খুলনার ডুমুরিয়ায় বাগদা ও গলদা চিংড়ী চাষে চাষীদের ব্যাপক সাফল্য


ফকির শহিদুল ইসলাম,খুলনা ব্যুরো : হোয়াইট গোল্ড নামে খ্যাত বাগদা ও গলদা চিংড়ী চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন ডুমুরিয়ার চাষিরা। চলতি মৌসুমে ভাইরাসজনিত কোনো রোগ আক্রমণ না করায় অন্য বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন হয়েছে অনেক বেশি। তেমনি বাজারে ভালো দাম পেয়ে বেশ খুশি তারা। তবে, সাফল্য অব্যাহত রাখতে উন্নত জাতের রেণু সরবরাহসহ মৎস্য বিভাগের সহযোগিতা চেয়েছেন চাষিরা।জানা গেছে, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় গুটুদিয়া, টিয়াবুনিয়া, ভেলকামারী, জেলেরডাঙ্গা, ঘোনা বড়ডাঙ্গা, খড়িয়া, জিলেরডাঙ্গা, পঞ্চু, কুলটী, বিলপাবলা, ভান্ডারপাড়া, ঘোনা বান্দা, হাজিবুনিয়া, রাজনগর, পেড়িখালী, ওড়াবুনিয়া, বকুলতলা, ধানিবুনিয়া, কুশোরহুলা, মির্জাপুর, খর্ণিয়া, শোভনা, মাগুরখালী, রংপুর, ধামালিয়া এলাকায় ব্যাপকভাবে গলদা ও বাগদা চিংড়ী উৎপাদন হয়েছে।কুশোরহুলা মৌজাধীন শোলমারী এলাকায় আধানিবিড় পদ্ধতিতে ১৮টি পুকুরে (১৫ একর জলাশয়) বাগদা এবং ৫টি পুকুরে (৫ একর জলাশয়) ভেনামি চিংড়ী চাষ করে আবারো সাফল্য দেখিয়েছেন প্রফুল্ল কুমার রায়। হেক্টর প্রতি তার ২ মেঃ টন ২৬৮ কেজি বাগদা উৎপাদন হয়েছে। ভাইরাস জনিত কোনো সমস্যা না থাকায় এবং আবহাওয়া চাষাবাদ অনুকুলে হওয়ায় অন্য বছরের চেয়ে এবার ভালো উৎপাদন হয়েছে।৯০০ থেকে সাড়ে ১২০০ টাকা কেজি দরে তিনি বাগদা বিক্রি করেছেন। তার এ প্রজেক্টগুলো গত রবিবার জার্মানীর একটি ফাইনেস্ট সি-ফুড কোম্পানীর ক্রেতা প্রধান ডানিলো অস্টারহেল্ড এর নেতৃত্বে পরিদর্শন করেছেন একটি দল। এসময়ে সাথে ছিলেন কোম্পানির ভাইস পেসিডেন্ট সাজ্জাদ এইচ খান, এম,ইউ, সি-ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস ও কোয়ালিটি কন্ট্রোলার অফিসার এমডি ওমর ফারুক।বান্দার বাগদা চাষী কৌশিক বাগচি বলেন, তার ৭৫ শতাংশ জলাশয়ের একটি পুকুরে গত মঙ্গলবার বাগদা ধরা হয়েছে। সেখানে ১৪ পিচে ১ কেজি বাগদা উৎপাদন হয়েছে। সবমিলে তার ওই পুকুরে ৩ হাজার কেজি বাগদা চিংড়ী উৎপাদন হয়েছে। তিনি বলেছেন, এবার তার বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। অতিতের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে এবছর! অন্য বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি উৎপাদন হয়েছে তার পুকুরে। প্রতি কেজি বাগদা ১৩’শ ২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন তিনি। তার দেখা-দেখি স্থানীয় অনেকেই আধানিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ী চাষ করে লাভবান হয়েছেন। চাষীরা জানিয়েছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খোলা বাজারে মাছ ক্রয় করে পুশ করায় আর্ন্তজাতিক বাজারে বদনাম ছড়াচ্ছে। এতে প্রকৃত ঘের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সরকারের এদিকে নজর দেয়া উচিৎ বলে মনে করছেন চাষীরা।এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এবার উপজেলায় গলদা এবং বাগদা চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে চাষীরা। ডুমুরিয়ায় ২৬ হাজার গলদা এবং বাগদা চাষী রয়েছে। ৭ হাজার ৮১০ হেক্টর জলাশয় বাগদা এবং ১১ হাজার ১৪৬ হেক্টর জলাশয় গলদার চাষ হয়েছে। মৎস্য দপ্তর থেকে বাগদা চাষ বৃদ্ধি এবং চাষীদেরকে চাষে উদ্ধুদ্ধ করতে চলতি বছর ৭টি ক্লাস্টারে ১৭৫জন চাষীকে ২ কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২১ অর্থ বছরে ৪ হাজার ১৪টি ঘেরে ৬ কোটি ১২ লাখ টাকা করোনা প্রণোদনা দেয় সরকার। তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মাছে পুশ করে আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ী মাছের মান খারাপ করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মান বজায় রাখতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news