খুলনায় কয়রা উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের এলডিডিপি প্রকল্পের টাকা আত্নসাৎ এর অভিযোগ


ফকির শহিদুল ইসলাম,খুলনা :
খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) এর আওতাধীন প্রশিক্ষণের অর্থ তছরূপসহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্বয়ং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোস্তাইন বিল্লাহ নিজেই প্রশিক্ষণের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্নসাৎ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অনিয়ম ধামাচাপা দিতে তিনি সাংবাদিকদের যথাযথ তথ্য না দিয়ে নয়ছয় কথা বলছেন।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদেরকে দুই দিন প্রাণি সম্পদ দপ্তরের ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) আওতাধীন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। দুই দিনের প্রশিক্ষণে তাদেরকে বরাদ্দের চেয়ে অনেক কম ব্যয়ের নিম্নমানের দুপুরে খাবার ও নাস্তা দেয়া হয়েছে। খাতা, কলম ও ফোল্ডার দেয়া হলেও কোন ব্যাগ দেয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহারাজপুর ইউনিয়নের এক মহিলা বলেন, ব্যাগ না দেওয়ার বিষয়টি আমরা যেন কাউকে না বলি এজন্য প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আমাদের ওয়াদা করিয়ে নিয়েছিলেন। অনেক বুঝিয়েছিলেন আমরা যেন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না করি, কারো সাথে ব্যাগ না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার না করি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাণি সম্পদ দপ্তরের ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কয়রা উপজেলায় ৯টি ব্যাচে ৩৬০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রতিটি ব্যাচে ৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ প্রশিক্ষণে উপকরণ বাবদ জনপ্রতি সাত শত টাকা বরাদ্দ থাকলেও খাতা, কলম, ফোল্ডার ও ম্যানুয়াল ফটোকপি বাবদ সর্বোচ্চ একশ’ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। দুপুরের খাবারের বরাদ্দ জানা যায়নি। তবে ১২০ টাকার মুরগীর বিরিয়ানী দেয়া হয়েছে। সম্মানী হিসেবে এক হাজার টাকা দেওয়ার পরেও অধিকাংশের কাছ থেকে দুই শত টাকা করে নেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের তালিকায় নাম যুক্ত করার জন্য অফিসের কতিপয় কর্মচারী অধিকাংশের কাছ থেকে জনপ্রতি দুই শত টাকা নিয়েছে। এছাড়া প্রকৃত খামারীদের স্থলে কর্মচারী/কর্মকর্তাদের আত্নীয়-স্বজন ও সুপরিচিত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন মুরগী পালন করা মহারাজপুর ইউনিয়নের খামারী মিলন, আজমল ও মরিয়াম বলেন, দীর্ঘদিন মুরগীর খামার করলেও কখনও সরকারী প্রশিক্ষণ পাইনি। এমনকি ওষুধ কিনতে দপ্তরে গেলেও নেই বলা হয়।
এসব বিষয়ে তথ্য নিতে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাইন বিল্লাহ’র ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কেউ কল করলে তিনি ব্লাক লিস্টে রাখেন। একাধিক সংবাদকর্মীর মোবাইল নম্বর তিনি ব্লাক লিস্টে রেখেছেন। সরাসরি কয়েকবার তার অফিসে যেয়েও তথ্য নেয়া সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে গত ১৭ জানুয়ারী তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ি তথ্য প্রাপ্তির আবেদন জমা দিতে গেলে তার অফিসের কেউ রিসিভ করেননি। ওই দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (তৎকালীন) মো. কামাল হোসেনকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি তার দপ্তরে আবেদন জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তবে অদ্যবধি কোন তথ্য কিংবা অপারগতা বিষয়ে কোন লিখিত পাইনি। এছাড়া ঘাস চাষ ও মোবাইল ভেটেনারী ক্লিনিকসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কাউকে তোয়াক্কা করে অনিয়ম করে যাচ্ছেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ওই কর্মকর্তা ২০১৯ সাল থেকে একটানা পাঁচ বছর কয়রা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাঁচ বছর সরকারী সুবিধায় ডাক বাংলার একটি কক্ষ ব্যবহার করছেন।
সার্বিক বিষয় জানতে রবিবার প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাইন বিল্লাহ এর দপ্তরে গেলে তিনি কোন সদুত্তোর না দিয়ে ইউএনও অফিস যাওয়ার কথা বলে কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান।নির্ভযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, দুই দিনের প্রশিক্ষণে জনপ্রতি উপকরণ ও খাবারে বাজেট ছিল ২ হাজার টাকা।তথ্য দেয়া নিয়ে জটিলতা ও সেবা গ্রহিতাদের মোবাইল নম্বর ব্লাক লিস্টে রাখার বিষয়ে খুলনা জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ শরিফুল ইসলামকে এক সপ্তাহ আগে অবগত করা হলে তিনি দেখবেন বলে আশ্বাস্ত করেন। তবে আজ অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদনের জন্য মন্তব্য জানতে তাকে ফোন দিলে রিসিভ করেন নি। খুলনা বিভাগীয় প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক(ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ্) ডাঃ এ, বি, এম, জাকির হোসেনকে অবগত করলে বিষয়টি তার আওতাধীন নয় জানিয়ে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news