অনুসন্ধানী সংবাদ

৪০ বছরে ভোলার ৫৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলীন, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুহারা

Screenshot 20230615 075819 1
print news

সাব্বির আলম বাবু : ভোলায় জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে নদীর গতিপথ পরির্বতন হয়ে নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৪ দশকে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার তীরের অর্ধশতাধিক বর্গ কিলোমিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে বাস্তুহারা হয়েছে লাখের বেশী মানুষ। ভাঙ্গন রোধে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রকল্প পাস হলেও সেই কাজ শুরু হয়েছে এবং চলছে। দ্বীপজেলাকে ভাঙ্গন থেকে রক্ষার দাবী এ জেলার আতকিংত সাধারণ মানুষেরা। ইতিহাস বলছে, ১২৩৫ সালের দিকে বঙ্গোসাগরের কোল ঘেষেই দ্বীপজেলা ভোলার জন্য একবিংশ শতাব্দীর সওর দশকের দিকে শুরু হয় ভাঙ্গন। যা ৮০ দশকে তীব্রতা বেড়ে যায়। জলবায়ুর পরির্বতনের প্রভাব, অপরিকল্পিত বাধ, ভাঙ্গন রোধে টেকশই ব্যবস্থা গ্রহণ না করা ও মানব সৃষ্ট নানা কারনে বর্তমানে ভোলা সদর, চরফ্যাশন, মনপুরা, বোরহানউদ্দিন ও তজুমদ্দিন পয়েন্ট দিয়ে মেঘনা তেতুলিয়ায় তীব্র ভাঙ্গন চলছে। এই ভাঙ্গন এখন ভোলাবাসীকে শংকিত করে তুলছে। প্রবীন স্কুল শিক্ষক তাজুল ইসলাম (৭০) বলেন গত কয়েক বছর ধরে ভোলা, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরায় ব্যাপক ভাঙ্গন চলছে, কিন্তু ভাঙ্গন রোধে যে কার্যক্রম গ্রহন করা হচ্ছে তা কোন কাজেই আসছে না। তাই ভাঙ্গন রোধে টেকশই ব্যবস্থা এখনই গ্রহণ করা প্রয়োজন। ভোলাকে রক্ষা করার জন্য সিসি ব্লকের কাজ চলছে তার নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভোলা স্বার্থ রক্ষা কমিটির আহবায়ক আমিতাব বলেন, ৭০ দশক থেকে ভাঙ্গন শুরু হলেও ৮০ দশকে তা অনেক কম ছিলো। কিন্তু দিন দিন এ ভাঙ্গনের পরিমান বাড়ছে। এর কারন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। তিনি বলেন, নদী ও সাগর মোহনায় লবনাক্ততা বেড়ে গেছে, এই লবন পানি ও অতি জোয়ারে উপকূলে আঘাত হানলে ভাঙ্গনের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়। দিন দিন এর বেশ বাড়ছে আর এ কারণেই আমরা ভোলাবাসী হুমকির মুখে রয়েছি, তাই জলবায়ুর প্রভাব থেকে এখনই সকলকে সোচ্চার হতে হবে। বোরহানউদ্দিন গঙ্গাপুর এলাকার বাসিন্দা মো: হারুন অর রশিদ (৭০) বলেন ১৯৭০ থেকেই তেতুলিয়ার ভাঙ্গন শুরু হয়, এ ভাঙ্গন শুরু হয় এ ভাঙ্গনে ইতিমধ্যেই ৪টি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। ৫০ থেকে ৬০ মানুষের জায়গা জমি বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু ভাঙ্গন প্রতিরোধে হচ্ছে সিসি ব্লকের কাজ চলছে।
ভোলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব বাহাউদ্দিন বলেন, জলবায়ু নিয়ে কথা হলেও এর থেকে উওোরনের কোন কাজ হচ্ছে না। তাই স্থায়ী গবেষনার মাধ্যমে ভোলাকে রক্ষা করতে হবে।এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে গত চার দশকে ৫৭ কিলোমিটার এলাকা মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাস্তুহারা হয়েছে লাখো মানুষ।বসতভীটা, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ হাটবাজারসহ নানা স্থপনা নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় ভোলার মানচিএ ছোট হয়ে আসছে ভোলা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভোলার উপকূলীয় এলাকা। আগামী কয়েক বছরে দ্বীপজেলার জন্য অশনি সংকেত বলেও মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ ব্যাপারে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, ভোলার নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা অনেক বেশী, মানচিএ থেকে দিন দিন ভোলা ছোট হয়ে আসছে। এব্যাপারে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বর্তমান উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: ইউনুস বলেন, ভাঙ্গন রোধে বরাদ্দ হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হয়েছে, কাজও দ্রুত চলছে।
তবে প্রাথমিক অবস্থায় জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ হবে পরবর্তি মৌসুমে সিসি ব্লকের কাজ শুরু হয়েছে এবং এখনো চলছে। পাউবো ডিভিশন–২ চরফ্যাশনের উপ–সহকারী প্রকৌশলী শাহে আলম ও মনপুরার উপ–সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, প্রতি বছরই বছরই বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে মনপুরা ও চরফ্যাশনের ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। বেশী ভাঙ্গছে মাদ্রাজ এবং ফয়েজউদ্দিন পয়েন্ট দিয়ে। নদী ভাঙ্গনসহ নানা প্রকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে টেকশই ব্যবস্থা গ্রহনের মধ্যে দিয়ে গ্যাস সমৃদ্ধ ভোলাকে রক্ষার দাবী জানিয়েছেন এ দ্বীপের সাধারণ মানুষরা।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *