অনুসন্ধানী সংবাদ

ডাক অধিদপ্তর : ডিজি তরুন কান্তির বিরুদ্ধে নারী কর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

inbound1591173626393975348
print news

ঢাকা প্রতিনিধি : ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) তরুন কান্তি সিকদারের যৌন হয়রানির শিকার তাঁর অধিনস্ত কর্মচারী। এ নিয়ে আদালতে মামলাও করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী। মামলাটি আমলে নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তরুণকান্তি সিকদারসহ ২ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে। আউট সোর্সিংকর্মী শিলা রানী কর্মকার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলার অন্য আসামি হলেন, গোপালগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার মো: নবিরউদ্দিন মোল্লা।

গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করা হয়। শিলা রানী কর্মকার পটুয়াখালি সদর থানার সোয়াকাঠি গ্রামের বিমল চন্দ্র কর্মকারের মেয়ে। গত ১১ জানুয়ারি দায়েরকৃত মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ১০/৩০ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। এজাহারে শিলা রানী উল্লেখ করেন, তিনি ‘কৃষ্ণা সিকিউরিটি সার্ভিস লি:’র মাধ্যমে ২০১৯ সালে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ প্রধান ডাক ঘরে নিয়োগ পান। তখন তরুণকান্তি সিকদার খুলনা সার্কেলের পোস্টমাস্টার জেনারেল ছিলেন। তিনি প্রায়ই গোপালগঞ্জ প্রধান ডাকঘরে পরিদর্শনে আসতেন। এ সময় শিলা রানীর সঙ্গে তরুণকান্তি সিকদারের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে তরুণকান্তি শিলা রাণীকে খুলনায় যেতে বলতেন। তাকে কু-প্রস্তাব দেয়াসহ বিভিন্নরকম প্রলোভন দেখাতেন। এতে কর্ণপাত করতেন না শিলা। পরে তরুণকান্তি সময়-সুযোগ পেলে শিলাকে হাতের মুঠোয় নেবেন-মর্মে হুমকি দিতেন। তরুণকান্তি সিকদার ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব পেলে একদিন গোপালগঞ্জ প্রধান ডাকঘর পরিদর্শনে আসেন।

এ সময় পোস্টমাস্টার নবীর উদ্দীন মোল্লার মাধ্যমে শিলারাণীকে ডেকে পাঠান। তরুণকান্তি তখন শিলা রানীকে বলেন, আমি মহাপরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছি। তুমি খুবই কর্মঠ এবং তোমাকে আমার ভালো লাগে। তাই আমি তোমার চাকরি স্থায়ী করে দেবো, যদি তুমি আমাকে খুশি করতে পারো। এই বলে তরুণকান্তি চেয়ার থেকে উঠে শিলারানীর পাশে বসেন এবং তাকে জড়িয়ে ধরেন। তার অসদুদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য শীলা রানীর দেহের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। এ সময় শিলা রাণী কোনোরকম নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে বাইরে বের হয়ে যান। বিষয়টি নবীর উদ্দীনকে অবহিত করলে তিনি এ বিষয়ে মুখ না খোলার জন্য ভয়ভীতি দেখান। চাকরি থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনার সাক্ষী শিলা রানীর বোন তানিয়া রানী কর্মকারকেও চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনার পর তরুণকান্তি সিকদারের নির্দেশে নবিরউদ্দিন মোল্লা শিলা এবং তানিয়া রানী কর্মকারকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিতে দেন নি। বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রেখেছেন। চাকরি চলে যাওয়া এবং সম্ভ্রমহানির ভয়ে শিলা ও তানিয়া এ বিষয়ে চুপ থাকেন। কিন্তু দুই নম্বর আসামির মাধ্যমে তরুণকান্তি কু-প্রস্তাব অব্যাহত রাখেন। এ প্রেক্ষিতে গত ৩ জানুয়ারি শিলা রানী গোপালগঞ্জ থানায় তরুণকান্তি ও নবিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যান। পুলিশ মামলা গ্রহণ না করায় তিনি ন্যায় বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত ১১ জানুয়ারি মামলা করেন। মামলার পর শিলা রানী কর্মকারের জবানবন্দীও রেকর্ড করা হয়েছে।

আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী বলে কি বিচার পাবো না? চাকরির সুবাদে পরিবার নিয়ে গোপালগঞ্জে থাকি, প্রধানমন্ত্রী এলাকায় থেকেও আমিও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি। আমার নিজের নিযুক্ত উকিলকেও কিনে নিয়েছে আসামিরা। হুমকি ধামকি ও টেনসনে আমার মা স্ট্রোক করেছেন, এমন অবস্থায়ও আমাকে এবং আমার পরিবারকে ডিজির পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি ও হুমকি দেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মান ইজ্জত হারিয়েও বিচার পাচ্ছি না। কথা বলতে গিয়ে কেঁদে দিলেন ডাক বিভাগের (আউটসোর্সিং) কর্মরত শিলা রানী কর্মকার। শীলা আরো বলেন দ্বিতীয় আসামি নবিরউদ্দিন মোল্লা আমার বিরুদ্ধে লোক লাগিয়ে রেখেছেন আমি কোথায় যায় কি করি এসব খোঁজখবর নেয়ার জন্য। প্রতিনিয়ত আমাকে ভয় দেখিয়ে চলছেন তারা।

শিলা রানী বলেন, আমার পরিবার প্রধানমন্ত্রী এলাকায় গোপালগঞ্জে থাকি, হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন নারীকে এমন হেনস্থা ও হুমকি ধামকি দিতে পারে ভেবেই আশ্চর্য হই। তাদের সাথে সমঝোতা করার জন্য কঠিন ভাবে চাপ দিচ্ছে আসামিরা। সমঝোতা না করলে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে এমনটাও বলেছেন তারা। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোপালগঞ্জ পোস্ট অফিসের একটি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে গোপালগঞ্জ পোস্ট অফিসে নানা রকম অনিয়মের সাথে জড়িত রয়েছেন পোস্টমাস্টার নবিরউদ্দিন মোল্লা। এই অফিসে যারা বড় বড় অপরাধ সংঘটিত করেছে তাদের শাস্তি দেয়ার বদলে ডিজি ও পোষ্ট মাস্টার আপনজন হিসেবে বরণ করে নেন। সূত্র আরও জানায়, নানা অজুহাতে ডিজের চারপাশে সব সময় নারীদেরকে আটকে রাখা হয়। সূত্র জানায় ডিজি তরুণ কান্তিকে সন্তুষ্ট করতে না পারলে ডাক বিভাগে নারীদের চাকুরীর করার সুযোগ নেই। এদিকে মামলা এবং এজাহারে উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে ডাক মহাপরিচালক (অ:দা:) তরুণকান্তি সিকদারের সঙ্গে মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেন নি।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *