রাজাপুরে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই নির্মিত হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ন অবৈধ সেতু


রাজাপুর প্রতিনিধি : ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের চল্লিশ কাহনিয়ায় দেড়শত বছরের সরকারি খালে আইন ও সরকারি বিধি-বিধান লঙ্গন করে এক পরিবারের স্বার্থে ব্যক্তি উদ্যোগে অ-পরিকল্পিত ও ঝুঁকিপূর্ন সেতু নির্মান চলছে।ফলে নৌযান ও পানি চলাচল ব্যাহত হবে। ঝুঁকিপুর্ন ও অপরিকল্পিত সেতু নির্মান বন্ধের জন্য স্থানীয় লোকজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা ও এলজিইডিতে লিখিত আবেদন করেছেন।
লিখিত আবেদন ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে ,উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের চল্লিশকাহনিয়ায় (মৃধা খাল নামে পরিচিত) দেড়শত বছরের সরকারি খালে আইন ও সরকারি বিধি -বিধান অমান্য করে ব্যক্তি উদ্যোগে একটি সেতু নির্মান করতেছে।সেতুটি এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ড,পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআইডব্লিউটিএর প্রত্যায়ন ছাড়াই নির্মান করা হচ্ছে। অ-পরিকল্পিত ও ঝুঁকিপূর্ন এই সেতুতে প্রানহানীর আশংকা রয়েছে। সেতুটি নির্মানের ফলে সাধারন মানুষের কোন উপকার হবেনা। ব্যক্তিস্বার্থের এই সেতুটি নির্মান হলে সরকারি এ খালটিতে পানির প্রবাহ কমে যাবে।নৌযান চলাচল বিঘ্নিত হবে। অ – পরিকল্পিত ও ঝুকিঁপুর্ন এ সেতুটি নির্মানের ফলে সাধারন মানুষের প্রানহানী,সহায়- সম্পদ বিনষ্ট এবং পানির প্রবাহ বন্ধ হলে এর দায়দ্বায়িত্ব কে নিবে ?বলে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারন মানুষ।
চল্লিশ কাহনিয়া গ্রামের মৃত আতাহার আলীর পুত্র সাইদুল ও কামরুল সেতুটি নির্মান করতেছে। জনবহুল এ খালটিতে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক ও পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে এলজিইডি বিভাগ খালটি খনন কাজ করতেছে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে। ফলে জেলে সম্প্রদায় ও কৃষকরা উপকৃত হবে।উপকৃত হবে শত শত পরিবার। অপরিকল্পিত ও ঝুঁকিপুর্ন এ সেতুটি নির্মানে হলে পানি চলাচল ও নৌযান চলাচল ব্যাহত হবে।পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে।মানুষের প্রানহানী ঘটতে পারে।সেতুটি বিধ্বস্ত হলে মানুষ এবং মানুষের সম্পদ নষ্ট হওয়ার আশংকা করেছেন এলাকার সচেতন লোকজন।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ জলপথ ও তীরভূমিতে স্থাপনাদি নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী নৌপথে খুঁটিসহ বৈদ্যুতিক লাইন ও সেতু নির্মাণ করতে হলে বিআইডব্লিউটিএর ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। বিধিমালায় নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণির নৌপথের ক্ষেত্রে সেতুর উচ্চতা হবে কমপক্ষে ৬০ ফুট, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৪০ ফুট, তৃতীয় শ্রেণিতে ২৫ ফুট এবং চতুর্থ শ্রেণির নৌপথে অন্তত ১৬ ফুট উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু নির্মানাধীন সেতুতে বিআইডব্লিউটিএর ছাড়পত্র নেয়া হয়নি। সেতুটি কম উচ্চতা হলে বর্ষা মৌসুমে ছোটখাটো নৌযান চলাচলেও বাধা সৃষ্টি করবে। নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ছাড়া অবৈধ এ নির্মানাধীন সেতু বন্ধ না করা হলে ভোগান্তির সৃষ্টি হবে। অপরিকল্পিতভাবে অবৈধ এ সেতুটি নির্মাণ করা হলে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, খাল থেকে কম উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করা হলে দুর্ভোগ বাড়বে। বর্ষা মৌসুমে সেতুর গার্ডারের নিচ পর্যন্ত পানি ছুঁয়ে যাবে। এতে নৌপথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ পানি আইন-২০১৩,পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫,পরিবেশ সংরক্ষন বিধিমালা ১৯৯৭ রয়েছে। নির্মানাধীন এ অবৈধ সেতুতে কোন আইন বিধি -বিধান মানা হয়নি।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি বারের সদস্য এ্যাডভোকেট মানিক আচার্য বলেন,এলজিইডি,পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়,বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ,পানি উন্নয়ন বোর্ড,পানি সম্পদ পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠান (ডব্লিউ এ আর পি ও )পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া সরকারি খালে সেতু নির্মান সম্পুর্ন অবৈধ এবং একটি ফৌজধারী অপরাধ। পানির প্রবাহ, নাব্যতা এবং নৌচলাচলে বাধাগ্রস্থ হওয়াসহ পর্যবেক্ষন এবং পরিকল্পনা ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে সেতু নির্মান অপরাধ।এলজিইডির সার্কুলার ও নির্দেশিকা রয়েছে সেতু নির্মানের ব্যাপারে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা মামুনুর রশীদ নোমানী বলেন,সেতুটি নির্মান হলে সরকারি অর্থে খাল খননের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। সাধারনভাবে পানি চলাচল বন্ধ হলে নাব্যতা কমে যাবে। গচ্চা যাবে খাল খননের জন্য সরকারের লাখ লাখ টাকা। সরকারি খালে সরকারি আইন বিধি -বিধান লঙ্গন করে একটি ঘরের কয়েকজন ব্যক্তির স্বার্থে, ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মানাধীন সেতুটি বন্ধের জন্য এবং নির্মিত অংশ উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট।
এব্যাপারে সাইদুল বলেন, আমরা আমাদের টাকায় সেতু নির্মান করতেছি কিন্তু সরকারি কোন অনুমোদন নাই। আমাদের টাকায় নির্মিত হচ্ছে তাই অনুমোদনের প্রয়োজন নাই। এ ব্যাপারে এলজিইডির উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ মজুমদার আবেদনের কথা স্বিকার করে বলেন, আমরা সরেজমিনে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
এ ব্যাপারে রাজাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মু: আতাউর রহমান বলেন,আবেদন পেয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশের একজন এসআইকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা ইয়াসমিন বলেন,আবেদন পেয়ে থানাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন সরকারি খালে একটি পরিবারের ব্যক্তি স্বার্থে ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মানাধীন ঝুঁকিপুর্ন সেতুটির নির্মানকাজ জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জোড় দাবী জানিয়েছে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়
রাজাপুরে প্রশাসনের অদেশ অমান্য করে সরকারি খালে পারিবারিক সেতু - ইত্তেহাদ
মার্চ ১৬, ২০২৪[…] আরও পড়ুন: রাজাপুরে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই নির্মি… […]