বরিশাল বাংলাদেশ

কুয়াকাটা বীচের পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় উদ্ভিদ ও ফলজ গাছের চারা রোপনের উদ্যেগ

DSC03421 scaled
print news

  • আধুনিক পর্যটন নগরী গড়ে তুলতে সমুদ্র সৈকতের কোলঘেষে মেরিন ড্রাইভের আদলে ৩ কি.মি. সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান।
  • সমুদ্র তীরে গড়ে ওঠা ছিন্নমূল বাসিন্দাদের পূনর্বাসনের মাধ্যমে বনায়ন সৃজন করে উপকূলে জলবায়ু সহনশীল ও সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধন সহ পরিবেশ রক্ষার দাবি।

আব্দুল কাইয়ুম (আরজু), উপকূল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। এখানকার সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের। পটুয়াখালীর সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে হাজারো পর্যটক ছুটে আসেন প্রতিনিয়ত। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সমাগম বেড়েছে দেশ-বিদেশের পর্যটকের। বিগত কয়েক বছর পূর্বে নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে হাজার হাজার গাছপালা ধ্বংস হয়ে অন্যতম এই সমুদ্র সৈকতের নান্দনিক সৌন্দর্য বিপর্যয়ের মুখে পরেছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে উপকূলের প্রকৃতি রক্ষায় দূর্যোগ সহনশীল বেড়ীবাধ সহ বনায়ন সৃজন করা হচ্ছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে সরকারের মাস্টার প্লান প্রকল্পের আওতাধীন রয়েছে।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় জেলা প্রশাসনের ট্যুরিজম পার্ক থেকে পূর্বে এক কিলোমিটার পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন ও কুয়াকাটা পৌর মেয়রের উদ্যোগে সম্প্রতি নানা প্রজাতির প্রায় ৭ হাজার উদ্ভিদ ও ফলজ গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। মোট ১৫ হাজার গাছের চারা রোপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানা যায়। এদিকে সমুদ্রের তীরে মেরিন ড্রাইভের আদলে ৩ কি.মি. একটি সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এমন সময়োপযোগী উন্নয়ন কাজ পর্যটকদের বিনোদনে অন্যান্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন পর্যটক সহ স্থানীয়রা। এছাড়াও পর্যটকদের বিনোদনের জন্য সৈকতের মূল কেন্দ্রে জেলা প্রশাসনের ট্যুরিজম পার্ক থেকে পূর্বে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান ফটক পর্যন্ত একটি পার্ক ও ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন দৃষ্টি নন্দন একটি লেক তৈরী করার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।

DSC0355

জানা গেছে, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের মূল কেন্দ্রে যত তত্র ময়লা আবর্জনা অপসারন, জেলেদের নোঙ্গর করে রাখা নৌকা, স্থানীয় বাসিন্দাদের অপরিকল্পিতভাবে ঝুপড়ির ঘর সহ সৈকতের পরিবেশ নষ্ট করছে এমন অব্যাস্থাপনা গুলোকে জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষায় নিরলস কাজ করছেন স্থানীয় প্রশাসন। পর্যটন বান্ধব নানামুখী কর্মকান্ডে পর্যটক সহ স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও সৃজনশীল এমন পর্যটন বান্ধব কর্মকান্ডে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধির পক্ষ হতে প্রশংশিত হয়েছেন কুয়াকাটা পৌর মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার।

কুয়াকাটা উপকূলের স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ বেলাল, শাহিনুর, মো. মিরাজ, মোসা. রেখা, মোঃ শাহাদাত সহ একাধিক বাসিন্দারা জানান, কুয়াকাটা সৈকতে সৌন্দর্য নিয়ে অতীতে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় পর্যটকদের নেতিবাচক মন্তব্য নিরসনে কুয়াকাটা পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সৈকতের সৌন্ধর্য বর্ধনে প্রায় ৭ হাজার নানা প্রজাতির গাছের চারা রোপন করেন। তারা আরো বলেন, দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের সমুদ্র সৈকতের একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় বলে বাংলাদেশ ছাড়াও বহির্বিশ্বের পর্যটকদের কুয়াকাটা ভ্রমণে দিনদিন আগ্রহ বেড়েছে। এসকল পর্যটকদের ধরে রাখতে কুয়াকাটা সৈকতের নান্দনিক পরিবেশ রক্ষা করা অতীব জরুরী। উপকূলের প্রকৃতি রক্ষায় বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী হিসেবে রূপ লাভ করবে। ইতোমধ্যে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত একটি আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র ঘোষনা করেছে সরকার।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মোঃ আনোয়ার-সাবিনা দম্পতি বলেন, ইতোপূর্বে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে আমাদের আপত্তি থাকলেও বর্তমানে তেমন কোনো প্রভাব নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে পদক্ষেপ নিয়েছে নিঃসন্দেহে তা কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্ধর্য বর্ধনের ব্যপক গুরুত্ব রাখবে। এবং পরিবেশ প্রতিবেশ সহ উপকূলে নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষায় এসকল গাছগুলো ভবিষ্যতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

DSC0372

 

বরিশাল থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটক পারভিন আক্তার বলেন, এর আগেও অনেকবার কুয়াকাটা সৈকতে ভ্রমনে এসেছি। তখন কুয়াকাটা এসে সৈকতে যে অগোছালো পরিবেশের মধ্যে আমাদের আনন্দ উপভোগ করতে হয়েছে তা ছিলো কিছুটা বিরক্তিকর। তবে বর্তমান সৈকতের নান্দনাকিতায় আমরা মুগ্ধ হয়েছি। সৈকতের মূল কেন্দ্র থেকে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান পর্যন্ত যেসকল সারি সারি গাছের চারা রোপন করা হয়েছে তা পূর্বে আমরা দেখিনি। কয়েক বছরের ব্যবধানে এসকল গাছপালা বেড়ে উঠলে কুয়াকাটা সৈকতে সৌন্ধর্যের আকর্ষন আরো বাড়বে। স্থানীয় প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ দেখে বেশ ভালোই লাগলো। তবে সমদ্র তীরে বনায়নের উদ্যেগ আরো আগে নিলে পরিবেশের জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করতো।

তবে পর্যটক সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে সমুদ্রে সৃষ্ট নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগে উপকূলে ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব বেশি সাধিত হয়। বিশেষ করে কুয়াকাটা পর্যটন নগরীর গুরুত্ব দেশের অর্থনিতীতে এর ব্যপক প্রভাব ফেলে। কিন্তু দেশের এই দক্ষিন উপকুল অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সরকারের কোনো প্রকল্প এখনো অনুমোদন দেয়া সম্ভব হয়নি। উল্লেখিত সৈকতের তীরে ১ কি.মি. এলাকার মধ্যে যেসকল গাছের চারা রোপন করা হয়েছে তা ভবিষ্যতে কুয়াকাটা সৈকতের মূল কেন্দ্রের সৌন্ধর্য ও পরিবেশ কিছুটা রক্ষা হলেও সমগ্র কুয়াকাটা উপকূলের জন্য উপর্যুক্ত কার্যকরীতা রাখেনা। স্থানীয় বাসিন্দা মহিবুল্লা মল্লিক, হাওয়া বেগম, তাসলিমা, মো. রুমান সহ একাধিক বাসিন্দাদের দাবি, উপকূলের অবশিষ্ট বনভূমি ধ্বংসের শেষ দ্বারপ্রান্তে পতিত হওয়ার আগেই সমুদ্র তীরবর্তী ছিন্নমূল বাসিন্দাদের যেসকল ভাসমান বসতি-স্থাপনা রয়েছে, তাদেরকে সরকারের তরফ থেকে বসবাসের বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে পূনর্বাসন করতে হবে। এবং বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে এসকল ফাঁকা জায়গা গুলোতে গাছের চারা রোপন করে বনায়ন সৃজনের মাধ্যমে, জলবায়ু সহনশীল উপকূল অঞ্চল; তথা কুয়াকাটা পর্যটন নগরীকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষাকল্পে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।

DSC0374

কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত উন্নয়নে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। পর্যটন ভিত্তিক পৌরসভা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষাসহ নান্দনিক পরিবেশে পর্যটকদের বিনোদনের চাহিদা মেটাতে জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় আমি সর্বাত্বক চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে সৈকতের মূল কেন্দ্রের পূর্বে ১ কি.মি. সমুদ্র তীরে নানা প্রজাতির প্রায় ৭ হাজার উদ্ভিদ ও ফলজ গাছের চারা রোপন করেছি। মোট ১৫ হাজার চারা রোপন করবো। পর্যটকের বাড়তি বিনোদনে সমুদ্র সৈকতের মূল কেন্দ্র থেকে পূর্ব দিকে দৃষ্টি নন্দন লেক ও পার্ক তৈরী করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও সৈকতে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘের একটি সড়ক মেরিন ড্রাইভের আদলে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। পর্যটক সহ স্থানীয়দের বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে সৈকতের কোলঘেষে এই সড়ক ধরে সমুদ্র দর্শনে বিশেষ গুরুত্ব রাখবে। এই তিন কি.মি. সড়কে সরকার ইতোমধ্যে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা আধুনিক পর্যটন নগরী গড়ে তুলতে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। উন্নয়নের গতিশীলতা ধরে রাখতে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র রূপদানে সরকারের একান্ত সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কুয়াকাটা সৈকত উন্নয়নে পৌরসভার সাথে সমন্বয় করে আমরা যথারিতি কাজ করছি। কুয়াকাটা সৌন্দর্যের প্রশ্নে জেলা প্রশাসন কোন আপোষ করবে না। আশা করছি অচিরেই কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য আরো বাড়বে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবির বিষয়ে তিনি জানান, কুয়াকাটা পৌরসভায় কোনো সরকারি জমি ফাঁকা নেই যেখানে এসকল ছিন্নমূল মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আশ্রয়নের ঘর করে দিবো। তবে চেষ্টা করছি যাতে সৈকতের পরিবেশ প্রতিবেশ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা যায় কিনা।
কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য ফিরে পেলে বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা, বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয় এমন মন্তব্য করেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *