বাংলাদেশ বাকি বিশ্বের জন্য মডেল


অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিয়েটা ভালস নয়েসের মতে , ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠন এবং বর্তমানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তি ও উন্নয়নের পথ তৈরি করে বাকি বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একটি মডেল হিসেবে কাজ করছে। সম্প্রতি ৫৩তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। জুলিয়েটা নয়েস তার বক্তব্যে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দানে বাংলাদেশি নেতৃত্ব ও উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ২০১৭ সালে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে সংঘটিত গণহত্যা থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে এসেছিল এবং বাংলাদেশ তাদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের সাহায্যের হাত ও হৃদয় উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’দেশ আখ্যা দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে এসে দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ।শেখ হাসিনার পরপর তিনবার জনগণের ভোটে সরকার গঠনের কারনে দেশের বেশ কিছু পদক্ষেপ সাধারণ ভোটার কর্তৃক প্রশংসিত ও মানুষের মনে আলোরন সৃষ্টি করছে। উল্লেখ্য, বেশ কিছু শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্য
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বৈশাখী ভাতা, ফেয়ার প্রাইজ কার্ড, পদ্মাসেতু ফ্লাইওভার নির্মাণবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ, বিনামূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি প্রদান, গ্রামীণ রাস্তাঘাট উন্নয়ন, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক, বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ, রাজাকারের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জেলেদের খাদ্য সহায়তা,রপ্তানি আয় বৃদ্ধি,, মোবাইলে গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি, ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি, স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি, জনশক্তি রপ্তানি, শিশু মৃত্যুহার রোধ, পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয়, সমুদ্র সীমা জয়, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি,বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, খাদ্য উদ্বৃত্ত,রাজস্ব বৃদ্ধি, সমুদ্র বিজয়, নারীর ক্ষমতায়ন, ছিটমহল বিনিময় ইত্যাদি।
বর্তমান বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সাল থেকে তিনবার জাতীয় সংসদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। আর শেখ হাসিনা পরপর তিনবার রাষ্ট্রক্ষতায় থাকায় দেশের মানুষের ভাগ্যউন্নয়ন ও দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করেন। তার এই উন্নয়ন ও মানুষের জন্য কাজ করা দেশে ও দেশের বাইরে প্রশংসিত হয়েছে। আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর এ নির্বাচনে দেশে বিদেশে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ। কারণ বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল। তাই আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার কি এমন কারিশমাটিক নেতৃত্ব ও উন্নয়ন দেখিয়েছেন যার কারনে জনগন তাকে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সর্বশ্রেণীর মানুষের মাঝে রব উঠেছে শেখ হাসিনা আবারও নির্বাচনে জয়লাভ করবেন। সম্প্রতি বিশ্ববিখ্যাত সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে সময়োচিত সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন ও বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন সরকার চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অর্থ বিষয়ক সংবাদ সংস্থাটি এক নিবন্ধে লিখেছে, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে পুরো তহবিল পেতে আরও সংস্কার করতে হবে বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে সম্ভাব্য জয়ী হওয়ার কারণ এটা নয় যে, যে তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছেন বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন।নিবন্ধে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার বিজয়ের কারণ ‘কেবলমাত্র তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছে বা আইনী ফাঁদে পড়েছেন-এটা নয় বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার সাফল্যের কারণেই এটা ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির সময়োপযোগী সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ প্রাপ্তির পটভূমিতে বুমবার্গ দু’টি উপ-শিরোনামসহ বাংলাদেশ লিডার বেটস আইএমএফ-ম্যান্ডেটেড রিগর উইল পে অফ ইন পোলস’ শিরোনামের এই নিবন্ধটি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, পুরো তহবিল পেতে শেখ হাসিনাকে আরও সংস্কার করতে হবে। নির্বাচনে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।ব্যালট বাক্সে পরাজিত হওয়ার ভয়ে বিশ্বজুড়ে সরকারি দলের নেতারা প্রায়শই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাথে সম্মত সংস্কার বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মত নন। তার দ্রুত আইএমএফ ম্যান্ডেটের বাস্তবায়ন দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে যেখানে পাকিস্তান এখনও জ্বালানি ভর্তুকি নিয়ে দুরাবস্থার মধ্যে রয়েছে। শ্রীলঙ্কা স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচন বিলম্বিত করেছে, কারণ, তারা গত সপ্তাহে আইএমএফ তহবিল পেতে কর এবং সুদের হার বাড়িয়েছে।
গত জুলাই মাসে আইএমএফের সহায়তা চাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশের মধ্যে সর্বশেষ ছিল বাংলাদেশ। দেশটি দ্রুত জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির পর প্রথম ঋণ অনুমোদন পেয়েছে। ৭৫ বছর বয়সী শেখ হাসিনা এই পদক্ষেপ নিতে কোন কুন্ঠা বোধ করেননি। কি এমন শেখ হাসিনার উন্নয়ন যা শেখ হাসিনাকে আবার রাস্ট্রক্ষমতায় চতুর্থবার আশা করা যায়। তার কিছু উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা ও সামগ্রিক চিত্রে চোখ বুলালেই তায় দৃশ্যমান। শেখ হাসিনা আর উন্নয়ন এক সূত্রে গাঁথা।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতধরে পরিণত হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬ শ ৮১ কোটি টাকার বাজেটে। সেদিনের ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশটিতে বর্তমান মাথাপিছু আয় ২৭৯৩ মার্কিন ডলার ও মাথাপিছু জিডিপি ২৬৮৭ মার্কিন ডলার । করোনা মহামারী ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ স্বত্তেও বিশ্বের যে কয়েকটি দেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ধনাত্মক রাখতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭.২৫ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ভারতের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তরিত হতে যাচ্ছে। যেখানে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করেছিল,সেখান থেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনসংখ্যা বর্তমানে ১০.৫ শতাংশ নেমে গেছে, রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলার যার বেশিরভাগ পোশাক শিল্প থেকে যেখানে বাংলাদেশ বিশ্বের ২য় বহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশে পরিনত হয়েছে। আর্থ সামাজিক এবং অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর উন্নয়ন করেছে। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ৬৬ টি সবল অর্থনীতির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম। সিইবিআর পূর্বাবাস অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা আজ শহর থেকে প্রান্তিক গ্রামে বিস্তৃত। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ এর সুবিধা কাজে লাগিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। বাংলাদেশ ২০২২ সালের ২১ মার্চ শতভাব বিদ্যুৎতায়নের মাইলফলক স্পর্শ করে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত ৯৮ শতাংশ এবং পাকিস্তান ৭৪ শতাংশ বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। বর্তমানে স্বাক্ষরতার হার ৭৫.২ শতাংশ,স্বাস্থ্যসেবায় শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে। সর্বোপরি বলা যায় যে, সময় পেরিয়েছে, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়েছে। মাথাপিছু আয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি, বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং সম্পদ উৎপাদন ও আহরণ দৃশ্যমানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এর পরিপ্রিক্ষতে মানুষের মাঝে একটাই চাওয়া শেখ হাসিনার সরকার যেন চতুর্থ মেয়াদে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হন।
লেখক: অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া,
উপাচার্য ,
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়