গাজায় গণহত্যা ও মানবিক বিপর্যয় রোধের সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে: জাতিসংঘ


আরব নিউজ : গাজা সিটিকে যখন ইসরাইলি সেনারা ঘিরে রেখেছে, যেকোনো সময় বড় হামলা শুরু হতে পারে, তখন জাতিসংঘের নিরপেক্ষ একদল বিশেষজ্ঞ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। বৃহস্পতিবার দেয়া জরুরি সতর্কতায় তারা বলেছেন, গাজায় গণহত্যা ও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় রোধের সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় শুক্রবার ইসরাইল সফরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ৭ই অক্টোবর ইসরাইলে হামাস রকেট হামলার পর এটা ইসরাইলে তার তৃতীয় সফর।
অনলাইন আরব নিউজ বলছে, জাতিসংঘের ওই বিশেষজ্ঞরা গাজা উপত্যকার এক ভীতিকর চিত্র তুলে ধরেছেন। সেখানে জনমানবশূন্য করে দেয়ার যে পরিকল্পনা নিয়েছে ইসরাইল, তা স্থগিতে ইসরাইলের অস্বীকৃতিতে তারা গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমরা মনে করি, ফিলিস্তিনিরা ভয়াবহ এক গণহত্যার ঝুঁকিতে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার এখনই সময়। এর দায় বর্তায় ইসরাইলের মিত্রদের ওপরও। তাদেরকে অবশ্যই এই বিপর্যয়কর পন্থা রোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের এই গ্রুপে আছেন সাতজন। এর মধ্যে আছেন নিরাপদ পানের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন বিষয়ক মানবাধিকারের স্পেশাল র্যাপোর্টিউর, খাদ্যের অধিকার বিষয়ক র্যাপোর্টিউর, আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের অধিকার বিষয়ক র্যাপোর্টিউর, বর্ণবাদ বিষয়ক র্যাপোর্টিউর, ১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনের দখলীকৃত ভূমির অধিকার বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিউর ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ।
তারা ইসরাইলের বিমান হামলায় গভীর ভীতি প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার রাতে গাজার উত্তরে জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পে বেপরোয়া হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ২০০ মানুষ। আহত হয়েছেন কয়েক শত। একে তারা আন্তর্জাতিক আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। তাদের ভাষায়- জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পে একটি আবাসিক ভবনে ইসরাইলের বিমান হামলা আন্তর্জাতিক আইনের নগ্ন লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ। নারী ও শিশু সহ একটি আশ্রয়শিবিরে থাকা বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে হামলা আইনের লঙ্ঘন এবং যোদ্ধা ও বেসামরিক লোকজনকে আলাদা করা বিষয়ক নিয়মের লঙ্ঘন। ২৭শে অক্টোবর সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সমর্থনে পাস হওয়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন। ওই প্রস্তাবে বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষিত রাখতে এবং আইনি, মানবিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আমরা আশা নিয়ে ওই প্রস্তাব গ্রহণ করেছি। কিন্তু এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। সব দিক দিয়ে গাজা ভেঙে পড়ছে।
গাজার মানুষ এখন বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি তারা এ জন্য জাতিসংঘের ওয়্যারহাউস থেকে আটা ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী লুটে নিয়েছে। পরিষ্কার পানির অভাবে শিশুদেরকে সমুদ্রের পানি পান করাতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা। এনেস্থেসিয়া না দিয়েই শিশুসহ রোগীদের অপারেশন করা হচ্ছে। গাজার অনেক প্রবীণ এবং পঙ্গু তাদের বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের বাড়িঘর এখন ধ্বংসস্তূপ। তারা তাঁবুতে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, গাজা এখন বিপর্যয়ের একটি ‘টিপিং পয়েন্টে’। সেখানে খাদ্য, পানি, ওষুধ, জ্বালানি এবং অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মারাত্মক প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে গাজার প্রায় ১৪ লাখ মানুষ আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত। ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সির জরুরি ১৫০টি আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই খুঁজছেন প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি। এ পর্যন্ত ইসরাইলের বোমা হামলায় জাতিসংঘের ৭০ জন কর্মী নিহত হয়েছেন।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।