মতামত

ভূয়াচক্র….খুব ভয়ঙ্কর

FB IMG 1708500008506
print news

সাইদুর রহমান রিমন :
আমারও খুব পছন্দের অনুসন্ধানমূলক টিভি অনুষ্ঠানটি সম্প্রতি ভূয়া সাংবাদিকদের নিয়ে এপিসোড নির্মাণ করেছে। এতে প্রকৃত ভূয়া সিন্ডিকেটের সোর্স খ্যাত গুটিকয়েক ‘সাংঘাতিক’কে চিহ্নিত করা হয়েছে কেবল। কিন্তু রাজধানীসহ সারাদেশে ভূয়া সাংবাদিকদের অপরাধ প্রতারণা এতই ভয়ংকর- যা রিপোর্টটি দেখে আন্দাজ করার কষ্টকর।

সর্বত্রই ২/১ জন প্রকৃত সাংবাদিককে সাইনবোর্ড বানিয়ে ৮/১০ জন পেশাদার অপরাধীর সংঘবদ্ধ টিম গড়ে উঠে। তারা ডিবি, সিআইডি’র আদলে রীতিমত ক’টি (বিশেষ জ্যাকেট) পর্যন্ত ব্যবহার করে থাকে। তারপর রাত, দিন যখন তখন টার্গেটকৃত ব্যক্তি/বাড়ি/প্রতিষ্ঠানে হামলে পড়ে। ছোটাছুটি, চিল্লাফাল্লা ও টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে আটক করার মতো ঘটনাও ঘটিয়ে থাকে তারা। এসব দেখে হতচকিত মানুষজন তাদের পরিচয়টা পর্যন্ত ঠাহর করতে পারেন না। বরং আত্মরক্ষার্থে যে যার মতো নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করাকে শ্রেয় মনে করেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ চক্রের পেছনে একশ্রেণীর লুটেরা পুলিশ কর্মকর্তার সক্রিয় সহায়তা থাকে। কোথাও চক্রটি প্রতিবাদ প্রতিরোধের মুখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে পৌঁছে যায় সেখানে। তারাও ভূয়া চক্রের পক্ষ নেয় এবং তাদের সুরে সুর মিলিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীদেরই নাস্তানাবুদ করতে থাকে। তাদের সম্মিলিত হুমকি ধমকিতে ভীত সন্ত্রস্ত মানুষজন চাহিদামাফিক টাকা পয়সা দিয়ে সমঝোতা করতে বাধ্য হয়। অন্যথায় সাংবাদিকদের উপর হামলা চালানো, মারধর করা, ক্যামেরা, মোবাইল, ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয়ার কল্পিত অভিযোগ তুলে মামলা দায়েরসহ পুলিশী হয়রানি চালানোর পাশাপাশি শুরু হয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ-মানববন্ধনের নানা কর্মসূচি।

এমন সব পদ্ধতিতে দফায় দফায় হয়রানি, নাস্তানাবুদের প্রতারণামূলক ঘটনায় গোটা সাংবাদিক সমাজের উপর ত্যক্ত, বিরক্ত, অশ্রদ্ধা জন্মেছে, সাধারণ মানুষের কাছে সাংবাদিকতা হয়ে উঠেছে ভয়ানক আতংকের পেশা।

“হাতে গোণা কয়েকজন ভূয়া সাংবাদিক এসব অপরাধ প্রতারণার বিচ্ছিন্ন ঘটনায় জড়িত” এমন কথা বলে আর এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। বরং রাজধানীসহ সারাদেশে সাংবাদিক নামধারী প্রতারকরাই এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের সংঘবদ্ধ দাপটের সামনে জেলা-উপজেলায় প্রকৃত সাংবাদিকদেরই কোণঠাসা পরিস্থিতি। সাংবাদিক সমিতি বা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকেও ভূয়াদের বিরুদ্ধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ, একেকটি প্রেসক্লাবের বিপরীতে ভূয়ারা ৮/১০ টি করে সাংবাদিক সংগঠন খুলে বসেছে।

আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা, অনুমোদনহীন পোর্টাল আর সাংবাদিক নামধারী সংগঠনগুলোই হাজার হাজার ভূয়া-প্রতারকের জন্ম দিয়ে চলছে। টিভির অনুসন্ধান রিপোর্টে ভূয়া সাংবাদিক প্রসবকারীদের বেশি বেশি চিহ্নিত করাটাই অধিক জরুরি। একইসঙ্গে জরুরি ভুঁইফোড় সাংবাদিক সংগঠনগুলোকেও চিহ্নিত করে দেওয়া। মূল কারখানাগুলো বন্ধ করা গেলে ভূয়া সাংবাদিক উৎপাদন বন্ধ হতে বাধ্য।

তবে ভূয়া চক্রের নানা অপরাধ প্রতারণার ঘটনা সরেজমিন অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধ অপকর্মের সূত্র ধরেই তারা ফাঁদ পাতে। যেমন, অবৈধ ফুটপাত বাজার বসিয়ে প্রতিদিন যারা চাঁদাবাজি করে তাদের থেকে মাসোহারা হাতিয়ে নেয় ভূয়া সাংবাদিকেরা। যেসব আবাসিক হোটেলে দেহ বাণিজ্য, মাদক-জুয়ার আসর বসে সেখানেও ধান্দার থাবা বসানোর মওকা পেয়ে যায় ভূয়ারা। এসব ক্ষেত্রে উভয়ের বিরুদ্ধেই ফলাও নিউজ থাকা উচিত। তা না হলে ভূয়াদের চিহ্নিত করতে গিয়ে তার চেয়েও জঘন্য অপরাধীদের সাফাই গাওয়া হয়ে যায়।

সাংঘাতিক সাংবাদিকদের নিয়ে প্রশংসিত টিভি রিপোর্টিংটিতে একটাই মাত্র চলমান কেস স্টাডি দেখানো হয়, সেটি হলো গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে। সেখানকার পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন বাসিন্দা শাজাহান বাবু তিন তলা বিল্ডিং বাড়ি নির্মাণ করায় ভূয়া চক্র তার থেকে দফায় দফায় চাঁদা হাতিয়ে নিচ্ছে। এবার টিভি রিপোর্টিং টিমের উপস্থিতিতে সেই চাঁদাবাজ ভূয়া সাংবাদিকদের ডেকে এনে সমুচিত শাস্তি দেয়া হলো। স্থানীয় বাসিন্দারা কিন্তু অন্য কথা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সাজাহান বাবুর বাড়ির সামনে বন বিভাগের ঘেরাও দিয়ে রাখা শাল গজারির বন দখল করেই রাতারাতি তিনি তিন তলা ভবনটি নির্মান করছেন। সেখানে থাকা অর্ধ শতাধিক গজারি গাছও রাতের আধারে কেটে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। অথচ একবারও কি প্রশ্নটি করেছেন কেউ?

বিনা প্রশ্নে শাজাহান বাবুর পাশে টিভি রিপোর্টিং টিমটি দাঁড়ানোর কারণে সাংবাদিক দূরের কথা, বন বিভাগের কর্মীরাও সেখানে আর যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। ফলে বিনা বাধায় দাপটের সঙ্গেই বন বিভাগের জায়গা জবর দখল করা হয়ে গেল। এক্ষেত্রে চতুর গণ্ড লোকটি দারুণ কৌশলে টিভি টিমকে ব্যবহার করে ফেললো….। এতকিছুর পরও টার্গেটকৃত গুটিকয়েক ভূয়া সাংবাদিককে চিহ্নিত করা হয়েছে- এটাও কম কি? মূলধারার গণমাধ্যমগুলো তো ভূয়া চক্রের ভাসুরদের নাম মুখেও নিতে চায় না। (লেখাটির সঙ্গে আমার ভািই শান্তনু হাসান এর ভূয়া সাংবাদিক ছড়াটি আবারও যুক্ত করে দিলাম)

লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক দেশবাংলা।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *