নৌকার পক্ষে কাজ করায় আ.লীগের দুই নেতাকে অব্যাহতি


বগুড়া প্রতিনিধি : বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) বর্তমান এমপি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন এবারও মহাজোটের প্রার্থী। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। তবে তানসেনের সঙ্গে নেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় নন্দীগ্রাম পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তার হোসেন বকুল ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে দলীয় প্যাডে নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ফিরোজ কামাল ফারুক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অব্যাহতির বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তার হোসেন বকুল ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের কার্যক্রমে অনুপস্থিত ও নিষ্ক্রিয় থাকায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের কারণে পৌর আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় দলের সব পর্যায়ে নেতাকর্মীরা রেজুলেশনের মাধ্যমে তাদের অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করায় অব্যাহতি দেওয়া হলো। সেইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার উপযুক্ত কারণসহ লিখিত জবাব সাত দিনের মধ্যে নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সেলে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।’
এ ব্যাপারে মুক্তার হোসেন বকুল বলেন, ‘মহাজোটের প্রার্থী তানসেনের পক্ষে কাজ করায় প্রতিহিংসাবশত আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে তারা কোনোভাবেই এমন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। শুধু আমাদের দুই জনকে নয়, নেতাদের কাছ থেকে শুনেছি আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী তানসেনের নৌকার পক্ষে কাজ করবেন, তাদেরও অব্যাহতি দেওয়া হবে।’
তবে নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তার হোসেন বকুল ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান দীর্ঘদিন দলীয় কাজে নিষ্ক্রিয়। এমনকি জাতীয় অনুষ্ঠানেও তাদের পাওয়া যায় না। তাই পৌর আওয়ামী
লীগের নেতাদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
কী ধরনের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন তারা জানতে চাইলে আনিছুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন দলীয় কাজে নিষ্ক্রিয় থাকা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল।’
কী কারণে অব্যাহতি দেওয়া হলো জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট করছি আমরা। গতকালও এমপিকে নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছি, সভা করেছি। আমরা দলীয় কাজে নিষ্ক্রিয় নই। উপজেলা আওয়ামী লীগের কেউ মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন না। কেউ কেউ বিএনপির সাবেক এমপির ‘ঈগল’ মার্কার ভোট করছেন। আমরা নৌকার পক্ষে থাকায় দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
তাদের এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ফিরোজ কামাল ফারুক বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণেই তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা নিজেরাও মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। তারা দলীয় কাজে নিষ্ক্রিয়।’
মহাজোটের প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি। আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তার হোসেন ও মাহবুবুর রহমান আমার পক্ষে কাজ করছেন। হঠাৎ তাদের অব্যাহতি দেওয়া মানেই হলো নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া। উপজেলা আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই পৌর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে এভাবে অব্যাহতি দিতে পারেন না।’
আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, তানসেন ১০ বছর ধরে জোটের এমপি। ভোট শেষ হওয়ার পর তাকে এলাকায় পাওয়া যায় না। আওয়ামী লীগের কোনও নেতাকর্মীর খোঁজ রাখেন না। ফলে এবার তার পক্ষে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ প্রচারণায় নামেননি। অনেকে নৌকার বিপক্ষে কাজ করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক এমপি জিয়াউল হক মোল্লার পক্ষে ঈগল মার্কার প্রচারণা করায় গত সোমবার উপজেলার সিমলা বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের তিন জন নেতাকে লাঞ্ছিত করেন নৌকার কর্মী-সমর্থকরা।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news