ধর্ম

দৃষ্টিনন্দন বায়তুল আমান জামে মসজিদ

in 2 20230204190911
print news

নিয়ামুর রশিদ শিহাব : সুদৃশ্য ক্যালিওগ্রাফি, বর্ণিল কাচ ও মূল্যবান মার্বেল পাথরের নির্মাণশৈলীর অনন্য ও দৃষ্টিনন্দন বায়তুল আমান জামে মসজিদ। এটি গুঠিয়া মসজিদ নামে বেশি পরিচিত। ২০ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি বরিশাল শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বানারীপাড়া সড়কসংলগ্ন উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাংগুরিয়া গ্রামে অবস্থিত। মসজিদের ভিতরে একসঙ্গে প্রায় ১৫শ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। বাইরের অংশে আরও ৫ হাজার মুসল্লি একত্রে নামাজ পড়তে পারেন। এ ছাড়া নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য আছে আলাদা ব্যবস্থা। প্রতিদিনই শত শত পর্যটকের ভিড়ে মুখর থাকে মসজিদটি।

জানা গেছে, ২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর গুঠিয়া ইউনিয়নের এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু চাংগুরিয়ার নিজবাড়ির সামনে প্রায় ১৪ একর জমির ওপর মসজিদ-ঈদগাহ কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শুরু করেন। তিন বছর মেয়াদের ওই নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন তার ছোট ভাই মো. আমিনুল ইসলাম নিপু। ২০০৬ সালে কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শেষ হয়। নির্মাণকাজে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার নির্মাণশ্রমিক কাজ করেছেন বলে জানা যায়।

দৃষ্টিনন্দন বায়তুল আমান জামে মসজিদ

মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তিন-চারটি মসজিদের আদলে, তবে একই রকম নয়। এর প্রতিষ্ঠাতা সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু কয়েকজন স্থপতি বন্ধুকে নিয়ে যান শারজাহ, দুবাই, তুরস্ক, মদিনা, ভারত ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। স্থপতিরা বিদেশি স্থাপত্য কর্মময় মসজিদের আদলে গুঠিয়া মসজিদটির নকশা করেন। সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে ক্যালিওগ্রাফি এবং আঁকাআঁকির কাজ করা শিল্পী আরিফুর রহমানের বাড়িও বরিশালে। এ ছাড়া এ কাজে সহযোগী ছিলেন ক্যালিওগ্রাফার বশির মেসবাহ।

মসজিদ কমপ্লেক্সের মূল প্রবেশপথের ডানে বড় পুকুর। পুকুরের পশ্চিম দিকে মসজিদ। মসজিদ লাগোয়া মিনারটির উচ্চতা ১৯৩ ফুট। এ ছাড়া আছে ২০ হাজারের বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ঈদগাহ ময়দান, অফিস, খতিব ও মুয়াজ্জিনের কোয়ার্টার, এতিমখানা, হাফেজি মাদরাসা, কবরস্থান, ডাকবাংলো, হেলিপ্যাড, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা।

সুবিশাল পুকুরটির চারপাশ বিভিন্ন রঙের ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো। দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য পুকুরপাড়ের রাস্তা পাকা করে দেওয়া হয়েছে। বাদাম গাছের নিচে আছে শান বাঁধানো ঘাট। ঘাটের ঠিক উল্টো দিকে মসজিদের প্রবেশপথে বসানো হয়েছে দুটি ফোয়ারা। রাতে আলোর ঝলকানিতে ফোয়ারাগুলো দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে। মসজিদের সামনের পুকুরটি এমনভাবে খনন করা হয়েছে, যাতে পানিতে মসজিদের প্রতিবিম্ব দেখা যায়। ২০টি গম্বুজের স্থাপত্যকলায় সাজানো হয়েছে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স। মাঝখানের কেন্দ্রীয় গম্বুজের চারপাশে বৃত্তাকারে ক্যালিওগ্রাফির মাধ্যমে লেখা হয়েছে পবিত্র আয়াতুল কুরসি।

মসজিদের ভেতরের চারপাশে ক্যালিওগ্রাফির মাধ্যমে লেখা হয়েছে সুরা আর রাহমান। ভেতরের চার কোণের চার গম্বুজের নিচে, প্রবেশ তোরণের সামনে এবং ভেতরের কয়েকটি স্পটে শোভা পাচ্ছে আল কোরআনের বিভিন্ন আয়াত সম্বলিত ক্যালিওগ্রাফি। এসব সুদৃশ্য ক্যালিওগ্রাফি এবং আল্পনা করা হয়েছে বর্ণিল কাচ, মূল্যবান মার্বেল পাথর, গ্রানাইট ও সিরামিক দিয়ে। ভেতরের নয়টি গম্বুজে বিশালাকৃতির নয়টি অত্যাধুনিক ও মূল্যবান ঝাড়বাতি বসানো হয়েছে। মসজিদটির মেঝেতে বসানো হয়েছে ভারত থেকে আনা সাদা মার্বেল পাথরের টাইলস। মুসল্লিদের সুবিধার্থে স্থাপন করা হয়েছে বিদেশ থেকে আনা অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম।

দৃষ্টিনন্দন বায়তুল আমান জামে মসজিদ

মসজিদের উত্তরপাশে দুইতলা বিশিষ্ট ভবনে আছে কমপ্লেক্সের অফিস, খতিব ও মুয়াজ্জিনের কোয়ার্টার, এতিমখানা ও হাফেজি মাদ্রাসা। মসজিদটির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে আড়াই একর জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে কবরস্থান। কমপ্লেক্সের আঙিনাজুড়েই আছে ফুলের বাগান। নিরাপত্তার জন্য কমপ্লেক্সের তিন দিকে মনোরম লেক তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া কাঁটাতারের বেষ্টনি তো আছেই। বিদ্যুৎ লাইনের পাশাপাশি আছে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন নিজস্ব দুটি জেনারেটর। বিভিন্ন রঙের আলোর ঝলকানিতে মসজিদটি রাতে অনেক বেশি নয়নাভিরাম মনে হয়।

প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশপথের বামে নির্মিত হয়েছে একটি স্তম্ভ। মসজিদের স্তম্ভটি বিশ্বের ২১টি পবিত্র স্থানের মাটি ও জমজমের পানি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আশ্চর্যজনক স্তম্ভটি দেখে আরও বেশি আবেগ-আপ্লুত হন আগত পর্যটকরা। মাটি সংগ্রহ করা স্থানগুলো হলো- কাবা শরিফ, আরাফার ময়দান, মুজদালিফা, ময়দানে মিনা, জাবালে নূর, জাবালে সূর, জাবালে রহমত, নবির (সা.) জন্মস্থান, হাওয়ার (আ.) কবরস্থান, মসজিদে রহমত, মসজিদে কু’বা, অহুদের যুদ্ধের ময়দান, হজরত হামজার (রা.) মাজার, মসজিদে আল কিবলাতাইন, মসজিদে হজরত আবু বকর (রা.), জান্নাতুল বাকি, মসজিদে নববি, জুলহুলাইফা-মিকাত, বড় পির হজরত আব্দুল কাদের জিলানীর (রহ.) হাতের লেখা তাবিজ ও মাজারে পাওয়া দুটি পয়সা এবং হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর (রহ.) মাজারের মাটি।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *