বাংলাদেশ ঢাকা

সওজে সনদ জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত অর্ধশত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান

saoj
print news

ঢাকা প্রতিনিধি : গণমাধ্যমের কল্যাণেই তাদের খোঁজ মিলছে, সওজের আলোকোজ্জ্বল প্রদীপের নিচে ঘুটঘুটে অন্ধকারেই যেনো তাদের বসবাস। তাইতো চলছে শুদ্ধি অভিযান সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে ঠিকাদারদের কাগজ জালিয়াতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ পাওয়ার অভিযোগ বেশ পুরনো। টেন্ডার এ অংশগ্রহণ করতে ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদ ইজিপি পদ্ধতিতে আপলোডের মত ভয়াবহ অভিযোগে হতভম্ভ হয়ে পড়েছে অনেকেই। এই অভিযোগ সামনে রেখেই সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। বিভিন্ন সনদ জালিয়াতির অভিযোগে কাঠগড়ায় রয়েছে সওজের অন্তত অর্ধশত ঠিকাদার। যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে হাজার হাজার ভুয়া সনদ জালিয়াতির অভিযোগ। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় শুদ্ধি অভিযান কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তাই শুদ্ধি অভিযানের নামে বাগিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। আর যাদের সাথে লেনদেন হয়নি ইতিমধ্যে তাদের উপরেই নেমেছে শাস্তির খরগ। শুদ্ধি অভিযানে আবেদ মনসুর ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স এ দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাত্র দু তিনটি সনদের গরমিলের অভিযোগে দুই বছরের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সকল কর্মকাণ্ড হতে দুই বছরের জন্য করা হয় কালো তালিকা ভুক্ত। কিন্তু একই সময়ে তদন্ত শুরু হওয়া আরো অর্ধশত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তি তো দূরের কথা, তদন্তের নামে চলছে কালক্ষেপণ। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড, মোজাহার এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড, মাইনুদ্দিন বাঁশি লিমিটেড, ও রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেডের শত শত ভুয়া সার্টিফিকেটের হদিস রয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে। সূত্রমতে জানা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পেমেন্ট সার্টিফিকেট এর মধ্যে আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড এর ৫২ টিই ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে, পাশাপাশি লক্ষীপুর সড়ক বিভাগে ৩৫০ এর অধিক ভুয়া সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে দরপত্রে অংশগ্রহণ ও মোজাহার এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড এর দেশব্যাপী প্রায় ১০০ এর অধিক ইচ্ছাকৃতভাবে কম্পিটিশন সার্টিফিকেট এর তারিখ পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি দরপত্রে অংশগ্রহণ করেছে। পাশাপাশি রানা বিল্ডার্স এর ৪৫০ এর অধিক ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে দরপত্রে অংশগ্রহণ এবং মাইনুদ্দিন বাসি লিমিটেড এর নামে প্রতারণার অভিযোগে রংপুর সার্কেল হতে তার নামে অনুসন্ধানী পত্র ইস্যু হয়। শাস্তি প্রাপ্ত ঠিকাদারদের তুলনায় বহুগুণ বেশি জালিয়াতি ও অপরাধ করেও তদন্তের নামে করা হচ্ছে কালক্ষেপন, তাই তারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় মোজাহার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড প্রায় সকল জোনেই ১০০ টির বেশি ৭০ থেকে ১০০ টি সার্টিফিকেটের তারিখ পরিবর্তন করে অংশগ্রহণ করে, এবং প্রত্যেকটি অভিযোগের প্রেক্ষিতেই ক্ষমা প্রার্থনা করে। কিছু জোনে ওভার লেপিং সিটি দরপত্রই ইজিপি অনুযায়ী সঠিক তথ্য প্রদান করেনি তারা। আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতি অভিযোগ প্রায় সকলজনেই ইজিপি অনুযায়ী সঠিক তথ্য প্রদান না করার ও লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগে কারসাজি ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫০ টির অধিক অসঙ্গতিপূর্ণ সার্টিফিকেট দাখিল করা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৮ সার্টিফিকেটের মধ্যে ৫৩ টি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেডের প্রায় সকল জনের অধীনে ৪৫০টির মতো সার্টিফিকেটের তারিখ পরিবর্তন ও ওভার লেপিং করে অংশগ্রহণের অভিযোগ রয়েছে, অভিযোগ রয়েছে মাইন উদ্দিন বাসি লিঃ রংপুর সার্কেল হতে এই জালিয়াতির প্রমাণসহ পত্র পেয়েছে। অভিযোগ উঠে এম এ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, জে এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, সাগর ইনফো বিল্ডার্স, লিমিটেড কনস্ট্রাক ইঞ্জিনিয়ারিং, রিলায়াবল বিল্ডার্স লিমিটেড, এনডিই, ওটিবিএল, মেসার্স মীর ব্রাদার্স, এম এ জাহের সহ প্রায় ত্রিশটির অধিক ঠিকাদার কোম্পানি ইজিপি অনুযায়ী চলমান কাজের সঠিক তথ্য দেয়নি। কিন্তু এতসব অভিযোগ থাকার পরেও তাদের বিরুদ্ধে চলছে তদন্তের নামে কালক্ষেপণ। চলতি দরপত্র গুলোতে অংশগ্রহণের সুবিধা বলবৎ রেখে এসব অভিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির বদলে পুরস্কৃত করছে কি তদন্তকারী কর্মকর্তারা? নাকি তাদের সাথে বোনেগেছে দেন দরবার। চলছে সুক্ষ্ণ ও গভীর বিশ্লেষণ।অভিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুক্ষ তদন্ত করে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সড়ক ও সেতু বিভাগের সচিব।

সওজের চলমান মোট কাজের অর্ধেক। এসব কাজে ব্যয় হচ্ছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। বলার অপেক্ষা রাখে না, সারা দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। সেই সংস্থার শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে জাল-জালিয়াতের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, সওজের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের প্রত্যক্ষ মদদ ছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো বিগত দিনে অনিয়ম করে কীভাবে কাজ বাগিয়ে নিল? সাধারণত প্রতিটি দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়। দরপত্রে দেওয়া নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ে সর্বনিম্ন দরদাতাকে ৩০০ নম্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এর মধ্যে বিগত ৫ বছরের অভিজ্ঞতার সনদ জমা দিয়ে ১৪০ নম্বর পেয়ে থাকেন একজন ঠিকাদার। চলমান কাজের সংখ্যায় পেয়ে
থাকেন ৬০ নম্বর। এছাড়া বিগত ৫ বছরে সম্পাদিত কাজের ব্যয় হওয়া মোট টাকার হিসাবে পেয়ে থাকেন ১০০ নম্বর। এখানে যেহেতু মোট পাশ নম্বরের প্রায় অর্ধেকই হলো অভিজ্ঞতার সনদে, সে কারণে অধিকাংশ ঠিকাদার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে জালিয়াতির আশ্রয় নেন। কাজেই প্রশ্ন ওঠে, টেন্ডারে অংশগ্রহণের সময় দাখিলকৃত কাগজপত্রে অসামঞ্জস্যতা নজরে আসার পরও কেন এসব অসাধু ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠান কাজের সুযোগ পান? অভিজ্ঞতার সনদ কিংবা কাজ শেষ করার প্রকৃত তারিখ পরিবর্তনের মতো অপকর্মের পরও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কেন এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না, এ রহস্য উদ্ঘাটনও জরুরি। উল্লেখ্য, দরপত্রে এ ধরনের ইচ্ছাকৃত অসত্য তথ্য প্রদান করার বিষয়টি স্পষ্টতই পিপিএ-২০০৯-এর ধারা ৬৪

এবং পিপিআর ২০০৮-এর বিধি ১২৭ অনুযায়ী অসদাচরণ ও অপরাধ হিসাবে বিবেচ্য। মনে রাখা প্রয়োজন, সরকারের প্রায় প্রতিটি বিভাগেই ব্যাপক উন্নয়নের আলোর পেছনে অন্ধকারে ঘাপটি মেরে রয়েছে অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, যারা নানা দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের সফলতাকে ম্লান করায় লিপ্ত। জনগণের টাকা তছরুপ করে এরা দেশ-বিদেশে গড়ে তুলছে সম্পদের পাহাড়। সওজের যেসব কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় ঠিকাদার সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যারা নানাভাবে জালিয়াতি-অনিয়ম ও দুর্নীতির পথ ঠিকাদারদের হাতে ধরে শিখিয়ে দেন, শুদ্ধি অভিযানে তাদেরও চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই কাম্য।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *