অনুসন্ধানী সংবাদ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ বছরেও গঠন হয়নি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি

babi
print news

মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল : মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠার ১৩ বছরেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়নি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি।এছাড়া বাস্তবায়ন হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দেয়া যৌন হয়রানি প্রতিরোধ বিষয়ক নীতিমালা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩ সালে শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের পাশে এসে কয়েকজন বখাটে আবাসিক ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি করে। এ ঘটনায় ছাত্রীদের মধ্য ভীতি ও অস্বস্তি তৈরী হয়। আবাসিক একাধিক ছাত্রীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়ার ভিতরে এ রকম ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।তখন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট রেহেনা পারভিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন আমি এ ধরনের কোন অভিযোগ পাইনি।তবে তখন প্রক্টর বলেছিলেন শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানালে পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।

সম্প্রতি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সাবেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ ভাবে বসবাস করে এক ছাত্রীকে উত্যক্ত এবং জোড় পুর্বক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় ১৮ ফেব্রুয়ারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড.মোঃ আব্দুল কাইউম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সমন্বয় করে একটি প্রতিবেদন উপাচার্য দপ্তরে প্রেরন করেছি।পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঐ সাবেক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে।

এ ব্যাপারে বরিশালের বিশিষ্ট নারী নেত্রী প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, ২০০৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশনা যথাযথ ভাবে মানা হচ্ছে না। কমিটি বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকলেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কোন কমিটি বা সেল গঠন করা হয়নি। তিনি বলেন,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠন না করা এটি মহামান্য হাইকোর্টের রায় অবমাননা এবং একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়াটা দুঃখজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি শীঘ্রই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠন করার আহবান জানান।

প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, আশা করি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি বা সেল হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী করবেন। হাইকোর্টের রায়ে কমিটিতে অধিক নারী ও একজন আইনজ্ঞ থাকার কথা তা যেন থাকে । তিনি বলেন, বিচার না হলে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি অভিযোগ করতে উৎসাহ পাবেন না।তাই যথাযথ ভাবে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি না হলে ন্যয় বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন বিচার প্রার্থী। তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটা বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে আইন বা নীতি করা হলেও তা বাস্তবায়ন করার জন্য কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না। এই যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমিটি হচ্ছে না তা দেখার কেউ নেই।বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিৎ ছিল অনেক আগেই কমিটি করা।

আরও পড়ুন :  বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হলো বিশিষ্টজন ছাড়াই : ক্ষুব্দ নাগরিক সমাজ

বিএনডব্লিউ-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিরোধে ২০০৮ সালে জনস্বার্থে হাইকোর্টে মামলা করেন বিএনডব্লিউ-এর এর একজন সদস্য। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১৪ মে মহামান্য হাইকোর্ট যুগান্তকারী রায় প্রদান করেন। কিন্তু এই রায়ের পর বহু বছর পেরিয়ে গেলেও নারীদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশনার আশানুরূপ বাস্তবায়ন হয়নি।

দুঃখজনক হলেও সত্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই জানে না তাদের প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন ও নিরোধ সেল নামক একটি কমিটি নাই। কমিটি থাকলে সে কমিটিতে তারা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে এবং বিচার পাবে। তবে একাধিক ছাত্রীরা দ্রুত কমিটি গঠন করার দাবী জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে বিশিষ্ট আইনজীবী জাকিয়া ইতি বলেন,বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন হয়রানির বিষয়ে আলাদা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমিটি থাকা উচিৎ, অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়ার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময়েই জানানো, হয়রানির শিকার নারীদের শারীরিক ও মানসিক সহায়তা দেওয়া , সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো এবং এসব ঘটনাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন।তিনি বলেন,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্টের নির্দেশনা এবং বাস্তবতাকে সামনে রেখে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি করবে বলে আশা করি। এ ব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড.মোঃ আব্দুল কাইউম বলেন,আমরা শীঘ্রই কমিটি গঠন করবো। আমরা একটি ফরমেট তৈরী করেছি। আশা করি যতদ্রুত সম্ভব কমিটি ঘোষনা দেয়া হবে।

আরও পড়ুন : বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : দ্বন্ধ-কোন্দলে বাড়ছে সমস্যা,নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট মহামান্য হাইকোর্টে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির ঘটনার বিচার চেয়ে একটি রিট করেন। উক্ত রিটের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১৪ মে দেশের উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লিখিত নির্দেশনা প্রদান করেন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১০(ক) ধারায় যৌন হয়রানির সংজ্ঞার ভেতরে ( নারীকে অশালীন মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি, সাংকেতিক চিহ্ন প্রদর্শনসহ ইন্টারনেট ও মোবাইলে হয়রানিকেও) আওতাভুক্ত করেন। যৌন হয়রানির বিচার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ৬০ কর্মদিবসের মধ্য শেষ করতে বলা হয়েছে, ব্যর্থ হলে প্রচলিত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা আছে। হাইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়েছে, কমিটিতে কমপক্ষে পাঁচজন সদস্য থাকবেন। এ কমিটির বেশির ভাগ সদস্য হতে হবে নারী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে দুজন সদস্য নিতে হবে। সম্ভব হলে কমিটির প্রধান করতে হবে একজন নারীকে। এ ছাড়া, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি শিক্ষাবর্ষের পাঠদান কার্যক্রমের শুরুতে এবং প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ওরিয়েনটেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। রায়ে আরও বলা হয়েছে, সংবিধানে বর্ণিত লিঙ্গ সমতা ও যৌন নিপীড়ন সম্পর্কিত দিক নির্দেশনাটি প্রকাশ করতে হবে বই আকারে। এ নির্দেশনা আইনে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তা আইন হিসেবে কাজ করবে এবং সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া, ওই রায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তা বাস্তবায়নের নির্দেশও দিয়েছিল। কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন করেনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *