অনুসন্ধানী সংবাদ

যেসব আসনে নৌকা ডুবি!

Untitled 1
print news

জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে স্বতন্ত্রদের প্রতাপে দলটি হারিয়েছে বেশ কয়েকটি আসন। যদিও যারা জয়ী হয়েছেন তাদের সিংহভাগ আওয়ামী লীগের নেতা।

রোববার (৭ জানুয়ারি) ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায়, অনেক হেভিওয়েট একাদশের সংসদ সদস্যরা এবার স্বতন্ত্রদের কাছে হেরে গিয়েছেন।

এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীর নাম আলোচিত।

এবারের নির্বাচনে যেসব আওয়ামী লীগ নেতা মনোনয়ন পাননি তাদের স্বতন্ত্র নির্বাচনের সুযোগ দেয় দলটি। মূলত একই এলাকার হেভিওয়েট এমন নেতাদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়েছে।

যেসব আসনে আওয়ামী লীগের হার

বরগুনা-১ আসনে (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে হেরে গেছেন টানা তিনবারের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তিনি নৌকা প্রতীকে ৫৪ হাজার ১৬৮ ভোট পেয়ে হয়েছেন তৃতীয়।

এ আসনে ঈগল প্রতীক নিয়ে ৬১ হাজার ৮৭৪ ভোটে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম সরোয়ার টুকু।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গোলাম সরোয়ার ফোরকান (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৮৭৪ ভোট।

পিরোজপুর-২ আসনে নৌকার প্রতীক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে হারিয়ে ঈগল প্রতীকে মহিউদ্দিন মহারাজ চমক দেখিয়েছেন। মহিউদ্দিন মহারাজ একসময় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর এপিএস ছিলেন।

মহিউদ্দিন মহারাজ ২৮ হাজার ৫৮৭ ভোট বেশি পেয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে হারিয়ে দেয়ায় বেসরকারিভাবে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

মহারাজ ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৯৯ হাজার ২৬৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৭০ হাজার ৬৮১ ভোট।

নেত্রকোণা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে নৌকার প্রার্থী অসীম কুমার উকিল ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর কাছে হেরে গেছেন।

উকিল পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৫৫০ ভোট। বিপরীতে পিন্টু পেয়েছেন ৭৬ হাজার ৮০৩ ভোট।

জামালপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোয়ন পাওয়া মাহবুবুর রহমানকে পেছনে ফেলে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র থেকে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর রশিদ। আব্দুর রশীদ ৫০ হাজার ৬৭৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

মাহবুবুর রহমান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৭ হাজার ৬৩৮ ভোট। অন্যদিকে ডা. মুরাদ হাসান ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৪৩৩ ভোট।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ফলাফলে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র কলারছরি প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ একরামুজ্জামান। তিনি ৮৯ হাজার ৪২৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।

একরামুজ্জামান বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বদরুদ্দোজা ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৬ হাজার ১৮৯ ভোট।

লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মো. আব্দুল্লাহ ৪৬ হাজার ৩৭২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী মোশাররফ হোসেন ৩৩ হাজার ৮১০ ভোট পেয়েছেন।

ঢাকা-১৯ আসনে ৮২১০ ভোট বেশী পেয়ে বেসরকারিভাবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

নির্বাচনে সাইফুল ইসলাম ৮৪ হাজার ৪১২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ পেয়েছেন ৭৬ হাজার ২০২ ভোট। ৮ হাজার ২১০ ভোট বেশি পেয়ে সাইফুল বিজয়ী হয়েছেন।

এ দুজনের ভোটের ব্যবধান কাছাকাছি হলেও নৌকার প্রার্থী এনামুর রহমান ছিলেন অনেক দূরে। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ভোট পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৩৬১টি। সাইফুল ইসলামের থেকে তিনি প্রায় ২৮ হাজার ভোট কম পেয়েছেন।

ঢাকা-৪ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার সানজিদা খানমকে হারিয়ে জয় পেয়েছেন ট্রাকের আওলাদ হোসেন।

আওলাদ হোসেন ২৪ হাজার ৭৭৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে সানজিদা ২২ হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়েছেন।

গাজীপুর-৫ আসনে হয়েছে নৌকার পরাজয়। বর্তমান সংসদ মেহের আফরোজ চুমকি ছিলেন এই আসনের নৌকার মনোনীত প্রার্থী। গত ৩ বার এই আসন থেকে এমপি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করলেও এবার প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান এর কাছে পরাজিত হয়েছেন।

ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান ৬২ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার মনোনীত প্রার্থী চুমকি ৫০ হাজার ৬৯৬ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে হেরেছেন নৌকার মৃণাল কান্তি দাশ; ভোট পেয়েছেন ৮২ হাজার ৮৩৩টি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌরসভা মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল স্বতন্ত্র হিসেবে কাঁচি প্রতীকে পেয়েছেন ৮৯ হাজার ৭০৫টি।

মানিকগঞ্জ-২ (সিঙ্গাইর, হরিরামপুর ও সদরের একাংশ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর কাছে হেরে গেলেন তিনবারের সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম।

১৯৩টি ভোটকেন্দ্র থেকে দেওয়ান চাহিদ আহমেদ টুলু পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৫২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের মমতাজ বেগম পেয়েছেন ৭৮ হাজার ২৬৯ ভোট।

নরসিংদী-৩ আসনে নৌকা প্রতীকের ফজলে রাব্বি খান ৪৫ হাজার ১১৫ ভোট পেয়ে হেরে গেছেন। আওয়ামী লীগের আরেক নেতা সিরাজুল ইসলাম মোল্লা স্বতন্ত্র হিসেবে ভোট করে ঈগল প্রতীকে জয় পেয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৭৭৯ ভোট।

ফরিদপুর-৩ সদর আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামীম হক ৭৫ হাজার ৮৯ ভোট পেয়ে হেরে যান। এখানে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ। তিনি ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার ৯৮ ভোট।

ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহ এবারও হেরে গেছেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬ ভোট।

এ আসনে আওয়ামী লীগের আরেক নেতা নিক্সন চৌধুরী ঈগল প্রতীকে তৃতীয়বারের মত জয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ ভোট।

মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট পেয়ে হেরে গেছেন।

তার প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক আওয়ামী লীগ নেতা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মোসা. তাহমিনা বেগম বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে ঈগল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৬৩৩ ভোট।

যশোর-৬ আসনে নৌকা নিয়ে হেরেছেন শাহীন চাকলাদার, ভোট পেয়েছেন ৩৯ হাজার ২৬৯টি। জয়ী হয়েছেন ঈগল প্রতীকে আজিজুল ইসলাম, ভোট পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৪৭টি।

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে সাবেক এমপি আব্দুর রউফ ট্রাক প্রতীকে ৯৮ হাজার ৪১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৮০ হাজার ১১১ ভোট।

চট্টগ্রাম-১৬ আসনে শেষ বেলায় আচরণিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থিতা হারালে নৌকার মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট বাতিল করা হয়।

বাঁশখালীর এ আসনে জেলা আওয়ামী নেতা মুজিবুর রহমান ঈগল প্রতীকে ৫৭ হাজার ৪৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আরেক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির। তিনি ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৩২ হাজার ২২০ ভোট।

হবিগঞ্জ-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী হেরে গেছেন। টানা দুইবারের এই সংসদ সদস্য পেয়েছেন মাহবুব আলী পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৫৪৩ ভোট।

তার প্রতিদ্বন্দ্বী ফেইসবুকের পরিচিত মুখ স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জয়ী হয়েছেন। যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এ প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯ ভোট।

 

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *