বাংলাদেশ ঢাকা

বিজয় দিবস : মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি

image 118432 1702704983
print news

ঢাকা প্রতিনিধি : দিনভর কারখানায় কাজ করা পোশাকশ্রমিক কামরুজ্জামানের কাছে আজকের দিনটি ছিল বিশেষ। পুরো পরিবার নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন বীর শহীদদের প্রতি।কামরুজ্জামান  বলেন, ‘আমরা দিনভর কারখানায় কাজের চাপে থাকি। বছরে দুবার আমরা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা বীর শহীদদের স্মরণ করার সুযোগ পাই।’

গাজীপুর থেকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা শাহীন বলেন, ‘যুদ্ধ করতে পারিনি। কিন্তু যাঁরা যুদ্ধ করেছেন, দিয়েছেন দেশের জন্য প্রাণ—তাঁদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা প্রয়োজন। তাই শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি।’

কোনো কিছুই হার মানাতে পারেনি সাধারণ মানুষকে। পৌষের শুরু তাই শীতের মাত্রাও জানান দিয়েছে সারা দেশে। তাপমাত্রা ১০-এর ঘরে। ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছিল জাতীয় স্মৃতিসৌধের দিকে। আরও একটি বছর পার হবে বিজয়ের পাতায়। সবার চোখ নতুন ভোরের দিকে। ৫৩তম বিজয় দিবসে লাল-সবুজের পতাকা আর ফুল হাতে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানিয়েছেন জাতির বীর সন্তানদের প্রতি।

image 422344 1702716049

৬টা ২৫ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায় এবং বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। তারপরই খুলে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ সাধারণ মানুষের জন্য। বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজ শাড়ি, পাঞ্জাবি পরে ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। শ্রদ্ধা জানাতে আসা এসব মানুষ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উৎখাত, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিসহ সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

৫২ বছর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম নেয় বাংলাদেশ। ৩০ লাখ শহীদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় একটি নতুন রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই বিজয় স্মরণে প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর পালিত হয়। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে থাকে।

এ ছাড়া স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংসদ সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম—মুক্তিযুদ্ধ ’৭১, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদসহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন হলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ অগণিত সাধারণ মানুষ।

স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের লক্ষ্য ছিল যেটা, সেই রাজনীতিকে এরা ধ্বংস করতে চায়। এ অপশক্তিকে রুখতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়-মূল্যবোধে যারা বলীয়ান তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান সরকারের সব ধরনের উসকানি বর্জন করার কথা জানান। জাসদের সহসভাপতি শফি উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে আজকে মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। অনেকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে। সে দলগুলোর এখনো বিচার হয়নি।

বিজয়ের দিনে সব সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও রং-বেরঙের পতাকায় সাজানো হয়েছে। সব ধর্মের উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হয়।

এদিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস স্মৃতিসৌধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এ ছাড়া পিলখানার ‘সীমান্ত গৌরব’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান। ঢাকার মিরপুর ট্রেনিং কমপ্লেক্সে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে এবং শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।

এ ছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জনসাধারণের জন্য সাতটি জাহাজ দুই দিন ধরে উন্মুক্ত রেখেছিল বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, পতেঙ্গা, চট্টগ্রামের মৎস্য বন্দর, মোংলা, খুলনা ও পটুয়াখালী সাধারণ মানুষকে দেখানো জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।

ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহে শ্রদ্ধাঞ্জলি, কুচকাওয়াজ, র‍্যালিসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে একাত্তরের বীরদের স্মরণ করেছে সর্বস্তরের শ্রেণি-পেশার মানুষ। ভোরের আলো ফোটার পরপরই এসব জেলায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের বার্তা দেওয়া হয়।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *