বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ১৯ কোটি টাকা বেতন বকেয়া


বরিশাল অফিস : কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ১৯ কোটি টাকা বেতন বকেয়া থাকা সত্বেও বরিশাল সিটি করপোরেশনের চতুর্থ পরিষদের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে দিয়েছিলেন অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ। অভিযোগ উঠেছে বর্তমান পঞ্চম পরিষদকে আর্থিক সংকটে ফেলতেই এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো।
অবশেষে চতুর্থ পরিষদের অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া দৈনিক মজুরিভিত্তিক ১৩৪ জনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও চতুর্থ পরিষদের আমলে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চাকরিচ্যুত ৩১ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বহাল করেছেন বর্তমান সিটি মেয়র বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাসুমা আক্তার বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর বিকেলে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া দৈনিক মজুরিভিত্তিক ১৩৪ জনের নিয়োগ বাতিল সংক্রান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ৫১ জনের নিয়োগের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
দুর্নীতি অনিয়মে ডুবতে বসেছে বরিশাল বিআরটিসি বাস ডিপো
বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ পরিষদের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ অব্যাহতি নেওয়ার পূর্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৯ কোটি টাকা বেতন বকেয়া রেখে যান। আর এরইমধ্যে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় তিনশ’জনকে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন শাখায় অস্থায়ী ভিত্তিতে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। পঞ্চম পরিষদের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত দায়িত্ব গ্রহণের পর অবৈধ নিয়োগের বিষয়টি জানতে পেরে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
বর্তমান পঞ্চম পরিষদকে ঝামেলায় ফেলতে এই অবৈধ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দাবি করেন। গত ৭ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশনের প্রশাসন, হাটবাজার, পরিছন্নতা, ভান্ডার, বিদ্যুৎ, জন্মনিবন্ধন, প্রকৌশল, সিটি নিরাপত্তা, কর আদায়, সম্পত্তি, বাণিজ্য ও জনসংযোগসহ অন্যান্য শাখায় কর্মরত ১৩৪ জন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করার নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া দৈনিক মজুরি ভিত্তিক ১৩৪ জনের নিয়োগ বাতিল সংক্রান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আরও ৫১ জনের নিয়োগের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অপর একটি নোটিশে দেখা গেছে, সদ্য সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর দায়িত্বথাকাকালীন সময়ে চাকরিচ্যুত ৩১ জনকে পুনঃনিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২৫ জনের বিল ছাড় হয়েছে। ১৬ জনের বিল খুব শিগগিরই ছাড় করা হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার একান্ত সহকারী মো. রুবেল হাওলাদার বলেন, নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চতুর্থ পরিষদ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন শাখায় অপ্রয়োজনী ও অবৈধ নিয়োগ দিয়েছিলো।তিনি আরও বলেন, সাবেক মেয়র সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ১৯ কোটি টাকা বেতন বকেয়া রেখে গেছেন। পাশাপাশি ৩৯ জন স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত করেছেন। ওএসডি করা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের খোড়পোষের ভাতাও দেওয়া হয়নি। ফলে চাকরিচ্যুত ওইসব স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করেছেন। এখন তাদের পুর্নবাসনের প্রক্রিয়া চলছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাসুমা আক্তার বলেন, আমাদের যতটা কর্মচারী প্রয়োজন তার চেয়েও দ্বিগুণ রয়েছে। যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তারা দৈনিক মজুরির ভিত্তিত্তে নিয়োগ দেওয়া কর্মচারী। নিয়োগ দেওয়ার সময় শর্ত ছিল কর্তৃৃপক্ষ চাইলে তাদের নিয়োগ বাতিল করতে পারবে। তাই ১৩৪ জনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। বাকি ৫১ জনের নিয়োগের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news