বরিশাল বাংলাদেশ

সরে দাঁড়ালেন মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ

sadik
print news

বরিশাল অফিস : বরিশাল সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়রকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার চার দিন আগেই মেয়র পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সাদিক আব্দুল্লাহ তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল সিটি করপোরেশনে তিনি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বরাবর অব্যাহতির কাগজপত্র জমা দেন। এই সময় বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটুকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন…..

অব্যাহতি নিচ্ছেন  মেয়র সাদিক, দেখা হবে না চাচা-ভাতিজার

 

উল্লেখ্য, আগামী ১৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। সাদিক আব্দুল্লাহ নগরীর উন্নয়ন করতে না পারার সমালোচনার মুখে রয়েছেন। এ ছাড়া, রাজনৈতিক দিক দিয়েও বির্তকিত কর্মকাণ্ডের ফলে মনোনয়ন হারান ।

সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এক নম্বর সদস্য। তিনি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরিশাল-১ আসনের এমপি। তাঁর ছেলে মেয়রের পাশাপাশি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। দলীয় কাঠামোর বড় দুই পদে বাবা-ছেলের অবস্থানের বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতিতে নানাভাবেই সমালোচিত হয়ে আসছে। অবশ্য এ নিয়ে মুখ খোলার সাহস নেই কারও।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা মনে করছেন দক্ষিণাঞ্চলের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর বড় ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ উত্তরাধিকার সূত্রে বরিশালের রাজনীতিতে জায়গা করে নেন। তাঁকে কখনোই রাজনীতির ঘাত-প্রতিঘাতের মুখোমুখি হতে হয়নি। দলে এসেই মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে বেপরোয়া হয়ে পড়েন তিনি। একে একে সবই কিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি করেন যা নগরবাসীকে ক্ষুব্ধ করে। এছাড়া ভবনের নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়া তিনি দীর্ঘায়িত করেছিলেন।

সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের সম্পর্ক খুব একটা সুখকর নয়। একাধিকবার তিনি প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন। তা ছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতার গায়ে হাত তোলার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ফলে দলের সিনিয়র ও ত্যাগী নেতারা কখনোই তাঁর একক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পেতেন না।

সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে যান। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের গভীর রাত পর্যন্ত তাঁর কালিবাড়ি সড়কের বাসভবনে বসিয়ে রাখতেন। সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যখন-তখন বাসায় ডেকে পাঠাতেন। কোনো কর্মকর্তা তাঁর ডাকে সাড়া না দিলে অপমান-অপদস্থ হতে হতো। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের সঙ্গে তাঁর বনিবনা নেই।

২০২১ সালের ১৮ আগস্ট রাতে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনওর বাসভবনে হামলা ছিল তখনকার সময়ে দেশব্যাপী আলোচিত ঘটনা।এ ঘটনায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনও তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।

মেয়র অনুসারীরা জাহিদ ফারুক শামীম এমপির ব্যানার অপসারণ করতে গেলে বাধা দেওয়ায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে। আরেকটি আলোচিত ঘটনা ছিল গত ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন। জিলা স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়েছিলেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তাঁকে দলবলসহ কেন্দ্রে না ঢোকার জন্য অনুরোধ করলে সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ‘স্টুপিড’ বলে গালমন্দ করেন মেয়র।দায়িত্ব গ্রহণের পরই সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ কাঁচা বালু পরিবহন বন্ধ করে দিয়ে নগরবাসীকে ফেলেন দুর্ভোগে। তিনি নগরের বাড়ি তৈরির নকশা অনুমোদন বন্ধ করে দেন। হোল্ডিং ট্যাক্স কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন। এতে নগরীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নামে। নানা অভিযোগে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।এমনকি নগরের দুটি বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট ও হাটবাজারসহ নগদ আয়ের অনেকগুলো খাত দখলে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তা ছাড়া প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পরিবহন সেক্টরকে ব্যবহার করার অভিযোগও আছে। সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সময়কালে সড়কের ওপর সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মতো অপ্রত্যাশিত ঘটনাও ঘটেছে।৩০ জন সাধারণ এবং ১০ সংরক্ষিত কাউন্সিলরের মধ্যে অনেকের সঙ্গেই সম্পর্কের অবনতি ঘটে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের অভিযোগ, মেয়র তাঁর একক সিদ্ধান্তে সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এ বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ২০২১ সালের আগস্টে। ১০ জন কাউন্সিলর একযোগে মেয়রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের পক্ষে অবস্থান নেন।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

1 Comment

  1. মেয়র সাদিকের বিদায়ের পরপরই প্রকল্পের অনুমোদন পেল বিসিসি - ইত্তেহাদ

    নভেম্বর ৯, ২০২৩

    […] সরে দাঁড়ালেন মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ […]

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *