চট্টগ্রাম বাংলাদেশ

তথ্য গোপন করে আইনি মতামত, অবশেষে মেয়াদোত্তীর্ণ অবৈধ কমিটির দায়িত্বে পেকুয়া বাজার সমিতি

305091634 456755869752863 5 2209120653
print news

প্পেকুয়া প্রতিনিধি :কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার বৃহত্তম বাণিজ্যিক কেন্দ্র পেকুয়া বাজার ব্যবসায়ী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: (পেকুয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতি) দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনিবার্চিত কমিটি কর্তৃক কোটি কোটি টাকা লোপাট এবং মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি এখনও বহাল তবিয়তে থাকলেও রহস্যজনক কারণে এডহক কমিটি গঠন করেনি জেলা সমবায় কর্মকর্তার কার্যালয়।তথ্য গোপন করে জেলা আইন কর্মকর্তার কাছ থেকে একটি মতামত নিয়ে সমবায় আইন ও বিধি অমান্য করে জেলা সমবায় কর্মকর্তাকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে ঠিকিয়ে থাকতে মিশনে নেমেছে সমিতির অবৈধ কমিটির নেতা মিনহাজ- ইকবালের নেতৃত্বে তার পরিষদ। তবে ওই পরিষদের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে গত ১০ অক্টোবর থেকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রয়েছেন ডিরেক্টর জাফর আলম।

জানা গেছে, সমিতির নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে সমবায় অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় যুগ্ন নিবন্ধক এবং কক্সবাজার জেলা সমবায় কর্মকর্তার দপ্তরে গত ০১/১০/২০২৩ ইংরেজী তারিখে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সমিতির সাধারণ সদস্য সদস্য হাজী গিয়াস উদ্দিন ও আবদুর রহিম বাদশা।লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, পেকুয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতি বিগত ১৫/০৩/২০২০ইংরেজী তারিখে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতা গ্রহন করেন। নিয়ম অনুযায়ী ১৫/০৩/২০২৩ ইংরেজীতে কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এখনও পর্যন্ত উক্ত কমিটি বহাল তবিয়তে থেকে সমিতির সদস্যদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সদস্যদের ডিপিএস এর মেয়াদ শেষ হলে বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ডিপিএস হোল্ডারকে ১০ বছরের জমার আসল টাকা উত্তোলন করতে ২০%ঘুষ হিসাবে গ্রহণ করে বাকী টাকা ৫-৭ কিত্তিতে পরিশোধ করছেন বর্তমান অনির্বাচিত কমিটি। কিন্তু উত্তোলন ভাউচারে দেখানো হয় লভ্যাংশসহ পরিশোধ করা হয়েছে। এইভাবে গত ৩বছরের প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা আত্মসাএছাড়া সঞ্চয়ের টাকা উত্তোলনের জন্য গেলে সদস্যদেরকে ২০% ঘুষ হিসাবে দিতে হয়। ৭বছরের দ্বিগুণ টাকা ও আত্মসাৎ করেছে। গত ৩বছরের সমিতির লোকসানের পরিমাণ দেখানো হয়েছে এক কোটি বাইশ হাজার টাকা। কালব প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে পাওনা রয়েছে প্রায় এক কোটি চল্লিশ হাজার টাকা। সমিতির নেতৃবৃন্দরা স্বনামে-বেনামে দেড় কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। সম্প্রতি সমিতির ২-৩ জন কর্মী নেতৃবৃন্দের আত্মসাৎ কান্ড সহ্য করতে না পেরে পদত্যাগ পত্র দিয়ে চাকুরী ছেড়ে দিয়েছেন। পদত্যাগপত্র দিয়ে চাকুরী ছেড়ে দিয়েছেন সমিতির এমন একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যদি এডহক কমিটি হয় বা নির্বাচিত কমিটি আসে তাহলে টাকার হিসাব তারা কীভাবে দিবে? তাই তারা পদত্যাগ করে চলে যাচ্ছেতবে বর্তমান কমিটি হুংকার দিয়ে বলছেন, তারা জেলা সমবায় কর্মকর্তাকে যেই কোন উপায়ে ম্যানেজ করেছেন, তাই তাদের কেউ কিছু করতে পারবেনা। এমনকি নির্বাচনও হবেনা। যারা তাদের এমন কাণ্ডে প্রতিবাদ করেন তাদেরকে হুমকি প্রদান করতেও দেরি করেননা।

পেকুয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য হাজী গিয়াস উদ্দিন জানান, বর্তমানে যে কমিটি বহাল আছে তার মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ১৫ মার্চ। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির কারণে এখনও কোন নির্বাচন না দিয়ে ও কোন এডহক কমিটি না করে বহাল তরিয়তে লুটেপুটে খাচ্ছে সমিতি। সমিতি লোকসানের কবলে পড়েছে। পূর্বের কমিটির ৮ম ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছিল ১৯/০১/২০২০ইংরেজী তারিগত ২০২০ ইংরেজীর ৮ম ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনের বিরুদ্ধে সমিতির সদস্য হাজী গিয়াস উদ্দিন মহামান্য হাইকোর্টে মামলা করে নির্বাচন স্থগিত করেন। যার মামলা নং-৩৯০/২০২০ইং। পরে কক্সবাজার জেলা সমবায় কর্মকর্তার কার্যালয়ের স্মারক নং ১৪৯ তারিখ- ০২/০২/২০২০ইং মূলে চকরিয়া সমবায় অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক মোঃ তাহের, পেকুয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতা মোঃ মিনহাজ উদ্দিনসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়োগ করেছিলেন।সমিতির সদস্য হাজী গিয়াস উদ্দিন প্রশ্ন তুলেন, মিনহাজ উদ্দীন কিভাবে ৫জানুয়ারী ২০২০সালে সভাপতি হলেন। ভোট হওয়ার তারিখ ছিল ১৯জানুয়ারী ২০২০ইংরেজী। উক্ত অন্তর্তীকালীন কমিটির মেয়াদ ছিল চার মাস। কিন্তু উক্ত কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করেনি। তাহলে ২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ইং তারিখ হতে ৮ অক্টোবর ২০২০ইং ৯ম ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ দীর্ঘ ৯মাস কারা দায়িত্ব পালন করেছেন? কিভাবে করেছেন? কোন আইন করেছেন? বর্তমান কমিটি উক্ত ৯মাস বেআইনীভাবে দায়িত্ব পালন করে কোটি টাকার উপরে আত্মসাৎ করেছেন। এখনও কিভাবে উক্ত কমিটি বহাল আছে তা আমাদের জানা নেইএখন ওরা বলেন যে সারা জীবনে ও তারা ভোট (নির্বাচন) দেবেন না। তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, এইভাবে যদি জেলা সমবায় অফিসারের আসকারা পেয়ে সমবায় আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলী প্রদর্শন করে বছরের পর বছর নির্বাচন ছাড়া সমিতি চালায় তাহলে আমরা সাধারণ সদস্যরা কি করে সমিতি রক্ষা করব? এছাড়া বিগত অডিট রিপোর্টে সমিতির ব্যাপারে অনেক অনিয়মের কথা দেওয়া আছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কক্সবাজার জেলা সমবায় অফিসারকে অনুরোধক্রমে নির্দেশও প্রদান করেছিল অডিট কমিটি। এরপরও জেলা সমবায় অফিসার কোন ধরনের পদক্ষেপ নেননি।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গত নির্বাচনের আগে আপোষ রফার ভিত্তিতে প্রথমে সভাপতি হিসেবে মিনহাজ এর কয়েকমাস পরে ইকবাল, আজিজ, মাইন উদ্দিন, জাফর ও রিদুয়ান বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। তাদের রেজুলেশনে ওইভাবেই উল্লেখ আছে৷ কিন্তু সাবেক উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কামাল পাশাসহ তিনজনের নির্বাচন কমিশন তাদের নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফলাফলের ভিত্তিতে হয়েছে বলে রেজাল্ট সিটে উল্লেখ করেন। ওই নির্বাচনের আগে অবৈধ ভোটার বাদ দিতে বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন সদস্য গিয়াস উদ্দিন। মামলাটি আপিলের পর লিভ টু আপিল করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে নির্বাচন কমিশন। মামলাটি চলমান থাকা অবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ওই মেয়াদ শেষ হয় গত মার্চে। তারপর আরো ৮/৯মাস অবৈধভাবে কাটানোর পর জেলা সমবায় কর্মকর্তার নির্দেশে জেলা আইন কর্মকর্তা থেকে একটি মতামত নেন মিনহাজ-ইকবাল পরিষদ। ওখানে আইন কর্মকর্তার কাছে তথ্য গোপন করেন সমিতির নেতারা। এরপর একটি মতামত নেন। সেই মতামতে উল্লেখ করা হয় মামলা চলমান অবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠান আইনের পরিপস্থি হবে। একই সাথে এডহক কমিটি গঠন করা যাবেনা, দায়িত্ব পালন করবে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি। কিন্তু তারা জেলা সমবায় কর্মকর্তাকে দেয়া একটি দরখাস্তে মামলা চলমান অবস্থায় বিগত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বলে শিকার করেন।

আরো জানা গেছে, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোস্তফা জামান টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেনা। টাকা না পেলে তিনি বৈধকে অবৈধ করতে এক মিনিটও দেরি করেনা। এমনকি পেকুয়া বাজার সমিতি থেকে প্রতিদিন দুপুরের ভাত তাকে খাওয়াবে এমন বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়াও কোটি কোটি টাকার একটি লোকসান সমিতির কল্যাণের কথা তিনি চিন্তা না করে দুর্ণীতিগ্রস্ত নেতাদের ক্ষমতায় ধরে রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছেন। তবে পেকুয়া বাজার সমিতিতে দ্রুত এডহক কমিটি গঠন করা হবে জানান তিনি।

এক সমবায় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জেলা আইন কর্মকর্তার সাথেও প্রতারণা করেছে পেকুয়া বাজার সমিতির নেতারা। গত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় মামলা চলমান থাকা অবস্থায়। সেই কথা গোপন করেন তারা। এই আইনি মতামত নিয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা যদি তাদের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করে থাকেন তাহলে বিগত নির্বাচন (বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ)মামলা চলমান অবস্থায় অনুষ্ঠিত। তাহলে আইনের মতামত মতে তাদের দায়িত্ব পালন তিন বছর সম্পূর্ণ অবৈধ হবে। কিন্তু জেলা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা উৎকোচের মাধ্যমে ম্যানেজ হয়ে অবৈধকে বৈধ করার চেষ্টা চালিয়ে আসেছেন।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা সমবায় অফিসার মো: জহির আব্বাস এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেকুয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে তার দফতরে সমিতির কয়েকজন সদস্য লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বিষয়টি পেকুয়া উপজেলা সমবায় অফিসারের সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *