রাজনীতি

পিরোজপুর-২ : মহারাজের আয় বেড়েছে ১৪ গুণ

e75d0ba5e26d0b7bbcd9a9b4d7a63345 658e870e459e7
print news

ইত্তেফাক :
# ৭ বছরে আয় বেড়ে ২ কোটি ৮১ লাখ
# নগদ টাকা ও ব্যবসার মালামাল ৮ কোটি ৯৮ লাখ
# রয়েছে প্রায় দুইশ ভরি স্বর্ণ, বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ভবন ও মার্কেট

এবারের নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন মহিউদ্দিন মহারাজ। পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তিনি। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দাখিল করা তার হলফনামা বলছে, গত ৭ বছরে তার আয় ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে কয়েক গুণ।

এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মহিউদ্দিন মহারাজ। এরপর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে হয়ে উঠেছেন টাকার কুমির। তার ২০১৬ সালের হলফনামা বলছে, সে সময় তার বার্ষিক আয় ছিল ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৫ টাকা। আর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অন্যদিকে এখন ঢাকা জেলার বড় মগবাজার মৌজার শান্তা গার্ডেনের ২ নম্বর টাওয়ারের ২ হাজার ৬০৫ ও ২ হাজার ৬৯০ বর্গফুটের দুইটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। বসুন্ধরা সিটিতে আছে দোকানও। ‘উপহার পাওয়া’ অর্ধকোটি টাকা মূল্যের ৫০ ভরি স্বর্ণ আছে। পুত্র ও স্ত্রীর মিলিয়ে রয়েছে আরও ১৪৮ ভরি স্বর্ণ। যারা বাজার মূল্য দেড় কোটি টাকারও বেশি। তিনি যে গাড়িতে চড়েন তার দাম ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এছাড়া কাওরান বাজারসহ বেশ কিছু জায়গায় একাধিক বহুতল ভবন, একতলা দালান, ফ্ল্যাট, জমি ও মার্কেটের মালিক তিনি।

সম্প্রতি জমা দেওয়া হলফনামায় তার আয় দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৮১ লাখ ১ হাজার ৭২ টাকা। যা ৭ বছর আগের আয়ের প্রায় ১৪ গুণ। স্ত্রী এখন আয় করেন ২৬ লাখ ৬৫ হাজার ১০ টাকা। যা ২০১৬ সালের আয় থেকে প্রায় ৯ লাখ টাকা বেশি।

মহারাজের অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ টাকা ও ব্যবসার মালামালে আছে ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৩৯ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আছে ৬৯ লাখ ২ হাজার ৬২৪ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক একচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয়- এমন কোম্পানি ইফতি ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডে ১৫ লাখ টাকা ও ইফতি ইটিসিএলে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা রয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, তেলিখালি শাখায় ৫টি ডিপিএসে আছে সাড়ে ৭ লাখ টাকা, ২৫ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৬ টাকার রয়েছে টিভি ফ্রিজসহ নানা ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য। ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকার রয়েছে খাট, সোফা ও চেয়ারসহ নানা আসবাবপত্র। আছে একটি পিস্তল ও বন্দুক।

মহারাজের সঙ্গে সঙ্গে টাকার কুমির হয়েছেন তার স্ত্রী ও পুত্র। স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ টাকা ও ব্যবসার মালামাল রয়েছে ২৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৯৮ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৩১ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৯ টাকা। সঞ্চয়পত্রে আছে ৫০ লাখ টাকা ও ৪টি ডিপিএস ও দুটি বীমায় মোট সঞ্চয় ৭৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৯৭ টাকা। ইস্কাটনের ঢাকা ব্যাংকে রয়েছে ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া এফডিআর করা আছে ৭০ লাখ টাকা, যা বিধি অনুযায়ী ২০২৪-২৫ বর্ষে আয়কর নথিতে দেখানো হবে বলে হলফনামায় বলা হয়েছে। এছাড়া মহারাজের টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, খাট, সোফাসেট, আলমিরাসহ নানা আসবাবপত্র তিনি উপহার পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

মহারাজ হলফনামায় বলেছেন, ভান্ডারিয়া উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ১০ দশমিক ২৫ একর কৃষি জমি রয়েছে তার। যার বাজার মূল্য দেখিয়েছেন ৬৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪০ টাকা। ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ১৩৮ শতক জমি রয়েছে, যার মূল্য ২৫ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া ঢাকা জেলার শ্যামলাপুর মৌজায় আছে জমি, যার মূল্য ৭৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। ভান্ডারিয়ার চরখালীতে রয়েছে ৬৮ শতক জমি। যার শতক মূল্য ১৫ লাখ ৪০ হাজার। ঢাকা জেলার কাঠাল দিয়া মৌজায় ১১২৫ অযুতাংশ, শ্যামলাপুর মৌজায় ০৬৫০ অযুতাংশ ও ভান্ডারিয়া উপজেলার হরিণপালা মৌজায় ১৮০ শতক জমি রয়েছে। যার শতক মূল্য ৬৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

১৬৫.০২ বর্গফুটের একটা দোকান রয়েছে। যার মূল্য দাবি করেছেন ২১ লাখ ১২ হাজার টাকা। ২৫০ বর্গফুট ও ১৭৮.৯২ বর্গফুটের দুটি টিন সেড পাকাঘর, নির্মাণ ব্যয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এছাড়া ৩৫১২ বর্গফুটের একতলা দালান রয়েছে, যার নির্মাণ ব্যায় ২৩ লাখ ৬ হাজার ৩২২ হাজার। এছাড়া পৈতৃক বাড়ি নির্মাণে বিনিয়োগ ৮ লাখ টাকা। ৪/১ অংশ নির্মাণ বাকি, যার একটি ফ্লোরের মূল্য ১ কোটি ৪৫ হাজার টাকা।

জুনিয়া গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ৩১৬৮ বর্গফুটের বাড়ি নির্মাণে ব্যয় ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫ হাজার ৩৫৮ টাকা। এছাড়া ১৪০০ বর্গফুটের একতলা দালান নির্মাণে ব্যয় ২৩ লাখ টাকা। ভান্ডারিয়ার হরিণপালা ইকোপার্ক সংলগ্ন ১৮৭৫ বর্গফুটের ৪ তলা দালান নির্মাণ ব্যয় ৮৭ লাখ টাকা। তেলিখালী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন (সম্মুখে) ইফতি শপিং কমপ্লেক্স মার্কেটের দ্বিতীয় তলার মূল্য ৮২ লাখ ৬৮ হাজার ২২১ টাকা। ২৩ সালে পিরোজপুর জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের ২০ ও ২১ নম্বর দোকান পজেশনের জন্য অগ্রিম পরিশোধ ৮৯ লাখ ৮২ হাজার টাকা। আরেক স্টলের জন্য বরাদ্দ ১ কোটি ২৫ হাজার ১৮ হাজার ৭১০ টাকা।

ঢাকা জেলার বড় মগবাজার মৌজার শান্তা গার্ডেনের ২ নম্বর টাওয়ারের ২৬০৫ ও ২৬৯০ বর্গফুটের দুইটি ফ্লাট। যার গাড়ি পার্কিংসহ ক্রয়মূল্য ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭ হাজার ৫২০ টাকা। এছাড়া শ্যামলাপুর মৌজায় ৬ শতাংশ ভূমি রয়েছে। যার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ব্যয় করেছে ২ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামেও রয়েছে বিপুল পরিমাণে স্থাবর সম্পত্তি। মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী মৌজায় কবলা ও হেবা কবলামূলে ৩৬৬.৫২ একক জমি রয়েছে। যার দলিল মূল্য ৪৯ লাখ ২৭ হাজার ৬২৫ টাকা।

এছাড়া ঢাকার বসুন্ধরা সিটিতে একটি দোকান রয়েছে। যার মূল্য ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কাওরান বাজারে ৩০০.৯ বর্গফুটের একটি ফ্লাটের মূল্য ১৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। পিরোজপুরের তুষখালীতে ৫৮০০ বর্গফুটের পাঁচতলা বাড়িতে বিনিয়োগ ১ কোটি ১২ লাখ টাকা। এতো সম্পত্তির মধ্যে তার ঋণ রয়েছে ২১ কোটি ৪৪ লাখ ৯ হাজার টাকা।

এ ব্যাপারে মহিউদ্দিন মহারাজ সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মোবাইল ফোন না ধরায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *