অনুসন্ধানী সংবাদ

পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংস্কারে অনিয়ম

pekua news
print news

কক্সবাজার প্রতিনিধি : পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনা টেন্ডারে প্রায় কোটি টাকার সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ নামের একটি সংস্থা। বিনা টেন্ডারে নিজেদের ইচ্ছামতো সরকারি ভবনের নকশা পরিবর্তন করে যেনতেনভাবে কাজ বাস্তবায়ন করে দাতা সংস্থার টাকা লুটে নিতে তৎপর রয়েছে ইউনিসেফের কতিপয় অসৎ কর্মকতা-কর্মচারী ও কাজ বাস্তবায়নে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ৩ মাস ধরে পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিন তলা ভবনের নিচতলায় জরুরি বিভাগের পূর্বের কয়েকটি কক্ষের দেওয়াল ভেঙে নতুনভাবে ইটের গাঁথুনিসহ স্টিলের লাল রঙের দরজা ও জানালা লাগানো হয়েছে। আর তিন তলা ভবনের প্রবেশ পথে পিলার স্থাপনের মাধ্যমে কক্ষ তৈরির জন্যও কাজ করছে।
পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের শেষের দিকে বিশ্বব্যাংকের কক্সবাজারে কর্মরত প্রতিনিধিরা পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচওর কাছ থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংস্কারের জন্য চাহিদা চেয়ে একটি চিঠি দেন। এরপর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডাক্তার মহিউদ্দিন মাজেদ চৌধুরী ৫০/৬০টি আইটেমের সংস্কার কাজের জন্য বিশ্বব্যাংকের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধির কাছে লিখিতভাবে একটি পত্র দেন। এরপর বিশ্বব্যাংক দাতা সংস্থা ইউনিসেফের মাধ্যমে পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫ আইটেমের সংস্কার কাজ চলতি বছরের আগস্ট মাসে শুরু করেন। যদিও কাজ শুরু করার কথা ছিল জুন মাসে। নানা কারণে যথাসময়ে তারা কাজ শুরু করতে পারেনি।

ইউনিসেফের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান চট্টগ্রামের বুনিয়াদ প্রকৌশল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ পেয়ে পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষককে এক প্রকার অন্ধকারে রেখে নিজেদের ইচ্ছামতো তিন মাস ধরে কাজ করছেন ইউনিসেফ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প এলাকায় কাজ তদারক করার জন্য ইউনিসেফ কর্তৃক নিযুক্ত শাহেদ নামের একজন প্রকল্প প্রকৌশলী রয়েছে। প্রকল্প প্রকৌশলী বলেন, পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউনিসেফের তদারকিতে ২৫টি আইটেমের সংস্কার কাজ হচ্ছে। সম্পূর্ণ কাজ ইউনিসেফ দেখভাল কারছে। কাজটি কত টাকা বাজেটের বা টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছে কিনা তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।
জানা যায়, স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই দাতা সংস্থা ইউনিসেফ কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইউনিসেফের অর্থায়নে কোটি টাকার সংস্কার কাজ করা হলেও প্রকল্প পরিচিতিমূলক কোন সাইনবোর্ড টাঙানো হয়নি। কোটি টাকা বাজেটের কাজ করা হলেও এ প্রকল্প নিয়ে খোদ অন্ধকারে রয়েছে পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা। কেউ এ প্রকল্পের কাজ সম্পর্কে কিছুই জানে না।

দাতা সংস্থা ইউনিসেফের দায়িত্বরত অসাধু কয়েক কর্মকর্তার সমন্বয়ে বিনা টেন্ডারে সরকারি ভবনের নকশা পরিবর্তন করে অনিয়মের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। কোন কাজ কত টাকায় করা হচ্ছে, মালামাল কি রকম ব্যবহার করা হচ্ছে তাও জানেনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডাক্তার মহিউদ্দিন মাজেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এনজিও ইউনিসেফের মাধ্যমে কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজটি করছেন কিনা তার জানা নেই। তবে তিনি খুঁটিনাটি সবকিছু খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
জানা গেছে, ইউনিসেফের অসাধু কতিপয় কর্মকর্তার পছন্দমতো ঠিকাদার এনে পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনা টেন্ডারে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। নিয়ম হচ্ছে, সরকারি কোন কাজ এক লাখ টাকার উপরে হলে ডিএফপিভুক্ত জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগের সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু অজানা কারণে পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় কোটি টাকার সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে বিনা টেন্ডারে। পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কতিপয় কর্মকর্তার অনুমতির ভিত্তিতে বিনা টেন্ডার ভবন বর্ধিত ও জরুরি বিভাগের কক্ষ, অপারেশন থিয়েটার কক্ষ, ফার্মেসি কক্ষ, ডিউটি ডাক্তার কক্ষের সংস্কার কাজ করছে দাতা সংস্থা ইউনিসেফ নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ইউনিসেফের অর্থায়নে কি ধরনের কাজ হচ্ছে তা জানেনা পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খোদ প্রধান সহকারী কাউছার। তিনি বলেন, দাতা সংস্থা ইউনিসেফ সংস্কারের কাজ করছে শুনেছি। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তারা কাজ করছে তিনি মোটেও অবগত নন। কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডাক্তার বিপাশ খীসা  বলেন, ইউনিসেফ পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অত্যাধুনিক জরুরি বিভাগ করে দিচ্ছে। আরও বেশ কিছু কাজ করছে। এ কাজগুলো হলে পেকুয়ার মানুষ আরও সেবা পাবে। বিনা টেন্ডারে সরকারি ভবনের নকশা পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবনের পিলার ভাঙ্গা হচ্ছে না, ঊর্ধ্বমুখীও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে না। তাই এটিকে নকশা পরিবর্তন বলা যাবে না।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *