সৌদি থেকে ফিরে চোখের জলে শেষ বিদায় জানালেন স্ত্রী-দুই মেয়েকে


কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : ঘটনার তিনদিন পর সুদূর সৌদি আরব থেকে ফিরে সহধর্মিণী তাছলিমা আক্তার এবং দুই প্রাণপ্রিয় শিশু কন্যা মোহনা ও বন্যাকে চির বিদায় জানিয়ে কবরে শায়িত করলেন হতভাগ্য মঞ্জিল মিয়া। স্ত্রী ও দুই সন্তান হারানোর বেদনা বুকে চেপে শুক্রবার সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেন মঞ্জিল মিয়া। জুমার নামাজের পর মঞ্জিল মিয়ার শ্বশুরবাড়ির পার্শ্ববর্তী পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের নরপুর গ্রামে তাদের শেষবারের মতো প্রাণভরে দেখে চোখের জলে শেষ বিদায় জানালেন। জানাজা শেষে তাদের সেখানেই চিরদিনের জন্য পাশাপাশি কবরে শায়িত করা হয়।মঙ্গলবার সকালে হোসেনপুর উপজেলার সাহেদল ইউনিয়নের বাসুরচর গ্রামের নিজ ঘরের দুটি বিছানা থেকে সৌদি প্রবাসী মঞ্জিল মিয়ার স্ত্রী তাছলিমা আক্তার (৩৫), বড় মেয়ে মোহনা (১১) ও ছোট মেয়ে বন্যার (৭) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ রহস্যজনক হত্যাকান্ডের ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে ওঠে এলাকাবাসী ও পুলিশ প্রশাসন।এক সঙ্গে স্ত্রী ও দুই শিশু কন্যাকে চিরদিনের জন্য চোখের জলে বিদায় জানিয়ে সৌদি আরবে প্রবাসী জীবন কাটানো মঞ্জিল মিয়া বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে তিনি অর্থ উপার্জনের জন্য প্রবাসে অবস্থান করেছেন। সব কিছুই ভালভাবেই চলছিল। এখন তার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। দুনিয়াতে তার আর আপন বলতে কেউ রইল না।তিনি এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত খুনিদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন তিনি।এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। বুধবার সকালে নিহত গৃহবধূ তাছলিমা আক্তারের ভাই কবীরুল ইসলাম নয়ন বাদী হয়ে হোসেনপুর থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।মামলার বাদী নিহত তাছলিমা আক্তারের ভাই কবীরুল ইসলাম নয়ন জানান, ময়নাতদন্তের পর মরদেহ গ্রামের বাড়ি পাকুন্দিয়া নরপুর গ্রামে নিয়ে আসা হয়। তার ভগিনীপতি মঞ্জিল মিয়া শেষবারের মতো তাদের দেখার ইচ্ছা পোষণ করায় দুদিন ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ বাড়িতে রাখা হয়। মঞ্জিল মিয়া শুক্রবার সৌদি থেকে আসার পর গ্রামের বাড়িতে দাফন কাফন সম্পন্ন করা হয়।জানা গেছে, ঘটনার দিন সকালে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার বাসুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সহপাঠী ফারজানা আক্তার প্রতিদিনের মতো মোহনাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য তাদের বাড়িতে যায়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মোহনার বাড়িতে গিয়ে ঘরের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ডাকাডাকি করে। এক পর্যায়ে দরজা খোলা দেখে সে ঘরে ঢুকে মোহনা ও তার মা-বোনকে আলাদা খাটে শুয়ে থাকতে দেখে।মোহনাকে টানাটানি করে সাড়া না পাওয়ায় তার মা ও ছোট বোনকেও ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীদের এ ঘটনা জানায় সে। দৌড়াদৌড়ি করে প্রতিবেশীরা তাদের প্রাণহীন নিথর অবস্থায় বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়।খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে ছুটে যান। এমন মৃত্যুর ঘটনায় রহস্য আঁচ করতে পেরে পুলিশ সুপার সিআইডির ফরেনসিক বিভাগসহ পিবিআইকেও ঘটনাস্থলে ডেকে পাঠান।সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ গৃহবধূ তাছলিমা আক্তার ও বড় মেয়ে মোহনার ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটার আলামত পায় বলে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে স্বীকার করে। সব দিক মাথায় রেখে পুলিশ সাত যুবককে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এদের মধ্যে পাঁচজনকে ছেড়ে দিয়ে দুজনকে কোর্টে সোপর্দ করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চায়।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news