রাজনীতি

বরিশাল জেলার ছয়টি আসনে ছেয়ে গেছে নৌকার পোস্টারে : ভোটাররা চেনেন না অপর প্রার্থীদের

5 fb383f21a63df439a0ac3107ab7abb23
print news

বরিশাল অফিস : বরিশাল জেলার ছয়টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৬ সংসদ সদস্য। তবে এর মধ্যে তিনটি আসনের সংসদ সদস্যদের নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে তেমন একটা বেগ পেতে হবে না। বাকি তিন আসনের সংসদ সদস্যদের নির্বাচনে জয়ী হতে নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে বড় ধরনের ফাইট দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ওই ৩টি আসন থেকে কারা নির্বাচিত হবেন তা এখন অনুমান করা যাচ্ছে না।

এদিকে দুটি আসনে মনোনয়ন পাওয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস পাতানো এ নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

তেমন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে। এখানকার তিন বারের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে রয়েছেন জাতীয় পার্টির সেরনিয়াবাত সেকেন্দার আলী ও ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) মো. তুহিন।  ওই দুই উপজেলা ছেয়ে গেছে নৌকার পোস্টারে। এছাড়া নৌকার পক্ষে একাধিক প্রচারণা টিম কাজ করছে।

আগৈলঝাড়ার বাসিন্দা তপন বসু বলেন, বরিশাল-১ আসনের প্রার্থী তুহিনকে ভোটাররা চেনেন । সেকেন্দার আলী ঢাকায় থাকেন। তার তেমন পরিচিতি নেই। তবে একটি গাড়ি নিয়ে তাকে মাঝে মধ্যে প্রচারণায় দেখা গেছে।

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে নৌকার প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মি আহমেদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। পংকজ নাথের প্রচারণায় বলা হচ্ছে, ঈগল হচ্ছে নৌকা আর নৌকা ঈগল। তবে ড. শাম্মির সর্বশেষ আপিলের শুনানি রয়েছে ২ জানুয়ারি। শুনানিতে টিকে গেলে সে ক্ষেত্রে পংকজ নাথকে নির্বাচনি মাঠ ছাড়তে হতে পারে।

ওই আসনে পংকজ নাথের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির মিজানুর রহমান এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের হৃদয় ইসলাম চুন্নু। মিজানুর রহমানকে এলাকাবাসী চিনলেও চুন্নুকে কেউ চেনেন না। সেখানে ঈগলের প্রচারণায় মুখর দুই উপজেলা। কিন্তু প্রচার-প্রচারণায় দেখা মিলছে না মিজানুর ও চুন্নুকে। তাদের কোনও পোস্টারও লাগেনি দুই উপজেলায়। এলাকাবাসীও তাদের খুঁজে পাচ্ছে না।

মেহেন্দীগঞ্জের বাসিন্দা সঞ্জয় গুহ বলেন, দুই উপজেলাবাসী জাতীয় পার্টি ও মুক্তিজোটের প্রার্থীদের চেনে না। তাদের কোনও প্রচার-প্রচারণাও নেই।

6 9b763adacd80e8fa0462046d66b16f02

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্ণেল অব. জাহিদ ফারুক শামীম। নৌকা না পেয়ে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন সাবেক সিটি মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। কিন্তু দ্বৈত নাগরিক হওয়ায় তার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এ কারণে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তেমন জোরালো প্রার্থী নেই।

এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন সালাহ উদ্দিন রিপন, জাতীয় পার্টির প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) আব্দুল হান্নান সিকদার, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহাতাব হোসেন। এদের মধ্যে রিপনের প্রচার-প্রচারণার দেখা মিললেও বাকিদের দেখা মেলেনি। তাদের একটি পোস্টারও লাগেনি এলাকায়। ওই সকল প্রার্থীদের মধ্যে প্রকৌশলী তাপস পরিচিত মুখ হলেও তিনি শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত এলাকায় আসেননি। এমনকি প্রতীক বরাদ্দেও ছিলেন অনুপস্থিত।

তবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসন। সেখানে নৌকার প্রতীকে রয়েছেন মেজর জেনারেল অব. আব্দুল হাফিজ মল্লিক। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ওই আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা। আর মল্লিককে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী শামসুল আলম চুন্নু।

এ আসনে আরও যারা রয়েছেন তারা হচ্ছেন-ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) মোশারফ হোসেন, জাসদের মোহম্মদ মোহসীন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাইনুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহবাজ মিঞা, কামরুল ইসলাম খান ও জাকির খান সাগর। ওই আসনে জাসদের প্রার্থীর-প্রচারণা চোখে পড়লেও বাকিরা নীরব।

বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে জোট থেকে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপুকে। এ কারণে নৌকার প্রার্থী সরদার খালিদ হোসেন স্বপন কেন্দ্রের নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। টিপুর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বাবুগঞ্জ আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য আতিকুর রহমান আতিক, ওয়াকার্স পার্টির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য শেখ টিপু সুলতান।

এ আসনে জোটের প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র আতিকের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখছেন এলাকাবাসী। গত নির্বাচনেও আতিক জোটের প্রার্থীর ওপর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তাছাড়া এলাকাবাসীর সঙ্গে রয়েছে তার সখ্য। পাঁচ বছর টিপু ঢাকায় অবস্থায় করায় তার যা নেই। উন্নয়নের চেয়েও তাকে দুই উপজেলাবাসী কাছে না পাওয়ার বিষয়টি জোরেশোরে প্রচার করছেন। এছাড়া ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ টিপুও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাকিদের দেখা মিলছে না।

মুলাদীর বাসিন্দা হুমাউন কবির ও বাবুগঞ্জের সাইফুল ইসলামসহ একাধিক ভোটার জানিয়েছেন, ওই আসনে ট্রাক ও লাঙ্গল প্রতীকের প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়ার মতো। এর পরের অবস্থানে রয়েছে হাতুড়ি। অপর প্রার্থীদের প্রচারণা এখনও দেখা যায়নি বলে জানান তারা।

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে জোটের প্রার্থী হয়েছেন ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এ কারণে নৌকার প্রার্থী দুই বারের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। বর্তমানে সেখানে দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মেননের পক্ষে কাজ করছেন।

কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে। তারা হচ্ছেন ওই আসনের তিন বারের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি ও শের ই বাংলা একে ফজলুল হকের নাতি একে ফাইয়াজুল হক রাজু। সেখানে নৌকার ভোট ভাগাভাগির আভাস দিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। তাছাড়া সংগীতশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাসও রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

ওই আসনের অপর প্রার্থীরা হচ্ছেন-জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস, তৃণমূল বিএনপির আলহাজ মো. শাহজাহান সিরাজ ও ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) সাহেব আলী। এ তিন জনকে এখন পর্যন্ত দুই উপজেলার মানুষ চোখে দেখেননি।

বানারীপাড়ার জাকির হোসেন ও উজিরপুরের মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নৌকা, গামছা ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়লেও অপর প্রার্থীদের প্রচারণা এখনও শুরু হয়নি। তারা আসা করছেন দুই একদিনের মধ্যে তারাও প্রচারণায় নামবেন।

বরিশাল-৫ ও বরিশাল-২ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়া দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস  বলেন, পাতানো নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন না। এ কারণে নির্বাচনি কোনও প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেননি। দুটি আসন থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাখ্যানের চিঠি নির্বাচনে কমিশনে পাঠাবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *