলালমুন্দিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে নিজ বাড়িতে “নকশী ঘর এন্ড অহনা টেইলার্স “নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে আমি এইসব কার্যক্রম পরিচালনা করছি। ভবিষ্যতে আমার একটি গার্মেন্টস করার পরিকল্পনা আছে। মাত্র দুইটি কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। কম্পিউটারের সংখ্যা বাড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও অর্থের কারণে সম্ভব হচ্ছে না।
কালীগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাম্মৎ তাসলিমা বেগম বলেন, সমাজে প্রতিকূল পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে নিজ প্রচেষ্টায় ঘুরে দাঁড়ানো নারীদের একজন হলেন রুমা। কালিগঞ্জ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সংগ্রামী এই নারীর পাশে আছে , থাকবে।

* দেশ  বিদেশের  সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *